আর্মেনিয়া -আজারবাইজান চুক্তিতে প্রস্তাবিত ট্রানজিট করিডরপ্রত্যাখ্যান করলো ইরান

প্রশান্তি আন্তর্জাতিক ডেক্স ॥ যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে শান্তি চুক্তির আওতায় ককেশাস অঞ্চলে প্রস্তাবিত এক করিডর বন্ধ করে দেবে ইরান। যদিও অঞ্চলটির অন্যান্য দেশ এই করিডোরকে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি অর্জনে সহায়ক হিসেবে স্বাগত জানিয়েছে। গত শনিবার (৯ আগস্ট) ইরানের সর্বোচ্চ নেতার শীর্ষ উপদেষ্টা আলি আকবর ভেলায়াতি বলেছেন, রাশিয়া থাকুক বা না থাকুক, তেহরান এই উদ্যোগ ঠেকাবে। রাশিয়া ও আর্মেনিয়ার কৌশলগত মিত্র ইরান। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম তাসনিম নিউজকে ভেলায়াতি বলেন, ট্রাম্প মনে করেন ককেশাস এমন এক রিয়েল এস্টেট, যেটি তিনি ৯৯ বছরের জন্য লিজ নিতে পারেন।

তিনি উল্লেখ করেন, শান্তি চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত এই পরিবহণ করিডর সেই পরিকল্পনার অংশ।

তিনি আরও বলেন, ‘এই পথ ট্রাম্পের ভাড়াটে সৈন্যদের জন্য প্রবেশদ্বার হবে না এটি হবে তাদের কবরস্থান।’ তিনি এই পরিকল্পনাকে আর্মেনিয়ার আঞ্চলিক অখণ্ডতা খর্ব করার উদ্দেশ্যে করা ‘রাজনৈতিক বিশ্বাসঘাতকতা’ হিসেবে আখ্যা দেন।

গত শুক্রবার হোয়াইট হাউজে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ঘোষিত চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র আর্মেনিয়ার মধ্য দিয়ে এক রুট নির্মাণ ও উনয়নের একচেটিয়া অধিকার পাবে, যা আজারবাইজানকে নাখচিভানের সঙ্গে যুক্ত করবে। নাখচিভান হলো আজারবাইজানের একটি এলাকা, যা তুরস্কের সীমানা ঘেঁষে অবস্থিত এবং বাকি আজারবাইজান থেকে বিচ্ছিন্ন।

করিডরটি ইরানের সীমান্তের কাছ দিয়ে যাবে। এর নামকরণ হবে ট্রাম্প রুট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস অ্যান্ড প্রসপারিটি। এটি আর্মেনিয়ার আইন অনুযায়ী পরিচালিত হবে।

ভেলায়াতি দাবি করেন, এটি ন্যাটোকে ‘একটি বিষধর সাপের মতো’ ইরান ও রাশিয়ার মাঝখানে অবস্থান নেওয়ার সুযোগ করে দেবে।

অন্যদিকে, ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এর সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় যেকোনো বিদেশি হস্তক্ষেপের সম্ভাব্য নেতিবাচক পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

যদিও মন্ত্রণালয় আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের শান্তি চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে বলেছে, ইরান সীমান্তবর্তী যেকোনো প্রকল্প অবশ্যই ‘জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি সম্মান রেখে এবং বিদেশি হস্তক্ষেপ ছাড়া’ বাস্তবায়িত হতে হবে।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও শনিবার চুক্তিকে সতর্কভাবে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, মস্কো অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি আনতে সব প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে। আর এর মধ্যে ওয়াশিংটনের বৈঠকও রয়েছে। তবে ইরানের মতো তারাও বহিরাগত হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে সতর্ক করেছে। বলেছে, দীর্ঘস্থায়ী সমাধান অবশ্যই আঞ্চলিক দেশগুলোর মাধ্যমেই আসা উচিত।

এদিকে তুরস্ক শনিবার বলেছে, পরিকল্পিত এই ট্রানজিট করিডর দক্ষিণ ককেশাসের মাধ্যমে জ্বালানি ও অন্যান্য সম্পদ রপ্তানি বাড়াতে সহায়ক হবে।

ন্যাটো সদস্য তুরস্ক আর্মেনিয়ার সঙ্গে সংঘাতে দীর্ঘদিন আজারবাইজানকে সমর্থন করেছে। তবে বাকুর সঙ্গে চূড়ান্ত শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের পর ইয়েরেভানের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ এবং আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান।

Leave a Reply

Your email address will not be published.