সড়কে পশুর হাট; ভোগান্তিতে নগরবাসী

প্রশান্তি ডেক্স ॥ ইজারার শর্ত ভঙ্গ করে সড়ক, মহাসড়ক এমনকি পাড়ামহল্লার অলি-গলি দখল করে প্রতিবারের মতো এবারও নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগে থেকেই বসানো হয়েছে কোরবানির পশুর হাট। কোনও কোনও এলাকায় হাট বসাতে প্রধান সড়কে ব্যারিকেডও দেওয়া হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে গলিপথও। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ঘরমুখো যাত্রী ও নগরবাসীকে।

নগরবাসীর অভিযোগ, সিটি করপোরেশন পশুর হাটের জায়গা নির্ধারণ করে দিলেও সেই নির্দেশনার তোয়াক্কা করছেন না ইজারাদাররা।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নির্ধারিত স্থান রেখে ঢাকা-আশুলিয়া মহাসড়ক ঘেঁষে বসেছে কোরবানির পশুর হাট। এছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতাধীন ধোলাইখালের দুই পাশের পুরো সড়কজুড়ে বসেছে হাট। এতে করে যানজট তৈরি হয়ে ঈদযাত্রায় বাড়তি ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।

অপরদিকে শনির আখড়ার দনিয়া কলেজ মাঠের নামে হাটের ইজারা দেওয়া হলেও বাস্তবে ওই মাঠে হাট বসানোর মতো কোনও জায়গা নেই। পুরো হাটই বসেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এবং সংলগ্ন পাড়ামহল্লার ভেতরে। বলা চলে, ইজারার নির্ধারিত জায়গা ছাড়িয়ে রাজধানীর বেশিরভাগ হাট মহাসড়ক, আবাসিক এলাকা, আর খেলার মাঠে স্থান নিয়েছে।

সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, এবারের ঈদুল আজহায় ডিএসসিসি এলাকার ১১টি স্থানে অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। আর ডিএনসিসি চার দফায় ১৪টি হাটের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয়। এর মধ্যে ডিএসসিসির আফতাবনগর ও মেরাদিয়ার পশুর হাট এবং ডিএনসিসির বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং ও বনরূপা আবাসিক এলাকার হাট জনবহুল স্থানে হওয়ায় আদালত বাতিল করে দিয়েছে।

পুরান শ্যামপুরের হাটটি শেষ মুহূর্তে এসে ইজারাদারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্থগিত করে করপোরেশন। অভিযোগ রয়েছে, কমলাপুর ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব সংলগ্ন হাট আর ধোলাইখালের হাটটি সরকারি মূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে ইজারা নিয়েছে বিএনপি সমর্থিত লোকজন। এছাড়া দুই সিটিতে মিরপুরের গাবতলী ও ডেমরার সারুলিয়ায় দুটি স্থায়ী পশুর হাট আছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) সূত্রে জানা যায়, ভাটুলিয়া সাহেব আলী মাদ্রাসা থেকে উত্তরা রানাভোলা ¯্লুইচগেট সংলগ্ন স্থানে ইজারা দেওয়া হয়েছে কোরবানির পশুর হাট। হাটটি ইজারা নিয়েছেন আতিকুর রহমান নামে বিএনপি সমর্থিত এক ব্যবসায়ী।

কিন্তু হাটের জন্য প্রশাসন যে স্থান বরাদ্দ দিয়েছে, সেখানে কোনও উন্মুক্ত স্থান নেই। তবে সেখানে কামারপাড়া পুলিশ বক্স মোড়ে একটি হাট রয়েছে। রানাভোলা মৌজা হলেও এই জায়গাটি উল্লিখিত হাটের স্থান নয়। সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে ঢাকা-আশুলিয়া মহাসড়ক ঘেঁষে বসানো হয়েছে হাটটি। মহাসড়ক হাটের কারণে সৃষ্ট যানজটের ফলে বাড়তি ভোগান্তিতে পড়ছেন বাড়িফেরা মানুষেরা।

অপরদিকে ধোলাইখালের কোরবানির পশুর হাটটি সরকারি মূল্যের অর্ধেকের ও কম দামে ইজারা নিয়েছেন সৈয়দ মাসুদ রেজা নামের একজন বিএনপি সমর্থক। তার সঙ্গে যুক্ত আছেন বিএনপি’র নির্বাহী কমিটির এক সদস্য। আর হাটটি পরিচালনার জন্য দায়িত্বে আছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

কোরবানির পশুর হাটখোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার হাট পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত আছেন সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।

উত্তর সিটির কচুক্ষেতে বাজার সম্প্রসারিত হয়েছে ভাষানটেক সড়ক যা যান চলাচলের অনুপযোগী হয়েছে এমনকি পাড়া মহল্লায়ও ঢুকেছে পশুর হাট। কি এক আজব শহর এবং আজব কান্ড কেউ দেখার নেই। মানুষজন কষ্টে পরিণত হয়ে কারো কাছে বলার বা নালিশ করার কোন সুযোগ আর অবশিষ্ট নেই।

সিটি করপোরেশনের নির্দেশনায় দেখা যায়, সাদেক হোসেন খোকা মাঠের দক্ষিণ পাশের খালি জায়গা ও ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনালে কোরবানির পশুরহাট বসানোর জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছে। অথচ রায় সাহেব বাজার মোড় থেকে শুরু করে সাদেক হোসেন খোকা মাঠ পর্যন্ত পুরো ধোলাইখাল এবং দয়াগঞ্জ মোড় পর্যন্ত সড়কের দু’পাশে গরুর হাট বসানো হয়েছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রী, পথচারী ও নগরবাসী।

সিটি করপোরেশনের নির্দেশ অমান্য করে কেন সড়কের ওপর পশুর হাট বসানো হয়েছে তা জানতে ইজারাদারকে একাধিকবার কল করলেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে ধোলাইখাল কোরবানির হাট পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত লিটন নামের একজন বলেন, বিগত সময়ের চেয়ে এবার হাটের পরিবেশ ভালো। বৃষ্টির কারণে একটু ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তাছাড়া আমরা হাটের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য খুবই কম সময় পেয়েছি। আগামীতে আরও সুন্দরভাবে পরিচালনা করবো।

সড়কের ওপর গরু রাখার বিষয়ে এই ব্যক্তি বলেন, এই হাটের নিয়মই এটা। বিগত সময়েও এভাবে গরু রাখা হয়েছে। তাছাড়া সিটি করপোরেশনের সব নির্দেশনা মেনেই আমরা কাজ করছি।

সড়কের দু’পাশজুড়ে পশুর হাট বসানোয় ক্ষোভ জানিয়ে দক্ষিণ সিটির বাসিন্দা হাজী সাহেদ আলী বলেন, প্রতিবছরই এমন কাজ করতে দেখি। যে জায়গায় হাট বসাতে বলছে, সেই জায়গা ছাড়িয়ে আরও দুই-এক কিলোমিটার বেশি হাট বসে। এমনকি অলিগলিতেও হাট বসানো হয়েছে। ঠিকমতো হাঁটাচলা করা যায় না। নির্দিষ্ট সময়ের ৩-৪ দিন আগে থেকেই ধোলাইখালে হাট বসিয়েছে এখানকার ইজারাদার।

রাফিয়া আক্তার নামের আরেকজন বাসিন্দা বলেন, মূল সড়কের ফুটপাত থেকে শুরু করে কোনও জায়গায় খালি নেই। ছোট ভাইকে নিয়ে বাসায় যাওয়ার পথে গরুর লাথি খেয়েছি। সড়কের ওপর সড়কের দুই পাশে সব জায়গাতেই গরুর হাট বসানো হয়েছে। সাধারণ মানুষের হাঁটার কোনও জায়গা রাখা হয়নি।

মহাসড়কে হাটের বিষয়ে ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘নির্ধারিত স্থানে হাট না বসিয়ে মহাসড়কে হাট বসানোর কোনও এখতিয়ার নেই। কামারপাড়া হাট নামে কোনও হাটের ইজারা দেয়নি ডিএনসিসি।’

ডিএসসিসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, নির্ধারিত স্থানের বাইরে হাট বসালে বা হাটে কোনও অব্যবস্থাপনা নজর এলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সিটি করপোরেশন। এর জন্য ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে হাটে অভিযান চালানোর নির্দেশনা রয়েছে। ইতোমধ্যে সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন টিম হাট পরিদর্শন করেছে। যেখানে অব্যবস্থাপনা বা নিয়ম-বহির্ভূতভাবে হাট বসানো হয়েছে, সেখানে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘তফসিলে সুনির্দিষ্ট মাঠের ম্যাপও দিয়েছি, যার বাইরে হাট বসানোর সুযোগ নেই। এটি বাস্তবায়নের জন্য মাঠে মোবাইল কোর্ট রয়েছে। তদারকি টিম কাজ করছে। প্রতি হাটে ৫০ জন আনসার থাকার কথা।’

তিনি বলেন, ‘জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা যাতে ব্যহত না হয় সে খেয়াল রাখবো। কেউ নির্ধারিত জায়গার বাইরে হাট দিলে তাদের নিবৃত করবো। পুলিশ ও মোবাইল কোর্ট ব্যবস্থা নেবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published.