শান্তির সম্প্রীতি

বিশ্বে এখন দরকার শান্তির সম্প্রীতি। এই সম্প্রিতির লক্ষ্যেই কাজ করছে সকলে কিন্তু শান্তির সম্প্রীতিতো আর ফিরছেনা। কেন নেই শান্তির সম্প্রীতি? কিসের অভার আর কিসের প্রয়োজনে এই শান্তির সম্প্রীতি অনুপস্থিত। সারা বিশ্বে হা হা কার শুরু হচ্ছে শান্তির জন্য। শান্তি আজ ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ফিরছে কিন্তু মানুষ তা ঘরে তুলছে না কিন্তু শান্তিকে আবার খুজছে। কি অদ্ভুত মানুষের চাহিদা ও চিন্তা চেতনা।

বিশ্বের শান্তিকামী জনতা শান্তি বিলিয়ে দিতে অথবা শান্তির পরশ ও ছায়াতলে আবদ্ধ করতে দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন কিন্তু শান্তির শিতল পরশে আবৃত করতে পারছেন না। কারন একটাই আর তা হলো পৃথিবীর জাগতিকতা এবং শয়তানের (ইবলিশের) ঐকান্তিক অভিপ্রায় ও প্রয়াস। ইবলিশ পৃথিবীর জাগতিকতার সহিত একাত্রতা ঘোষনা করে শান্তি বিহীন পৃথীবিকে অস্থিতিশীল অবস্থায় বিরাজমান রাখছে। সেই সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ শান্তির অন্বেষনে হন্যে হয়ে ছুটছে কিন্তু পৃথীবির জাগতিকতায় এমনকি মোহনীয় আর আকর্ষনীয় চাকচিক্যে নিমজ্জ্বিত হচ্চে। তাই শান্তি পরশে তৃপ্ত হতে পারেনি।

পৃথিবীতে আগত মহামানব ও নবী রাসুলদের জীবনি থেকে শিক্ষা ও দিক্ষা নিতে আমরা অভ্যস্ত নয় বরং ঐ শিক্ষায় শিক্ষা দিতে অভ্যস্ত। নিজের জীবন প্রয়োগ করতে আগ্রহী নয় বরং অন্যকে শিক্ষা দিতে আগ্রহ। তাই আমাদের জীবনে স্থায়ী শান্তির আবাসস্থল স্থায়ীত্ব পাচ্ছে না। আমরা গত হওয়াদের জীবন ও কর্ম এবং বর্তমান দেখেও শিক্ষা নিইনি বরং জাগতিকতায় আরো বেশী নিমজ্জ্বিত হই। ঈঞ্জিল এবং কোরআন শরীফ পাঠে পাওয়া যায় যে, হযরত ঈসা বলেছিল “ আমার প্রতি শান্তি ছিল যেদিন আমি জন্মেছিলাম এবং আমার প্রতি শান্তি আছে এবং যেদিন আমি পুনরুত্থিত হয়েছিলাম। আমারই শান্তি আমি তোমাদের দিলাম।” ভেবে দেখতে হবে কি ধরনের শান্তি তাঁর সাথে ছিল এবং এখনও আছে। আর তিনিই সেই শান্তি কেনইবা আমাদের দিলেন।

আমাদের প্রত্যেকের জীবনে শান্তির প্রয়োজন এবং শান্তিরাজের শান্তি আমাদের দরকার। তবে সেই শান্তি যেন প্রকৃত শান্তির মালিকের পক্ষ থেকে আসা শান্তি হয়। তাহলেই স্থায়ী শান্তি পাওয়া যাবে। দুনিয়াবী শান্তি ও শৃঙ্খলা এবং নিশ্চয়তা ও নিরাপত্তা ক্ষণস্থায়ী বা অস্থায়ী। আর আখেরী শান্তি, নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তা চিরস্থায়ী। তাই চীরস্থায়ী শান্তির আন্বেষনে মনোনিবেশ করুন। দুনিয়াবী শান্তি পরিহার করুন। দুনিয়ার রাজা বাদশাহরা শান্তির অধিকারী নন, তারা যে শান্তি দেন বা দিতে চান তা ক্ষণস্থায়ী। তাদের প্রয়োজনেই তারা শান্তি বিলানোর বা দেয়ার কথা বলে কিন্তু আসলে তারা শান্তি দিতে পারেনা বরং অন্যের শান্তি হরন করে নিতে পারে। আর সব সময়ই অন্যের শান্তি কেড়ে নিতে মরিয়া হয়ে থাকে।

যিনি বা যার অন্যের শান্তি কেড়ে নেয়ার প্রয়োজন নেই এমনকি তার জন্য কারো শান্তি লাগেনা বরং তিনি নিজেই শান্তি এবং তাঁর শান্তিই তিনি নি:স্বার্থভাবে বিনামূল্যে সকলকে বিলিয়ে দিয়েছেন সেই শান্তি অন্বেষণ করুন এবং গ্রহণ করুন। যেন শান্তির পরশে প্রাণ-মন জুড়িয়ে অন্যকেও শান্তিতে পরিপূর্ণ করতে পরেন। কারো শান্তি হরণে নয় বরং নিজের শান্তি অন্যকে দেয়ার মানুষিকতায় প্রস্তুত হন।

বিভেকের গহীনে প্রশ্ন করুন… যার নিজের শান্তি ও নিরাপত্তা এবং নিশ্চয়তা প্রয়োজন সে কিভাবে অন্যকে শান্তি, নিরাপত্তা এবং নিশ্চয়তা দিতে পারে? কখনো পারেনা বরং অন্যের শান্তি নষ্ট করতে পারে, হরন করতে পারে, অশান্তি বিরাজমান রাখতে পারে। তাই এই পৃথিবীতে শান্তি বিলানোর নমুনায় ঐসকলই দেখা যায় এবং প্রত্যক্ষ করা যায় এমনকি ভোক্তভোগী হিসেবে অন্যের কাছে বলা ও তুলে ধরা যায়।

আজকের দিনে গর্ব করে বলা যায় বিশ্বের রাজা- মহা-রাজারা এমনকি শক্তির মালিকানা দাবিকরা মোড়লড়াও কাউকে শান্তিতে রাখতে অথবা দিতে পারেনা, নিশ্চয়তা ও নিরাপত্তা দিতে পারেনা এবং অতিতেও পারেনি আর ভবিষ্যতেও পারবে না। তাদের নিজেদেরই শান্তি দরকার, নিশ্চয়তা ও নিরাপত্তা দরকার। কিন্তু তাদের তৈরী নিরাপত্তা বলয় এবং নিশ্চয়তার অভয়বানী আর শান্তির ফাকা বুলি বাস্তবে কোন কাজে লাগে না। বরং মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলে, অস্তস্তিতে দিনগুজার করার ব্যবস্থা করে মাত্র। তাই ঐসকল আশার বানি শুনা ও গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন। নিজের হৃদয়ে লোকানো শান্তিকে বের করুন এবং সৃষ্টিকর্তার দেয়া স্থায়ী শান্তিকে চার্চায় আনয়ন করুন এবং সেই শান্তিতে বসবাস করুন এবং অন্যকে করতে উদ্ভুদ্ধ করুন। সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে সহযোগীতা করবেন এবং তাঁর শান্তিতে শান্তিময় করে আগামীর গন্তব্যে পৌঁছাবেন। মনে রাখবেন শান্তি সম্পর্কে সৃষ্টিকর্তা এও বলেছেন “দুনিয়া যেভাবে দেয় সেভাবে আমি দেয় না।” সুতরাং দুনিয়াবী চাওয়া-পাওয়ার সঙ্গে সৃষ্টিকর্তার শান্তিকে মিলাবেন না বরং সৃষ্টিকর্তার দেয়া শান্তিকে সৃষ্টিকর্তার সঙ্গেই মিলিয়ে নিজেকে সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে যুক্ত একজন ভেবে অগ্রসর হউন।

শান্তির সম্প্রীতির জন দরকার ক্ষমা ও ভালবাসা এবং নি:শর্ত ভালবাসার বিনিসুতোর বন্ধন। আসুন আমরা সেই বন্ধন তৈরীতে মনযোগী হই এবং সৃষ্টিকর্তার সান্নিদ্ধে থেকে তাঁর প্রেরীত ও নির্দেশীত পথে অগ্রসর হই। আমাদেরকে ব্যবহার করেই সৃষ্টিকর্তা গৌরবান্বিত হবেন, প্রকাশিত হবেন, মহিমান্বিত হবে, আর প্রশংসিত হবেন। তাই সৃষ্টিকর্তার কর্মীহিসেবে নিজেদেরকে সুপ্রতিষ্ঠিত করি। পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করি, দেখা-শুনা করি, পরিচর্যা করি এবং নিজেদের বেহেস্তি শাসণের অধীনে আনি। সৃষ্টি সেরা জীব আশরাফুল মাফলুকাত হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হই এবং সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিপূর্ব পরিকল্পনার শতভাগ পরিপূর্ণতা দৃশ্যমান রাখি। তবে নিশ্চিত হওয়ার জন্যই লিখছি- আমাদের জন্য সৃষ্টিকর্তার পরিকল্পনা কি? “তোমাদের জন্য আমার পরিকল্পনা কথা আমিই জানি, তা তোমাদের মঙ্গলের জন্য অপকারের জন্য নয়, বরং সেই পরিকল্পনার মধ্যদিয়েই তোমাদের ভবিষ্যতের আশা পূর্ণ হবে।”

আসুন আমরা সকলেই নতুন করে সৃষ্টিকর্তাপ্রদত্ত শান্তির সম্প্রীতি গড়ে তুলি এবং তুলতে নিয়োজিত হই এমনকি ব্যবিব্যস্ত থাকি। মহান রাব্বুল আলআমীন খোদাতায়ালা আমাদেরকে সহায়তা করুন এবং আপনার সঙ্গে রেখে সঙ্গিসাথি হিসেবে নিয়োজিত রাখুন এই কামনাই করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.