শান্তি স্থাপনে যুদ্ধ

শান্তি স্থাপনে যুদ্ধ কথাটি অনিবার্য নয়। বরং শান্তি স্থাপনের পথে অন্তরায়ই বটে। বিশ্বের কোন দেশেই আজও যুদ্ধদ্বারা শান্তি স্থাপীত হয়নি বরং অশান্তিই বেড়েছে। যেসকল দেশে যুদ্ধের মাধ্যমে শান্তি স্থাপিত হয়েছিল বলে ধরে নেয়া যায় কিন্তু প্রকারান্তরে সেই সকল দেশে আজ শান্তি নেই। অশান্তির আগুনে যেন দাও দাও করে জ্বলছে। যুদ্ধদ্বারা দখলদারিত্ব কায়েম হয়েছে এবং সেই দখলদারিত্বেও অশান্তির আগুন দাও দাও করে জ্বলছে। চলমান বিশ্বে যুদ্ধ ও দখলদারিত্বের থাবায় আশান্তির আগুনে জ্বলে-পুড়ে ছাই হচ্ছে, মানুষ, মানবতা ও বিবেক এবং ঈমান ও আমল আর সাথে আছে সৃষ্টির সৃষ্ট সকলকিছু।

বিগত দিনের নবিদের কিতাব বিশ্লেষণ করে বলা যায় এই যুদ্ধ ও দখলদারিত্ব প্রথা পূর্বে শুরু হয়েছিল এবং নিরীহ আর নির্যাতিত ও খোদাভিরুদের খোদা তায়ালা এই অধিকার দিয়ে জয়ী করে খোদার সঙ্গে তাঁর নিজের করে নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু সেই তারাও আর খোদার সঙ্গে থাকতে আগ্রহী নয় এমনকি ছিলনা। তবে এখন বুঝা যায় হযরত মুছার পরবর্তীতে সেই খোদার নিজস্ব মানুষকগুলো আর খোদার সঙ্গে শেষপর্যন্ত যায়নি। তাঁর পরিকল্পনা পরিপূর্ণ করা পর্যন্ত খোদার সঙ্গে থাকেনি। এমনকি এখনও তারা খোদার পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনার বাস্তবায়নের পথে অন্তরায়।

বিগত দিনে আমরা অনেক যুদ্ধ দেখেছি এবং দখলও দেখেছি। রাজ্য দখল, দেশের কিছু অংশ দখল এবং রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলসহ অনেক অনাকাংখিত ঘটনা দেখেছি এবং ইতিহাস লিখেছি। কিন্তু বর্তমানে দেখছি আরেক যুদ্ধ যার আবরণ দেয়া হচ্ছে ধর্মীয় লেবাসে। কিন্তু আসলে ধর্মীয় লেবাসে কোন যুদ্ধের আবরণ দেয়ার সুযোগ আর অবশিষ্ট নেই। ইসরাইল ও ঈরান যুদ্ধ শান্তির জন্য নয় বরং অশান্তির জন্যই প্রজ্জ্বলিত হচ্ছে। ইরান ও ইসরাইল এমনিতেই অশান্তিতে আশান্তময় ছিল কিন্তু বর্তমানে আবার আরো নতুন অশান্তির কারণে পরিণত হয়েছে যা আগামী দিনে মধ্যপ্রাচ্যসহ আশে-পাশের দেশ ও জাতিদ্বয়কে ভোগাবে। সেই যে ভোগান্তি শুরু হয়েছিল তা আজও অব্যাহত রয়েছে… এর কারণ কি বলতে পারেন? একটু ভাবুনতো সৃষ্টিকর্তা কি এই আশান্তিময় অবস্থায় আমাদেরকে রাখতে চান অথবা অতীতে চেয়েছেন? আমার উত্তর না আপনারটি কি ভাবুন এবং মন খুলে বলুন।

শান্তির জন্য কি প্রয়োজন? নিশ্চয় আপনি ও আপনারা জানেন। হ্যা আমরা সকলেই জানি কিন্তু মানি না এবং ব্যাক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রিয় জীবনে চর্চা বা ব্যবহার করিনা। যদি করতাম তাহলে সৃষ্টিকর্তার দেখানো পথে এবং তাঁর সঙ্গেই থাকতাম। আমরা দেখেও না দেখার ভান করি, শুনেও না শুনার ভান করি, বুঝেও না বুঝার ভান করি সর্বোপরি আমরা আমাদের মনগড়া ইচ্ছায় এবং জাগতিক আকর্ষনে বেসামালভাবে অগ্রসর হচ্ছি।

পবিত্র কোরআনে হযরত ঈসা মসিহ সম্পর্কে সৃষ্টিকর্তা বলেছেন “আমার প্রতি শান্তি ছিল যেদিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং শান্তি থাকবে যেদিন আমি মৃর্তুবরণ করব ও যেদিন আমি পুনরুত্থিত হবো।” কথাটি চমৎকার সুন্দর ও বিশ্বাসযোগ্য। কিন্তু এই হযরত ঈসাই আবার ইঞ্জিলের মাধ্যমে বলেগেছেন “আমারই শান্তি আমি তোমাদের দিয়ে গেলাম”। এই শান্তির বিষয়টি ভাবার বিষয় এবং জ্ঞানের আলোকে জানার বিষয়। এই বিষয়ে খোদার কালামে এও বলা আছে “যাদের জ্ঞানের অভাব তারা যেন সৃষ্টিকর্তা (খোদা তায়ালার) কাছে চায়। কারন উপর থেকে যে জ্ঞান আসে তা প্রথমত খাঁটি ও ভন্ডামিশুন্য, নম্র ও পরোপকারী, কল্যাণকামী এবং শান্তিপূর্ণ। হঁ্যা এই জ্ঞান অন্বেষনে এগিয়ে এসে আহরণ করুন। এই প্রকৃশ শান্তিকে নিশ্চিত জীবনে সম্পৃক্ত করে উপভোগ করুন ও করান।

খোদার দেয়া শান্তিই প্রকৃত শান্তি এবং এই শান্তি দখল ও যুদ্ধ দ্বারা অর্জন করা যায় না বরং বিনামূল্যের শান্তি বিশ্বাস (ঈমান), আমল ও নির্ভরতার মাধ্যমে চর্চাদ্বারা অর্জন করতে হয়। আর অর্জিত শান্তি বিনামূল্যে বিলাতে হয়। বর্তমানের চারিপাশে যা ঘটছে, দেখছি, শুনছি এর কোনটিই শান্তি স্থাপনে যথেষ্ট নয় বরং শান্তির জন্য শান্তিরাজের স্মরণাপন্ন হতে হবে এবং এই শান্তি খোদার পরিকল্পনার মাধ্যমেই চুড়ান্তভাবে অর্জিত হবে। আর আমাদের জন্য খোদার পরিকল্পনা কি? হঁ্যা সৃষ্টিকর্তা সেই পরিকল্পনা সম্পর্কে বলেছেন “তোমাদের জন্য আমার পরিকল্পনার কথা আমিই জানি। সেটা তোমাদের উপকারের (মঙ্গলের) জন্য, অপকারের জন্য নয়। আর সেই পরিকল্পনার মধ্যদিয়েই তোমাদের ভবিষ্যতের আশা পূর্ণ হবে।” কি আর বলা যায় … যা বলার তা তিনিই পরিস্কার করে বলে দিয়েছেন। এখন শুধু বোঝে শুনে এবং দেখে পরিপালন করে অগ্রসর হওয়ায় কাম্য এবং যা আজ ফরজে আইনে পরিণত হয়েছে। তাই সকলের নিকট আকুল আবেদন যুদ্ধ নয়, দখল নয়, ক্ষমতার ব্যবহার নয় বরং ক্ষমা ও ভালবাসা এবং নিজের মত মহব্বত করার মাধ্যমেই শান্তি সুপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আর এই শান্তির মাধ্যমেই পৃথিবীতে নতুন পথে বেহেশতের দরজায় পৌঁছাতে সক্ষম করে তুলবে। এই শান্তির মাধ্যমেই পৃথিবী পাপ ও অভিষাপমুক্ত হবে। আসুন আমরা এই পথে অগ্রসর হই। খোদা তায়ালা আমাদের সবাইকে সাহায্য করুন যেন আমার তাঁর অনুসারী ও অনুকরণকারী হয়ে তাঁর সঙ্গে থাকার অধিকারী হতে পারি। আমীন\

Leave a Reply

Your email address will not be published.