চরমপন্থা, ফ্যাসিবাদ আর যেন পুনর্বাসনের সুযোগ না পায়: তারেক রহমান

প্রশান্তি ডেক্স ॥ ‘রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে আর যাতে চরমপন্থা কিংবা ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ না পায়’ সে ব্যাপারে দেশবাসীকে সর্তক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তারেক রহমান। গত শনিবার (১৯ জুলাই) এক আলোচনা সভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এই আহ্বান জানান।

ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ও শিক্ষকদের উদ্যোগে ‘গণঅভ্যুত্থান-২০২৪: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অবদান ও শহীদদের স্মরণে’ এই আলোচনা সভা হয়।

তিনি বলেন, ‘‘জাতীয় নির্বাচন আসন্ন। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে আমাদের জীবনে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের ব্যাপক গুরুত্ব রয়েছে।”

‘‘আপনাদের-আমাদের, সকলের কোনও আবেগতাড়িত কিংবা ভুল সিদ্ধান্তের কারণে রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে ভবিষ্যতে আর যাতে কোনও চরমপন্থা কিংবা ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ না পায় সে ব্যাপারে আপনাদেরকে তথা সমগ্র দেশবাসীকে সতর্ক ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।’’

দেশের বর্তমান পরিস্থিতির প্রসঙ্গ টেনে তারেক রহমান বলেন, ‘‘সাম্প্রতিক সময়ে দেশে কিছু নৃশংস এবং অনাহুত ঘটনায় জনমনে অন্তর্বরতীকালীন সরকারের সক্ষমতা নিয়ে ক্ষেত্রবিশেষে কিছু প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। তবে অন্তর্বরতীকালীন সরকারের কোনও একটি অংশের সহায়তায় কেউ কেউ দেশে উদ্দেশ্যমূলক পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছে কিনা— সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় মানুষের কথা শুনলে বুঝা যায় এই বিষয়টিও জনমনে জিজ্ঞাসা রয়েছে।”

‘‘অন্তর্বরতীকালীন সরকারের পক্ষে আদৌ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব কিনা কোনও কোনও মহল থেকে এমন ধরনের প্রশ্ন উপস্থাপন বিচ্ছিন্ন বক্তব্য হিসেবে বোধহয় দেখার আর কোনও সুযোগ নেই। তাদের (অন্তর্বরতীকালীন সরকার) সম্ভাব্য প্রতিশ্রুত সময়ে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে কেউ সময়ক্ষেপণ করতে চাইছে কিনা এই ব্যাপারেও সজাগ দৃষ্টি রাখার জন্য আমি গণতান্ত্রিক জনগণের প্রতি, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি, আন্দোলনরত দলগুলোর প্রতি জানাই আহ্বান।”

অন্তর্বরতীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান রেখে বলেন, ‘‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আরও স্বচ্ছ ও সাহসী ভূমিকা রাখুন। বাংলাদেশে গণতন্ত্রকামী জনগণ আপনাদের পাশে থাকবে। গণতন্ত্র বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলগুলো আপনাদের পাশে থাকবে যদি আপনাদের ভূমিকা আরও স্বচ্ছ ও স্বাধীন হয়।”

‘লেখাপড়াই প্রথম অগ্রাধিকার হতে হবে’

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘আজকের তারুণ্য আগামীর বাংলাদেশ। ছাত্র-তরুণরা অবশ্যই রাজনীতি করবে, রাজনৈতিকভাবে সচেতন থাকবে। ছাত্র-তরুণদের সাহসী অংশগ্রহণ ছাড়া বিশ্বের কোনও দেশেই স্বৈরাচার কিংবা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বিপ্লব বা গণঅভ্যুত্থান সফল হওয়ার উদাহরণ হওয়া খুবই বিরল।”

‘‘তবে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য আপনাদেরকে সবার আগে জ্ঞান-বিজ্ঞানে, মেধা-মননে, প্রজ্ঞা-অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হতে হবে। আপনাদের মনে রাখতে হবে জ্ঞান-বিজ্ঞানে অগ্রসরমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে বর্তমানে শুধু স্মোগাননির্ভর কিংবা প্রচলিত প্রথাগত রাজনৈতিক সংস্কৃতি দিয়ে ২০২৪ সালের শহীদ, ১৯৭১ সালের শহীদ কারোই কাঙ্খিত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়। শহীদদের কাঙিত বাংলাদেশ গড়তে চাইলে অবশ্যই আপনাদেরকে নিজেদের যোগ্য মানুষ এবং যোগ্য নেতা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে এবং সেই মহান লক্ষ্যকে সামনে রেখে সরকারি কিংবা বেসরকারি প্রতিটি ক্যাম্পাস জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত রাখতে হবে। আপনাদের অবশ্যই পালন করতে হবে অগ্রণী ভূমিকা। রাজনৈতিক কার্যক্রমের পাশাপাশি লেখাপড়া হতে হবে আপনাদের প্রথম এবং প্রধান অগ্রাধিকার।”

অধ্যাপক তৌফিকুল ইসলাম মিথিলের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, বিএনপির জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি পালন কমিটির আহ্বায়ক রুহুল কবির রিজভী, সদস্য সচিব অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল হান্নান চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।

এছাড়া ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আবু হোরায়রা, গণঅভ্যুত্থানের শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ, ইমতিয়াজ আহমেদ আবির, সাজ্জাদ হোসেন, সাজ্জাদ হোসেন সজলের স্বজনরা, গণঅভ্যুত্থানে আহত আল মিরাজসহ অনুষ্ঠানের আয়োজক কমিটির আবদুল্লাহ আল মিরাজ জাকারিয়া, রায়হান পাটোয়ারি, ওমর শরীফ মো. ইমরান বক্তব্য রাখেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.