প্র্রশান্তি আন্তর্জাতিক ডেক্স ॥ যুক্তরাষ্ট্র আরোপিত বাড়তি শুল্ক কমানোর জন্য আলোচনা করছে অন্তবর্তী সরকার। এই আলোচনায় নেতৃত্ব দিচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আপাতদৃষ্টিতে বিষয়টি বাণিজ্যিক হলেও শুল্ক আলোচনার আড়ালে যুক্তরাষ্ট্র তার ভূ-রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধন করতে চাইছে। এজন্য এই আলোচনায় বাণিজ্যিক বিষয়ের পাশাপাশি এমন অনেক উপাদান রয়েছে, যেগুলো অবাণিজ্যিক এবং এর মধ্যে নিরাপত্তা ইস্যুও রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আলোচনার ফলাফল যেটিই হোক না কেন এর একটি বড় প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের বৈদেশিক সম্পর্কে। অন্যভাবে বলা যায়, বাংলাদেশের সঙ্গে অন্য দেশগুলোর বর্তমান যে সম্পর্ক রয়েছে সটিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। এ জন্য বাংলাদেশকে অনিশ্চিত ঘটনা মোকাবিলা করার জন্য তৈরি থাকতে হবে এবং ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য নতুন কৌশলের প্রয়োজন হতে পারে।
এ বিষয়ে সাবেক একজন কূটনীতিক বলেন, ‘যেকোনও দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক হচ্ছে রাজনৈতিক এবং এটি ভালো থাকলে, যেকোনও ধরনের উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সহজ হয়।’
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক আলোচনা বাণিজ্যিক প্রকৃতির হলেও এর একটি ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব আছে এবং সেটি বাংলাদেশকে বিবেচনায় নিতে হবে বলে তিনি জানান।
আরেক সাবেক কূটনীতিক বলেন, ‘শুল্ক আলোচনার ফলাফল যেটিই হোক না কেন, বৈদেশিক সম্পর্কে এর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা আছে।’
যদি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনার মাধ্যমে ওই দেশকে বাড়তি সুবিধা দেওয়া হয়, তবে বাংলাদেশের অন্য বৈদেশিক অংশীদাররা বিষয়টি ভালোভাবে নাও নিতে পারে। আবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা যদি ব্যর্থ হয়, তবে ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশের বৈদেশিক অংশীজন : বাংলাদেশের বৃহৎ বৈদেশিক অংশীজনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, মধ্যপ্রাচ্যসহ আরও অনেক দেশ। একেকটি দেশ একাধিক কারণে গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রফতানি বাজার। আবার বাংলাদেশে যেসব পণ্যের ঘাটতি আছে, সেগুলো জোগানের ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে ভারত ও চীন। জাপান বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন অংশীদার। মধ্যপ্রাচ্য হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার, অর্থাৎ বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থানের অন্যতম বড় বাজার।
আবার বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমন্ডলে দিল্লি, বেইজিং, ব্রাসেলস ও ওয়াশিংটন গুরুত্বপূর্ণ। এই দেশগুলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশে প্রভাব সৃষ্টিকারী দেশ হিসেবে পরিচিত।
বাংলাদেশের বৈদেশিক অংশীজনদের নিজেদের মধ্যে রসায়নও একই ধরনের নয়। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বৈরী সম্পর্ক। আবার এশিয়ার মধ্যে দিল্লি ও বেইজিংয়ের সম্পর্ক ভালো নয়। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মধ্যে ঐতিহাসিকভাবে সুসম্পর্ক থাকলেও বর্তমান ট্রাম্প প্রশাসনের সময়ে নিরাপত্তা ও বাণিজ্যসহ বিভিন্ন কারণে চাপের মধ্যে আছে সম্পর্ক।
এ বিষয়ে সাবেক একজন কূটনীতিক বলেন, ‘বড় শক্তিগুলোর মধ্যে সবসময় ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ। এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কারণে ওই দেশকে বাড়তি সুবিধা দেওয়া হলে অন্য দেশগুলোর সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য বাড়তি প্রচেষ্টা নিতে হবে বাংলাদেশকে।’
বিভিন্ন দেশের বাজার সুবিধা : যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কারণে শুল্ক নিয়ে আলোচনা করছে বাংলাদেশ। কিন্তু বাংলাদেশকে কোনও ধরনের বাড়তি বাজার সুবিধা দেয় না যুক্তরাষ্ট্র।
আবার ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দেয়। বাংলাদেশের পণ্য ওইসব দেশে বিনা শুল্কে ঢুকলেও তাদের পণ্যের ওপর বাংলাদেশ শুল্ক আরোপ করে থাকে।
একজন সাবেক কূটনীতিক বলেন, ‘বাংলাদেশকে বাজার সুবিধা দেয় না, এমন দেশকে শুল্ক ও অন্যান্য বাণিজ্যিক সুবিধা দেওয়া হলে, যারা বাংলাদেশকে বাজার সুবিধা দেয় তাদের মনোভাব কী হতে পারে, সেটি বিবেচনায় নেওয়ার দরকার এবং এ জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি থাকার দরকার রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ওয়াশিংটনের সঙ্গে ঢাকার আলোচনা চীনসহ অন্যরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। যদি দুই দেশ কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছায় এবং একটি কাঠামো চুক্তি করে তবে সেটির প্রভাব সম্পর্কে বাংলাদেশের ভালো ধারণা থাকতে হবে এবং এ জন্য কূটনৈতিক প্রস্তুতি প্রয়োজন হবে।’