অন্যের দোষ ধরা বা খোজা আমাদের স্বভাবের একটি অন্যতম বৈশিষ্ঠ্য। আমরা সহজাত প্রবৃত্তির বশে বশবর্তি হয়ে জ্ঞাত বা অজ্ঞাতস্বরে প্রত্যেকেই প্রত্যেকর দোষ খুজি এবং ধরী। কিন্তু দোষ খোজা বা ধরা কি আমাদের মানায়? আমি কি অন্যের দোষ ধরতে বা খোজতে পারি? এইসকল প্রশ্নগুলি কখনোই আমাদেরকে তাড়না দেয়নি বা দেবার সুযোগও পায়নি। বরং আমরা উদগ্রীব হয়ে থাকি দোষা খোজা বা ধরার জন্য। আর এইসকল বিষয়গুলোই এখন বাতাসে ভাসছে। সমাজে, পরিবারে ও পরিবেশে, কর্মক্ষেত্রে, অফিশ-আদালত, সরকার ও বিরোধিদলে এই দোষ ধরা ও খোজা সংস্কৃতি বিশালাকৃত্তিতে বিরাজমান রয়েছে। যার জন্য জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় পর্যায়েই এই সংস্কৃতি সত্যকে আড়াল করার কাজে বড় ভুমিকা রাখছে।
দেশিয় এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলো বা সম্প্রচার মাধ্যমগুলোও এই দোষ খোজা ও ধরা সৃংস্কৃতির ধারক ও বাহক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। যেন সর্বক্ষেত্রেই দোষাক্রান্ত রাজনীতি, সমাজনীতি, কর্মনীতি এবং পেটনীতি আর ধর্মনীতির অভয়ারণ্য। আসলেই কি তাই? একটু ভেবে দেখবেন কি? খোজ করবেন কি? এই দোষাক্রান্ত ভান্ত নীতি ও চিন্তার দ্বারা সকল ভাল এবং ইতিবাচক ও কার্যকর মহান স্রষ্টার নিয়ামতগুলো বিলুপ্ত হচ্ছে এবং দোষাক্রান্ত সমাজ ব্যবস্থার চাপায় পৃষ্ট হচ্ছে। আমরা কি কেউ নিজের দোষ কোনদিন খুজেছি বা ধরেছি? বুকে হাতদিয়ে সাহস করে একবার নিজের দোষ খোজুন এবং ধরুন। তারপর অন্যের দোষ খোজা ও ধরার দিকে দৃষ্টি দিন। দেখুন কেমন লাগে আর কি রকম অস্বস্তিতে আমাকে ও আপনাকে পড়তে হয়।
এই বিষয়ে মহান খোদা তায়ালা বা সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে বলেছেন যে, আমরা যেন অন্যের দোষ খোজে না বেড়ায়। আমরা যেন আমার ভাইয়ের চোখের কোটা পরিস্কার করার উদ্দেশ্যে না দৌঁড়াই বরং নিজের চোখের কোটাটি আগে পরিস্কার করি। নিজের দোষ ঢাকা দেয়ার জন্য নিজের চোখের কোটা রেখে বা নিজের দোষাক্রান্ত স্বভাব রেখে অন্যের দোষ খোজা বরই বোকামী। বরং মিথ্যাদিয়ে মিথ্যাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করারই নামান্তর মাত্র। দোষ ধরার একমাত্র মালিক সৃষ্টিকর্তা এবং তিনিই দোষ ধরবের ও বিচার করবেন। তাই তাকে তাঁর কাজ করতে সুযোগ দেয়া উচিত। আমি বা আমরা কে দোষ ধরার বা বিচার করার?
এই বিষয়ে একটি সত্য গল্প উপস্থাপন করলাম। একজন দোষী এবং জেনাকারীর বিচার করার জন্য সমাজবদ্ধ হয়ে মানুষজন একজন মহাঈমামের কাছে গেলেন এবং সকলে মিলে ঐ দোষী বা জেনাকারীনির বিরুদ্ধে নালিশ বা আর্জি জানালেন। পাথর মেরে মারার কথা চেচিয়ে বললেন কিন্তু ঐ ইমান বা বিচারক সকলের কথা মনযোগ দিয়ে শুনে এই সিদ্ধান্তে উপনিত হলেন যে, হ্যা এই দোষির স্বাস্তী হবে এবং তাকে শরীরের অর্ধাংশ মাটিতে পুতে বাকি অংশে সকলে এক এক করে পাথর ছুরে হত্যা করতে হবে। এই কথা শুনে সবাই খুশি এবং সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অগ্রসর হচ্ছে এমন সময় ঐ বিচারক বা মহা ঈমান বললেন যে, একজন একজন করে পাথর মারবে। তবে সবচেয়ে আগে সেই পাথর মারবে যে নির্দোষ এবং নিখুত। এই ভাবে পর্যায়ক্রমিকভাবে নির্দোষেরাই পাথর মেরে তাকে মৃত্যুর কোলে ডলে পড়াবে।
এরপর কি হলো জানেন? প্রত্যেকেই স্তম্ভিত হলো এবং একে ওকে আগে মারতে বললো এবং এইভাবে বলতে বলতে আর কেউ নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করে পাথর মারতে গেলো না বা পারলো না। সবাই নিজেকে দোষিই মনে করে এই বিচারালয় থেকে প্রস্থান করলো। আবশেষে ঐ ঈমাম এবং দোষী একা দাড়িয়ে থাকল। তখন ঈমাম বলল কেউ যখন তোকে দোষি হিসেবে পাথর মারল না তাই আমি মারিনি এবং তোকে ক্ষমা করে দিলাম। এখন থেকে সঠিক ও সুন্দর এবং আনন্দময় ইতিবাচক জীবনযাপন কর…যাও।
আজকে আমার প্রশ্ন এখানে এবং সকলের সামনে যে, আমরা কি ঐ মহিলার মত অবস্থায় নেই। বা ঐ বিচার প্রার্থীদের মত অবস্থায় নেই। আসুন আমরা খোজ করি আমাদের দোষ এবং সেই অনুযায়ী অন্যের দোষা না খুজি। তবে বর্তমানের কিছু উদাহরণ চোখে পড়ার মতোই। ট্রাম্প এই দোষ করেছে ঐ দোষ করেছে, নেতানিয়াহু এই দোষ করেছে ঐ দোষ করেছে, পুতিন এই দোষ করেছে ঐ দোষ করেছে, ইরান এই দোষ আর ঐ দোষ করেছে, ইন্ডিায়া, জাপান, চিন ইত্যাদি দেশ এই দোষ করেছে আর ঐ দোষ করেছে, প্রফেসর ইউনুছ এবং তার সহকর্মীরা এই দোষ করেছে আর ঐ দোষ করেছে। কে বলেছে এই কথাগুলো তা কি আমরা ভেবে দেখেছি? আর যারা বলেছে তাদের সম্পর্কে কি আমরা জানতে চেয়েছি কেন তারা আজ এইকথাগুলো বলেছে? যদি ঐ লোকগুলোকেও ঐ সম্মানিয় স্থানে বসানো হয়তো তাহলে এই একই কথা আমাদের শুনতে হতো। তবে এর পিছনের কারণ কি? ঐ জায়গায় গেলে কেন এত দোষারুপের কথা শুনতে হয়?
একটু ভাবুন এবং এই দোষাক্রান্ত সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে এসে নিজেদের দোষ পরিস্কারে মনযোগ দিন এবং পৃথিবীকে দোষাক্রান্ত আবস্থান থেকে শান্তির এবং নিশ্চয়তার আর আনন্দের অভয়ারণ্যে ভরপুর করান আর আগামীর অনাগত প্রজন্মকে ভোগ করতে সুযোগ দিন।