আজ পবিত্র ঈদুল আযহা। এই ঈদ বাঙ্গালী জাতি তথা মুসলিম উম্মার মধ্যে আনন্দের বণ্যা বইয়ে দেয়। এই আনন্দ বণ্যায় ভেসে যায় সকল বৈষম্য বা ক্রোধ ও ঘৃণা এবং সামাজিক অবক্ষয়। এবারের ঈদে সার্বজনীন সংস্কৃতির ভাব ধারায় মিলিত হউক আনন্দের বহুধাকাল ধরে চলমান বহুবিধ ধারা। যা সকলকে আলিঙ্গনে আবদ্ধ করবে একটি ঐক্যবদ্ধ জাতিতে। তবে মুসলিম জতির মধ্যে যে বিভক্তি বা ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে বা পাশ কাটিয়ে সকলেই ঐক্যবদ্ধ হউক এই ঈদকে কেন্দ্র করে। তবে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন দিনে এই ঈদানন্দের ধারাকে অনুসরণ ও অনুকরণ এবং পালনীয় কত্যব্য পালনের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। কারণ এই ঈদ নির্ভর করে চাঁদ দেখার উপর। চাঁদ কেন্দ্রীক এই ঈদানন্দ উপভোগে মানুষ নিয়োজীত হউক সকল হিংসা ও বিদ্ধেষ ভুলে গিয়ে সকলকে সকলেই ক্ষমা ও ভালবাসায় আলিঙ্গন করে।
এই ঈদ যাত্রার শুরু হয় বেহেস্ত থেকে (যখন বাবা আদম ও মা হাওয়াকে পশুর চামড়ার পোষাক পরিধান করে তাদের পাপ ঢাকা হয়েছিল)। তৎপরবর্তীতে এই কোরবানী চলমান রয়েছে এবং আজও বিভিন্ন ক্রমে ও নামে এই ধারা অব্যাহত। তবে বাবা (মুসলিম জাতির পিতা) হযরত ইব্রাহীমের মাধ্যমে বর্তমানের ভাবধারার যাত্রা শুরু হয়ে আজও অম্লান রয়েছে। তবে হযরত ঈব্রাহীমকে মাবুদ আল্লাহ আশ্চর্যভাবে যুগিয়ে দিয়েছেন এবং সেই থেকে এখনও তিনি যুগিয়ে যাচ্ছেন। তবে কোরবানী সম্পর্কে একটি আয়াত মনে পড়ে যেমন “তোমার দান কোনবানী কোরবানগাহের সামনে রেখে যদি তোমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে কিছু বলার থাকে তাহলে আগে সেখানে গিয়ে মিটমাট করে এসে কোরবানী দাও।” তাহলেই কোরবানী কবুল হবে। ভাইয়েরা এইবারের কোরবানীর পূর্বে যদি কোন ভাইয়ের বিরুদ্ধে কিছু বলার থাকে তাহলে তার সঙ্গে মিলিত হউন এবং ক্ষমা ও ভালবাসায় উভয়েই পূর্ণ হউন এবং ফিরে এসে খোদা তায়ালার নামে তার উদ্ধেশ্যে কোরবানী দিন।
কোরবানী হবে আল্লাহর নামে এবং সেই কোনবানীতে সাত ব্যক্তি মিলিত হয়ে অথবা সানজনের নামোল্লেখ করে কোরবানী সমাপ্ত করতে হবে। কখনোই কোন ব্যক্তির নামে কোরবানী হবে না বরং কোরবানী হবে আল্লাহর নামে। কারণ আল্লাহকে খুশি করার জন্য এবং তাঁর হুকুম পালনের জন্যই এই কুরবানী প্রথা বিরাজমান রয়েছে। আল্লাহকে খুশি করার অনেক পথের মধ্যে একটি হলো কোরবানী। তাই এই কোরবানী হতে হবে নিখুঁত। অর্থ, পশু এবং মন এই তিনের নিখুততাই কোরবনীর সার্থকতা বহন করবে। অর্থ নিখুত বা পবিত্র না হলে এমনকি ঘাম ঝড়ানো বা উপার্জিত অর্থ না হলে কোরবানী বৃথা। কোরবানীর জন্য ক্রয়কৃত পশুটি নিখুত না হলে সেই কোরবানীও বৃথা। মন নিখুত না হলে সেই কোরবানীও বৃথা। তাই নিখুত এবং অতি উত্তম শ্রেণীর কোরবানীর জন্য প্রয়োজন তিন নিখুতের সম্মিলন। এক অর্থ, দুই মন, তিন পশু।
ঈদের এই খুশিতে সকলকে সামিল করতে প্রয়োজন সৃষ্টিকর্তার নিখুততা নিয়ে অগ্রসর হওয়া। সৃষ্টিকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে পথচলা। সৃষ্টিকর্তাকে নিয়ে পথ চলতে হলে আগে তাকে জানতে হবে এবং তাঁর আদেশ ও নিষেধ সম্পর্কেও জেনে অগ্রসর হতে হবে। সৃষ্টিকর্তা আমাদের হৃদয়ের সিংহাসনে অবস্থান করেন বা বসবাস করেন। তাই হৃদয়কে পরিস্কার এবং উপযুক্ত করে তোলাই প্রাথমিক কাজ। পবিত্র হৃদয়ে সৃষ্টিকর্তা অবস্থান করেন তাই আসুন কোরবানীর আগে ও পরে আমাদের হৃদয়কে পবিত্র করি এবং সেই পবিত্র হৃদয়ে সৃষ্টিকর্তাকে ধারণ ও লালন করে অগ্রসর হই। তাহলেই সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে পথ চলতে পারবো। সৃষ্টিকর্তার আহবানে সাড়া দিতে পারবো।
এই ঈদ (আনন্দ) কেন্দ্রীক সকল কিছুতেই যেন থাকে নম্রতা ও ক্ষমা এবং ভালবাসার অবারিত সম্ভার। তাহলেই ঈদানন্দ হবে পবিত্র আনন্দপূর্ণ উদযাপন। বিশ্বের সকল মানুষের আনন্দের একক কেন্দ্রবিন্দু। তবে যাদের পাপের কাফফারা পরিশোধিত হয়েছে এবং কোরবানী প্রথার বিলুপ্ত করে চিরন্তন নির্মল আনন্দ উপভোগ করছেন তারাও এই আনন্দে সামিল হয়ে পবিত্র আনন্দকে আরো বেগবান করুন এবং সার্বজনিন এই সম্প্রিতির আনন্দে ভরপুর করুন এই ধরনীকে।
সবাইকে ঈদ মোবারক। ঈদপরবর্তী জীবনের সার্বিক কল্যাণ ও নিশ্চয়তা এবং নিরাপত্তা কামনা করে মহান রবের নিকট আকুল আবেন ও ফরিয়াদ এই যে, সকলকে ঐক্যবদ্ধ করে এক সৃষ্টিকর্তার অভিন্ন আনন্দে মনোনিবেশ করান। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সফল করে তুলুন এবং সকলের জন্য বেহেস্তের প্রসস্থ দরজা খোলে দিন। সকলেই একসঙ্গে আপনার সঙ্গে মিলিত হয়ে আপনার গুনগান ও জয়ধ্বনী করব। হাল্লেলুইয়া ও আলহামদুল্লিাহ রবে। আল্লাহর প্রশংসা ও গৌরব হউক এবং আমার ও আপনার জীবন ব্যবহার করে তিনি গৌরবান্বিত ও মহিমান্বিত হউক এই কামনা ও মিনতি রেখে আগামীর নতুন প্রত্যাশায়…।