ডাকসুর নির্বাচন ও বিশ্লেষণ

সদ্য সমাপ্ত হওয়া ডাকসুর নির্বাচন  জনগণ ও আমার ভাবনা। তবে এতে করে বাংলাদেশ স্বাধীন এবং স্বাধীন দেশের মানুষজন ঐক্যবদ্ধ খুশী উদযাপন করতে পারেনি। পূর্বের ন্যায় এখনও বিদ্যমান রাজনীতি এবং তার চর্চায় লিপ্ত এই জাতি। কিভাবে হবে ঐক্য এবং ঐক্যবদ্ধ জাতিসত্ত্বা এবং কিভাবে সম্পন্ন করবে উন্নয়ন ও অগ্রগতি তাই এখন ভাবার বিষয়। আগামীর রাজনীতি কেমন হবে এবং রাজনৈতিক চর্চা ও মানুষের আচার ব্যবহার কেমন হবে তাও ভাবার এমনকি ঠিক করার সময় এখন।

বাংলাদেশের রাজনীতির পাশে নতুন হাওয়া বইছে তার একটি প্রমান হলো সদ্য সমাপ্ত হওয়া ঢাকসুর নির্বাচর এবং নির্বাচন কেন্দ্রীক সকল প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ আলোচনা-সমালোচনা এবং এর আঙ্গিকে বিশ্লেষণ। আমরা কতকিই না করি এবং দেখি ও দেখাই তারও একটি জলন্ত প্রমান এই নির্বাচন। আর এই নির্বাচনের মাধ্যমে আগামী দিনের জন্য খোলা রয়েছে বা হয়েছে নতুন আমলনামা। যা লিপিবদ্ধ হবে জাতির ভাগ্যাকাশে পরিবর্তনের হাওয়ায়।

বাংলাদেশ স্বাধীনতার পূর্বে এবং স্বাধীনতা পরবর্তীতে যারা আমরা এই দেশে বসবাস করিয়াছি এবং করিতেছি তারা আমরা সবাই বাংলাদেশী। তবে কেউ কেউ এই বাংলাদেশ হওয়ার পথে বাধা সৃষ্টিকারী হিসেবে চিহ্নিত কিন্তু পরবর্তীতে ঐ বাধাসৃষ্টিকারীরাও বাংলাদেশী হিসেবেই এই দেশে বসবাস করিয়া আসিতেছে। কিন্তু দেশ স্বাধীন এবং নতুন দেশ সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে আজোঅব্দি যারা এই দেশে বসবাস করেছেন তারাই বাংলাদেশী। আর বাংলাদেশী হিসেবে এই দেশে সকল কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ এবং উন্নয়ন ও অগ্রগতীতে ভূমিকা রাখবে এটাই স্বাভাবিক ও অর্জিত দেশের সংবিধান দ্বারা প্রাপ্ত সাংবিধানিক অধিকার।

সেই ক্ষেত্রে আমাদের ভাবনার বিষয় হলো এই সাংবিধানিক অধিকার অক্ষুন্ন রাখতে আমরা সকলে কি ঐক্যবদ্ধ। আমাদের অর্জিত অধিকার প্রয়োগে এবং রক্ষায় আমরা কি সক্ষম। যদি না হয়ে থাকি তাহলে কেন এবং কিসের প্রয়োজনে অথবা কি কি কারণে বঞ্চিত সেই বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে লিপিবদ্ধকরণ আশু জরুরী। মুক্তিযুদ্ধকালীন এবং স্বাধীনতা উত্তর যে ঐক্যছিল সেই ঐক্য কি আদৌ বিদ্যমান? স্বাধীনতার পূর্বে যে বিভক্তি ছিল সেই বিভক্তি কি আদৌ বিরাজমান। এই বিষয়গুলোও আমাদের ভাবনায় আনয়ন করা জরুরী।

বিভক্তির রাজনীতি এবং দেশ পরিচালনায় বিভক্তির নীতি থেকে বের হয়ে আসার সময় এখন আর এটা জরুরী। দেশে ঐক্যবদ্ধ সহবস্থান সৃষ্টি সময়ের দাবী। সবাই বাংলাদেশী কেউ দেশ বিরোধী নয় এবং কেউ আর এখন রাজাকার সাবক নয়। বরং সবাই আমরা বাংলাদেশী। আর যারা দেশ গঠনে এবং স্বাধীনতা অর্জনে ভুমিকা রেখেছেন, জীবন দিয়েছেন তাদের প্রত্যেককেই যোগ্য সম্মান ও শ্রদ্ধা আর দেখভাল করার মানুষিকতায় নিয়োজিত হওয়া সময়ের এবং যুগের উর্বর দাবি। এই দাবির প্রতি একাত্মতা পোষণই সকলের ঐকান্তিক কাম্য হওয়া উচিত ছিল আছে এবং থাকবে।

সদ্য শেষ হওয়া ঢাবির নির্বাচন নিয়ে পুর্বের রাজনৈতিক চর্চার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। তবে এইবার নিরবচ্ছিন্ন এবং শান্তিপূর্ণ ও জঞ্জালহীন নির্বাচন হয়েছে যা গ্রহণযোগ্য এবং কৌশলী হিসেবে বিবেচ্য। যা বুদ্ধিদিপ্ত এবং অজানা শঙ্কার একটি মহড়াও বটে। তবে আমরা দেখেছি অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস এই নির্বাচনকে কলুষিত করেছে। অতিরিক্ত বড়ভাই সুলভ আচরণ এবং শক্তিশালী ভাব পোষণ ও তোষণ করাও একটি কলুষিথ অধ্যায়ে পরিণত হয়েছে। সমালোচনা এবং পেশিশক্তি, মিথ্যা বুলি এবং গালি আর হুমকি-ধমকি এমনকি নেতিবাচক কৌশল এই নির্বাচনে পরাজিত। শুধু নম্রতা, জ্ঞান নির্ভর ভদ্রতা আর কৌশল এমনকি উন্নয়ন ও আগ্রগতির যৌক্তিক দিকদর্শন ও ঐক্যবদ্ধ সহাবস্থান এর দৃশ্যমান আচরণ ও কর্মকৌশল এই নির্বাচনের ইতিবাচক সফলতার ভূমিকায় কাজ করেছে।

রাজনৈতিক দলগুলোর নেতিবাচকতায় ভোটাররা দিশেহারা হয়ে ঐক্যবদ্ধ ইতিবাচকতাকে বেছে নিয়েছে। এখানে কোন রাজনৈতিক দল বা মত অথবা পথকে বেছে নেয়নি বরং বেছে নিয়েছে ইতিবাচকতাকে আর নীতি ও আদর্শকে এমনকি আগামীর বাংলাদেশের একটি দৃষ্টান্ত উপস্থাপনে সহায়ক হিসেবে জাতির সামনে প্রত্যক্ষ করানো কাজের দৃষ্টান্ত হিসেবে। সেই একই ভাবনায় দেশবাসীও আগামীতে এই মনোভাব এর সফল বাস্তবায়ন করার অপেক্ষায়।

নির্বাচনে সবাই জিতে না বরং একপক্ষ জিতে আর অপর পক্ষ হারে এটাই নিয়তির বিধান। কিন্তু আমাদের দেশের নির্বাচন অভিযোগ- অনুযোগ এবং নির্বাচন প্রত্যাখ্যান এমনকি বানচালের কূটকৌশল এমনকি নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য অনেক নেতিবাচক ও অন্যায্য উপস্থান ও দৃশ্যমান রাখা একটি রেওয়াজ। আর এই রেওয়াজ ব্যাত্বয় এবারও জাতি প্রত্যক্ষ করলো। যা ঢাবির নির্বাচনের ক্ষেত্রে কেউই কামনা করেনাই। নির্বাচনকে মেনে নিয়ে সাধুবাদ জানিয়ে প্রশংসায় ভাসিয়ে আগামীর কল্যাণ সাধনে এমনকি জনতান মনযোগ আকর্ষণে লিপ্ত থাকাই ছিল উত্তম এবং আগামীর জন্য দৃষ্টান্ত। কিন্তু সেই সুযোজ জাতি মিস করেছে। একই ভুলে বা ফাঁদে পা দিয়েছে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী এবং পরাজিত প্রার্থীরা। আমরা আশা করবো তাদের বুধোদয় হবে এবং নতুন বাংলাদেশে নতুন ভাবনায় নিজেদেরকে দৃষ্টান্তের প্রয়োজনে ন্যস্ত করে ব্যস্ত রাখবে।

যারা বিজয়ী হয়েছে তারা যে পরিচয়েই পরিচিত হউক বা দেউক না কেন; তারা কিন্তু মানুষ এবং বাংলাদেশী ও বাংলাদেশে বসবাসকারী। তাই তাদের পরিচয় একটিই, তারা বাংলাদেশী এবং ছাত্র। দল, মত ও ভিন্ন পথের হয়েও এখন সকলের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান বজায় রাখায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া। বিভাজনের রাজনীতির উদ্ধে উঠে সকলকে নিয়েই কাজ করা তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। দেশ গঠনে ভুমিকা রাখা এবং দৃষ্টান্ত হওয়া এখন সময়ের দাবি। সেই দাবি পুরণে ঢাকসুর নির্বাচিতরা ইতিবাচক ভুমিকা রাখবে এই প্রত্যাশাই জাতির।

আগামীর নির্বাচন এবং রাজনীতি এই দুই ক্ষেত্রেই ঢাকসু নির্বাচিতরা ভুমিকা রাখবে এবং জাতি এদের কাছ থেকে ইতিবাচক শিক্ষা এবং দীক্ষা নিবে এই প্রত্যাশাই করি। তবে আমাদের রাজনীতিবীদদের অনেক শিখার বাকি এবং নতুনভাবে রাজনীতিকে সাজাতে শুরু করার সময় এখনই। যে যত তাড়াতাড়ি নতুনত্বের সাথে নিজেদেরকে খ্যাপখাইয়ে নিতে পারবে জাতির ততই মঙ্গল। কারণ পুরনোতে আর এই জাতির চলবে না বরং নতুনত্বতেই এই জাতির মুক্তি। পুরাতনরা নতুন আঙ্গীকে নতুন নুতন কৌশল ও দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ইতিবাচক কল্যাণ ও মঙ্গল সাধনায় নিয়োজিত হয়ে নম্রতা আর ক্ষমা ও ভালবাসায় মর্ত্ত থেকে ঐক্যবদ্ধ সহাবস্থান বজায় রাখতে সম্মান ও শ্রদ্ধায় নিয়োজিত হয়ে আগামীর কল্যাণে কাজ করতে হবে। বিভক্তির সকল বেড়াজাল ছিড়ে বরং সার্বজনীতি ঐক্যবদ্ধতা বিরাজমান রাখায় মনোনিবেশ করতে হবে। এই শিক্ষায় আগামীর কল্যাণ সাধন সম্ভব হবে। ঢাকসু নির্বাচন এই চেতনায় এই জাতিকে আগামীর জন্য দিয়ে গেল বলে আমি ও আমরা মনে করি। আরো নতুন ও গ্রহণযোগ্য এবং দৃষ্টান্তবহমান চিন্তা এবং এর বহি:প্রকাশ অনেকেই প্রকাশ করবে। আর এর থেকে আগামীর মুক্তি ও কল্যাণ সুনিশ্চিত হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.