প্রশান্তি আন্তর্জাতিক ডেক্স ॥ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করছে নিউজিল্যান্ড। গত সোমবার (১১ আগস্ট) এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইনসটন পিটার্স। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, সেপ্টেম্বরে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেবে প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লুক্সনের ক্যাবিনেট। এরপর বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের নিয়ে আয়োজিত জাতিসংঘের ‘লিডার্স উইকে’ তা উপস্থাপন করা হবে।
ইতোমধ্যে সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, ব্রিটেন এবং কানাডা। সে তালিকায় এখন যুক্ত হতে পারে নিউজিল্যান্ড।
এ বিষয়ে পিটার্স বলেছেন, তাদের একাধিক মিত্র ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও তারা পুরো বিষয়টি আরেকটু বিবেচনা করবেন। কারণ তাদের একটি স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি রয়েছে।
তিনি বলেছেন, পুরো বিষয়টি সতর্কতার সঙ্গে যাচাই করে আমরা নিউজিল্যান্ডের নীতি, মূল্যবোধ এবং জাতীয় স্বার্থ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করব। এই মূল্যায়নের মধ্যে রয়েছে, ফিলিস্তিন অঞ্চল রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য বৈধতা অর্জন করেছে কিনা, তা যাচাই করে দেখা।
তবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রগঠন কেবল সময়ের অপেক্ষা উল্লেখ করে পিটার্স বলেন, আমরা আগেও এটা স্পষ্ট বলেছি যে, ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হবে কিনা, সেটা প্রশ্ন নয়। প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা এটা কখন দেব।
জাতিসংঘের অধিবেশনে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে অস্ট্রেলিয়া
আগামী মাসে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে অস্ট্রেলিয়া। গত সোমবার (১১ আগস্ট) প্রকাশিত এক বিবৃতিতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ এ কথা বলেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
অস্ট্রেলীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওংয়ের সঙ্গে যৌথ বিবৃতিতে আলবানিজ বলেন, দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান, গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে আন্তর্জাতিক অগ্রগতির ধারাবাহিকতায় ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। সেপ্টেম্বরে হতে যাওয়া জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে এই ঘোষণা দেবে অস্ট্রেলিয়া।
তিনি আরও বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলমান সহিংসতার চক্র ভাঙার সবচেয়ে ভালো সমাধান হচ্ছে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান। এর মাধ্যমেই গাজায় অনাহার, সংঘাত এবং ভোগান্তির অবসান হবে।
এর আগে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা করেছে ফ্রান্স, ব্রিটেন ও কানাডা। এই তালিকায় অস্ট্রেলিয়ার নাম যুক্ত হওয়ায় ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধি পাবে বলে মত প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
ক্যানবেরাতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আলবানিজ বলেছেন, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রাপ্ত নির্দিষ্ট কিছু অঙ্গীকারের ভিত্তিতে স্বীকৃতি নির্ভর করবে। এর মধ্যে রয়েছে, ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র গঠন প্রক্রিয়ায় সশস্ত্র হামাস গোষ্ঠীর কোনও সম্পৃক্ততা না থাকা।
গাজায় সামরিক নয়, বরং রাজনৈতিক সমাধান জরুরি বলে উল্লেখ করে আলবানিজ জানান, গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে তিনি এ কথা বলেছেন।
গাজায় সামরিক অভিযান সম্প্রসারণ ও গাজা সিটি দখলের এক পরিকল্পনা গত সপ্তাহে অনুমোদন করেছে নেতানিয়াহু সরকার। সে সময় এর ব্যাপক সমালোচনা করেছিল অস্ট্রেলিয়া।
আলবানিজ বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বান উপেক্ষা করে গাজার প্রতি আইনি ও নৈতিক অঙ্গীকার পালনে ব্যর্থ হয়েছেন নেতানিয়াহু। তাদের এই ব্যর্থতাই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য তাদের সিদ্ধান্তকে আরও উদ্বুদ্ধ করেছে।
তিনি বলেন, নেতানিয়াহু সরকার অবৈধ বসতি সম্প্রসারণ, অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড সংযুক্তির হুমকি এবং প্রকাশ্যে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের বিরোধিতা করে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনা ধ্বংস করছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওকে অস্ট্রেলিয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে বলে জানান পেনি ওং।
উল্লেখ্য, গত মাসে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলায় গত মাসে অস্ট্রেলিয়ার সমালোচনা করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর ফ্রান্সের সিদ্ধান্তকে ‘বেপরোয়া’ বলে অভিহিত করেছিলেন রুবিও।
অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত আমির মাইমন অস্ট্রেলিয়ার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বলেন, তাদের সিদ্ধান্ত ইসরায়েলের নিরাপত্তা দুর্বল এবং জিম্মি মুক্তির আলোচনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।