প্রশাান্তি ডেক্স ॥ আর্থিক সংকটে পড়া পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক বেসরকারি ব্যাংক একীভূত করে গঠন করা হচ্ছে একটি নতুন বৃহৎ ইসলামি ব্যাংক। ঈদের ছুটির পর বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এই প্রক্রিয়া শুরু হবে। নতুন এই ব্যাংকের অনুমোদন দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং প্রাথমিক পর্যায়ে মূলধন সরবরাহ করবে সরকার।

একীভূত হতে যাওয়া ব্যাংকগুলো হলো: ১. ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। ২. গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। ৩. ইউনিয়ন ব্যাংক
৪. সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক। ৫. এক্সিম ব্যাংক।
এর মধ্যে এক্সিম ব্যাংকের মালিকানা আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম মজুমদারের। অন্য চারটি ব্যাংক এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে, যারা বিগত সরকারের ঘনিষ্ঠ ছিল।
একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার রূপরেখা : বাংলাদেশ ব্যাংক গত বুধবার (৪ জুন) এক বৈঠকে পাঁচ ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের নতুন ব্যাংক গঠনের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত জানায়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর ও ডেপুটি গভর্নর কবির আহম্মদ।
প্রক্রিয়াটি তিনটি ধাপে সম্পন্ন হবে
সম্পদ ও দায় নিরীক্ষা: বিদেশি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পাঁচ ব্যাংকের সম্পদের মান নিরীক্ষা ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। কেউ চাইলে আপত্তি জানাতে পারবে। নিজেকে সবল প্রমাণ করলে তালিকা থেকে বাদ পড়ার সুযোগও থাকবে।
সম্পদ হস্তান্তর: খেলাপি ঋণগুলো সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির কাছে হস্তান্তর করা হবে, যাতে নতুন ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ১০%ুএর নিচে থাকে।
নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স: এরপর নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স অনুমোদন দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মূলধন যোগাবে সরকার এবং উন্নয়ন সহযোগীরা। পরবর্তীতে শেয়ার ছেড়ে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সম্পৃক্ত করা হবে।
ব্যাংকগুলোর আর্থিক চিত্র: বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, পাঁচ ব্যাংকের সম্মিলিত: গ্রাহক সংখ্যা: ৯২ লাখ। অমানত: ১ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। ঋণ: ২ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা। শাখা: ৭৭৯টি। জনবল: ১৫ হাজারের বেশি
তবে উদ্বেগের বিষয় হলো, এস আলম গ্রুপ একাই চার ব্যাংকের অধিকাংশ ঋণ নিয়েছে। যেমন, ইউনিয়ন ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের প্রায় ৯০ শতাংশ এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ৭০ শতাংশ ঋণ এস আলম সংশ্লিষ্ট। এক্সিম ব্যাংকের ১০ শতাংশ ঋণ সাবেক চেয়ারম্যানের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে দেওয়া হয়েছে।
পরিকল্পনার সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ : নতুন ব্যাংকের প্রাথমিক কাজ হবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা খাতে অর্থায়ন নিশ্চিত করা। ব্যাংকটি ধাপে ধাপে একীভূত হবে এবং পুরোনো ব্যাংকের গ্রাহকেরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নতুন ব্যাংকের গ্রাহক হিসেবে বিবেচিত হবেন।
যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক আশ্বস্ত করেছে যে, গ্রাহকের লেনদেনে কোনও ব্যাঘাত ঘটবে না এবং অধিকাংশ কর্মকর্তা চাকরিতে বহাল থাকবেন, তবে একীভূতকরণ শেষে জনবল ছাঁটাইও হতে পারে।
বিশ্লেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি : বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মোস্তফা কে মুজেরী সতর্ক করেছেন, ‘শুধু একীভূত করলেই ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতা কাটবে না। জবাবদিহি এবং সুশাসন নিশ্চিত না হলে এই উদ্যোগও ব্যর্থ হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্ত পরিচালনাই এখন জরুরি।’