যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে আর কমতে পারে যেসব পণ্যের দাম

প্রশান্তি ডেক্স ॥ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বেশ কয়েকটি ভোগ্যপণ্যের ওপর শুল্ক ও কর রেয়াতের প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। গত সোমবার (২ জুন) বিকালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি বাজেট উপস্থাপন করেন।

প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী, চিনি, দুধ, স্যানিটারি ন্যাপকিন, কম্পিউটার মনিটর, বিদেশি মাছ, আইসক্রিম, পোশাক, জুতা, প্লাস্টিক সামগ্রীসহ একাধিক পণ্যের ওপর শুল্ক-কর কমানো হচ্ছে। বাজেট বক্তৃতা শুরু হওয়ার পর থেকেই এসব প্রস্তাব তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর ধরা হয়, যার ফলে কয়েকটি পণ্যের দাম কমার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

কোন কোন পণ্যের দাম কমতে পারে?

চিনি: পরিশোধিত চিনির আমদানিতে টনপ্রতি শুল্ক ৫০০ টাকা কমিয়ে ৪ হাজার টাকা করা হয়েছে। এতে স্থানীয় বাজারে চিনির দামে স্বস্তি আসতে পারে।

স্যানিটারি ন্যাপকিন: নারী স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এই পণ্যের স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

তরল দুধ: প্যাকেটজাত তরল দুধের ওপর স্থানীয় পর্যায়ে আরোপিত ভ্যাট তুলে নেওয়া হয়েছে, ফলে দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে।

বলপয়েন্ট কলম: ছাত্র-ছাত্রী ও অফিস-আদালতে বহুল ব্যবহৃত এই লেখনী সামগ্রীর ওপর স্থানীয় পর্যায়ের ভ্যাট মওকুফ করা হয়েছে।

বিদেশি মাছ ও মাংস: স্যামন ও টুনাসহ বিদেশি মাছের ওপর সম্পূরক শুল্ক কমানো হয়েছে। একইভাবে বিদেশি মাংসেও শুল্ক হ্রাসের প্রস্তাব এসেছে।

আইসক্রিম: বিগত বছরগুলোতে ক্রমাগত শুল্ক বৃদ্ধির পর এবার আইসক্রিমে সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে।

কম্পিউটার মনিটর: ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সহায়ক হিসেবে ৩০ ইঞ্চি পর্যন্ত মনিটর ও ইন্টারেকটিভ পর্দার ওপর উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

বাটার: বাটার আমদানিতে ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক তুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে আমদানিকৃত বাটারের দাম কমতে পারে।

বিদেশি প্লাস্টিক সামগ্রী: বিদেশি প্লাস্টিকের তৈরি হাউজহোল্ড সামগ্রীর ওপর ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক হ্রাস করা হয়েছে।

বিদেশি পোশাক ও জুতা: পুরুষ, নারী ও শিশুদের বিদেশি পোশাক এবং জুতা-স্যান্ডেলের ওপর সম্পূরক শুল্ক কিছুটা কমানো হয়েছে।

অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মতে, এসব শুল্ক ও কর ছাড় মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির ব্যয় কমাতে সহায়ক হবে। তবে বাজারে এসব প্রভাব পড়তে কিছুটা সময় লাগতে পারে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বেশ কয়েকটি পণ্যের ওপর শুল্ক ও ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। যার ফলে এসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে। গত সোমবার (২ জুন) জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাধ্যমে বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

বাজেট বক্তৃতা, অর্থ বিল এবং কাস্টমস অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট নির্দেশনার ভিত্তিতে বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বেশ কিছু ভোগ্যপণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ বা ভ্যাট অব্যাহতি হ্রাসের ফলে গ্রাহকদের জন্য ব্যয় বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

দাম বাড়তে পারে যেসব পণ্যের

মুঠোফোন : দেশে মুঠোফোন উৎপাদন ও সংযোজন খাতে বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা কিছুটা কমিয়ে আনা হয়েছে। এর ফলে বাজারে স্মার্টফোনসহ অন্যান্য মোবাইল ফোনের দাম বাড়তে পারে।

ওয়াশিং মেশিন, ব্লেন্ডার, রাইস কুকার : ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ব্লেন্ডার, জুসার, আয়রন, রাইস কুকার, প্রেসার কুকারসহ বেশ কিছু হোম অ্যাপ্লায়েন্স উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতির সীমা কমানো হয়েছে। এতে এসব পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বাড়বে, যা ভোক্তা পর্যায়ে মূল্য বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলবে।

প্লাস্টিকের তৈজসপত্র : থালা-বাসনসহ গৃহস্থালি প্লাস্টিক সামগ্রীর ওপর ভ্যাট দ্বিগুণ করে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। পরিবেশবান্ধব পণ্যে যদিও ছাড় রয়েছে, তবে বেশিরভাগ সাধারণ প্লাস্টিক পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এলপিজি সিলিন্ডার : তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) সিলিন্ডারে স্থানীয় পর্যায়ের ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা আংশিকভাবে হ্রাস করা হয়েছে। ফলে রান্নার খরচ বাড়তে পারে।

বিদেশি চকলেট : বিদেশি চকলেট আমদানিতে শুল্কায়ন মূল্য ইউনিটপ্রতি ৪ ডলার থেকে বাড়িয়ে ১০ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে এসব বিলাসী খাদ্যপণ্যের আমদানি ব্যয় ও বাজারমূল্য উভয়ই বাড়বে।

লিপস্টিক ও প্রসাধনী : ঠোঁট, চোখ ও মুখমণ্ডলে ব্যবহৃত বিদেশি প্রসাধনপণ্যের শুল্কায়ন মূল্য উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো হয়েছে। ফলে লিপস্টিক, আইলাইনারসহ নানা রকম কসমেটিকসের দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ব্লেড : দেশে ব্লেড উৎপাদনে আরোপিত ভ্যাট আড়াই শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭.৫ শতাংশ করা হয়েছে। এর ফলে শেভিং ব্লেডসহ অন্যান্য অনুরূপ পণ্যের দাম বাড়তে পারে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, এই শুল্ক বৃদ্ধির পদক্ষেপগুলো রাজস্ব আহরণে সহায়ক হলেও তা ভোক্তা পর্যায়ে মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়াতে পারে। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য বাড়তি ব্যয় সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে উঠতে পারে।

বলে রাখা প্রয়োজন, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা যা চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম।

প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। বাজেট ঘাটতি ২ লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং এডিপি ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি বর্তমান সরকারের দৃষ্টিতে সংকোচনমূলক বাজেট।

এর আগে গত সোমবার (২ জুন) সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার দফতরে অনুষ্ঠিত হয় উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠক। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠকে প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন শেষে তাতে সই করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এরপর বাজেট ডকুমেন্টস নিয়ে রামপুরার বিটিভি ভবনে যান অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। সেখানে রেকর্ড করা হয় ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উপস্থাপনা। যা বিকাল ৩টায় সম্প্রচার শুরু করে বাংলাদেশ টেলিভিশন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.