প্রশান্তি আন্তর্জাতিক ডেক্স ॥ সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার সঙ্গে সৌদি আরবে এক বৈঠকে মিলিত হয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৈঠকে তিনি শারাকে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আহ্বান জানান। এই বৈঠকের পরপরই যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার ইসলামপন্থি নেতৃত্বাধীন সরকারের ওপর থেকে সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়। যা দেশটির নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন বলেই মনে করা হচ্ছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

সৌদি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, ট্রাম্প ও শারা সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের উপস্থিতিতে করমর্দন করছেন। এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান।
হোয়াইট হাউজের প্রেস সচিব এক্স-এ (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে জানান, ট্রাম্প আহ্বান জানিয়ে ছেনশারা যেন সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মরক্কোর পথ অনুসরণ করে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেন। ২০২০ সালে এই দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েলের সঙ্গে আব্রাহাম চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল।
ট্রাম্প বলেন, সৌদি আরবও একসময় আব্রাহাম চুক্তিতে যোগ দেবে। তবে তা তাদের নিজস্ব সময় ও শর্তে।
তবে গাজা যুদ্ধ শুরুর পর সৌদি আরব এ বিষয়ে আলোচনা স্থগিত করে এবং জানিয়ে দেয়, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা সম্ভব নয়।
রিয়াদে দেওয়া এক ভাষণে ট্রাম্প বলেন, আমরা সিরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথে এগোচ্ছি। এই প্রক্রিয়ার শুরুটা হচ্ছে শারার সঙ্গে আমার বৈঠক দিয়ে।
এই সিদ্ধান্তে ইসরায়েল গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের ভাষায়, শারার প্রশাসনের অতীতে আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল এবং সন্ত্রাসবাদের ঝুঁকি থেকে যায়। যদিও শারা ২০১৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন।
২০১১ সালে শুরু হওয়া সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতের পর ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। এরপর থেকে শারা দেশটিকে পুনরায় দামেস্কভিত্তিক সরকারের আওতায় আনতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার দেশটির জন্য এক বড় সহায়ক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এটি মানবিক সংস্থা, বিনিয়োগকারী ও বাণিজ্যিক অংশীদারদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করবে। তবে ইসরায়েল স্পষ্ট করেছে, দক্ষিণ সিরিয়ায় ইসলামপন্থিদের উপস্থিতি তারা মেনে নেবে না।
আল-আসাদের পতনের পরপরই ইসরায়েল সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে অভিযান জোরদার করে, যার ফলে দেশটির সেনাবাহিনীর বহু অস্ত্রশস্ত্র ধ্বংস হয়ে যায়।
মার্চে আল-আসাদপন্থি বাহিনীর সঙ্গে সরকারের সংঘর্ষ শুরু হলে বিদ্রোহী ইসলামপন্থি গোষ্ঠীর হাতে শত শত আলাওয়ি সম্প্রদায়ভুক্ত বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র কড়া নিন্দা জানায়।
শারা একসময় আল-কায়েদার সিরিয়া শাখার প্রধান ছিলেন। ২০০০-এর দশকে তিনি ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে পাঁচ বছর কারাবন্দি ছিলেন। তবে গত ডিসেম্বরে তার ওপর থাকা ১ কোটি মার্কিন ডলারের পুরস্কার প্রত্যাহার করে ওয়াশিংটন।
সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ট্রাম্প-শারা বৈঠকে সন্ত্রাসবাদ দমন ও অরাজনৈতিক সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রভাব হ্রাসের জন্য সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে আইএসবিরোধী কার্যক্রমে যুক্তরাষ্ট্র ও সিরিয়া যৌথভাবে কাজ করতে চায়।
শিগগিরই সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর মধ্যে একটি আনুষ্ঠানিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।