দেশ এখন সকল নৈতিক ও অনৈতিক আন্দোলনে উত্তাল। শক্তির মহড়া প্রদর্শনের উর্বর সময় এখনই। সকলেই এই প্রতিযোগীতাই নেমে পড়েছে। সাধারণ মানুষজন ঐ প্রতিযোগীতার চাপে দিশেহারা এবং নিষ্পেষিত হচ্ছে। যানযটে নাকাল ঢাকাবাসী মরন যন্ত্রণায় ছটফটাচ্ছে। এইসকল অবস্থার উত্তরণের কোন পথ খোলা আছে বলে মনে আশা জাগাতে পারছিনা। তবে সকল প্রতিবন্ধকতার পরেই একটি ঘোষণা প্রতিয়মান হয়েছে এবং সেই ঘোষণায় মুক্তির বার্তা প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু সেই মুক্তি ক্ষণস্থায়ী এবং প্রতিবদ্ধকতা ও যন্ত্রনাই যেন চিরস্থায়ী যা বার বার ফিরে আসে এবং ভোক্তভোগীর সংখ্যা বাড়ায়।
এইতো বছর খানেক আগেই মুক্তি পেয়েছিল বাংলাদেশ কিন্তু সেই মুক্তি কি স্থায়ীত্বের দিকে যাচ্ছে নাকি অনিশ্চিয়তার দিকে যাচ্ছে তাই এখন ভেবে দেখার। যারা শুনিয়েছিল মুক্তির এবং আশার বানি সেই তারাই আজ হতাশ এবং শোনাচ্চে অন্ধকারের বানী। তাই আগামীর অশনিসংকেতকে মোকাবিলায় সাধারণের অসারণ হয়ে উঠা জরুরী।
সরকার পরিবর্তনই কি সকল সমস্যার সমাধান! না বরং আমাদের মানুষিকতার পরিবর্তনই হতে পারে আগামীর সকল সমস্যার সমাধান। অমুক ভালনা তমুক ভাল; কিন্তু নিজের স্বার্থের জন্য অমুক ও তমুক কেউই আর ভালনা; তাহলে ভালটা কে? । সেই ভালটাই হলো স্বার্থ (নিজস্বার্থ)। তাই নিজের স্বার্থের উর্দ্ধে উঠে যদি কাজ করা যায় তাহলেই এই জাতির মুক্তি সুনিশ্চিত এবং দীর্ঘস্থায়ী। বর্তমানে যারা ক্ষমতায় রয়েছেন তারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেল দেশ পরিচালনা কত জটিল এবং কঠিন। আর এই চেয়ারে বসে ক্ষমতা দেখানো এমনকি জনঅসন্তোষ সৃষ্টি না করাই ফরজে আইন। তবে এই অবস্থায় থাকা খুবই কঠিন। তারচেয়ে বরং বেহেস্তে যাওয়া সহজ। কারণ সেখানে শুধু এক ও অদ্বীতিয় সৃষ্টিকর্তাকে সন্তুষ্ট করতে হয়। আর তা করা খুবই সহজ।
তবে ইতিবাচক দিক হলো যে, বর্তমানের ক্ষমতাসীনরা সমালোচনা এবং বিদ্রোপকে ইতিবাচকভাবে গ্রহন করে জনতাকে সুযোগ দিয়ে তাদের ইতি ও নেতিবাচক মতামত প্রকাশের ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু মতামত প্রকাশকারীরা জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে মাত্রাতিরিক্ত করেছেন বৈকি। তাই বলা যায় গু গু-ই হয়। গুয়ের এপিট ও ওপিট উভয়ই সমান।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব এবং মিথ্যায় ভরপুর। কিন্তু ঐসকল গুজব ও মিথ্যার আড়ালে সত্যটুকু চাপা পড়ে যাচ্ছে। আর মিথ্যার বেসাথীতে সমাজ পুনরুজ্জ্বিবিত হচ্ছে। তাই ঐ গুজবনির্ভর সমাজ ব্যবস্থায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ঢেলে সাজানো দরকার। নতুন পদ্ধতি আবিস্কার করে সকল গুজবকে মোকাবেলায় মনোনিবেশ করতে হবে। যেই গুজবে একবার দেশ ধ্বংস হয়েছে আবার সেই গুজব তৈরী করে দ্বিতীয়বার দেশ ধ্বংস করতে দেয়া ঠিক হবে না। নিজেদের খোড়া ফাঁদে নিজেরাই যখন তখন বুঝতে পারে জনতা কি জিনিস। তবে জনতা সব সমই মরিচ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এবং হবে। অন্যকে জালাতে বা উপকার করতে গিয়ে তাদের জীবন শেষ হয়ে যাবে তবুও তাহারা সাহায্যই করিবে। আরেক দিকে রাজনীতিতে জনতা হলো মরিচতুল্য। কারণ রাজনীতিবিদরা হলো শীল ও নূরা হলো সরকার। এই দুয়ের ঘষাতে জীবন যায় জনতার। তাই জনতাকেই এখন বুঝতে হবে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে আগামীর জন্য।
উত্তাল এই মে আমাদেরকে এই শিক্ষাই দেয় যে, পৃথিবীর ক্ষমতা এবং এর মোহ ও অর্থ আর বৃত্ত ক্ষণস্থায়ী এবং এই ক্ষণস্থায়ী সম্পদ ও সম্মানের জন্য আর মরিয়া না হয়ে বরং স্থায়ী সম্পদ ও সম্মান এবং নিশ্চয়তার জন্য মরিয়া হয়ে উঠুন।
কোথায় নেই আন্দোলন এবং কোথায় নেই বিশৃঙ্খলা তা খুজে বের করা এখন একটি দুগ্ধজাত শিশুর পক্ষেও সম্ভব। আমরা আজ আন্দোলনে দিশেহারা। প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয় কেন্দ্রীক আন্দোলন যেন পরিণত হয়েছে নিত্যদিনের দৈনন্দিন কর্মকান্ডের একটিতে। এই আন্দোলন কিন্তু আগেও ছিল এবং রাজনৈতিক সরকারগুলো আন্দোলন মোকাবিলা করেই রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। পক্ষান্তরে পুর্ববর্তী অন্তবর্তী এবং তত্বাবধায়ক সরকাগুলোও কিন্তু আন্দোলন এবং চক্রান্ত মোকাবিলা করেই একটি লক্ষ্যে গিয়ে পৌঁছেছে। তাই বলতে চাই বর্তমান সরকারকে আপনার আগের সরকার গুলোর অভিজ্ঞতা নিয়ে এবং বর্তমানের সঙ্গে মিলিয়ে ভবিষ্যতের কর্মপরিকল্পনা ঠিক করুন। কঠোর হওয়ার প্রয়োজন হলে আরো কঠোর হউন। কিন্তু কঠোরতা যেন সঠিক জায়গায় প্রয়োগ হয় সেই দিকে লক্ষ্য রাখবেন। তাহলেই জনতার রায় আপনাদের পক্ষে থাকবে এবং আপনারা আপনাদের লক্ষ্যে পৌঁছতে সহজেই সুযোগ পাবেন।
অনেকেই বলে রাজনৈতিক সরকার আসলেই এই সমস্যা দূর হবে; কিন্তু আমি বলি না বরং আরো বাড়বে। যারা আজ এই সমস্যা সৃষ্টি করছেন তাদেরও বুঝা উচিত আগামী দিনে অন্যকেউ এই রকম বা আরো মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারবে। তাই রাজনৈতিকভাবে আপাতত এই সমস্যার কোন সমাধান নেই। এইক্ষেত্রে একটিই সমাধান হতে পারে যা অরাজনৈতিক ব্যানারে কিন্তু রাজনৈতিক ভাবাদর্শের সরকার। সেই ক্ষেত্রে সকল রাজনৈতিক দল ও মতের এবং সাধারণ নাগরিকের পক্ষ থেকেও প্রতিনিধি নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনায় একটি ৫ বছরের জন্য সরকার ব্যবস্থা কায়েম করা। যেখানে কেউ বাদ যাবেনা বরং সকলের অংশগ্রহন ও অন্তভূক্তিই পারে আগামীর মুক্তি নিশ্চিত করতে।
কাউকে বাদ দিয়ে কোন টোটকাতেই সরকার এবং অস্থিতিশীলতা এমনকি আগামীর টেকসই ও স্থিতিশীল নিশ্চিত গন্তব্য ঠিক করা যাবে না। কোন সংস্কারই কাজে লাগবেনা যদিনা সকলের ঐক্যমত্ত সুপ্রষ্ঠিত হয়। তবে এইক্ষেত্রে বিশ্ব রাজনীতিও একটি কারণ। তবে জাতীয় ঐক্যমত্ত্ব হলে বিশ্ব রাজনীতির করাল ঘা্রস থেকে সাময়িক বা কিছুদিনের জন্য মুক্তি মিলবে বলেই ধারনা করা হয়। তবে মোসাহেবরা এবং মিরজাফররা যুগে যুগে উদ্ভাসিত হয়েছে এবং সেই ধারাবাহিকতার আদলেই সকল ইতিহাস কলঙ্কিত এবং কলূষিত হয়েছিল। যা আজও হওয়ার পথে। উত্ত্বাল এই মে-কে জাতি স্মরণ বা স্মৃতি থেকে মুছে ফেলতে চায় নতুন এক ঐক্যবদ্ধ ইতিহাস দ্বারা। তাই এই মে থেকে সকলেই শিক্ষা নিয়ে আগামীর করণীয় ঠিক করুন এবং নিরিহ এই জাতিকে মুক্তি দিয়ে নিস্তার করুন।