প্রশান্তি আন্তর্জাতিক ডেক্স ॥ অধিকৃত পশ্চিম তীর ইসরয়েলের সঙ্গে আংশিক বা পুরোপুরি সংযুক্ত করলে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক কমিয়ে দিতে পারে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)। উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্রটির সিদ্ধান্ত নিয়ে অবহিত তিনটি সূত্র জানিয়েছে, আবুধাবি সম্পূর্ণ সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা ভাবছে না। যদিও প্রায় দুই বছর ধরে চলমান গাজা যুদ্ধের কারণে উত্তেজনা বাড়ছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

মুসলিম বিশ্বের অল্প কিছু আরব রাষ্ট্রের মধ্যে ইউএই ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে। সম্পর্ক কমানো হলে এটি হবে আব্রাহাম অ্যাকর্ডসের জন্য বড় ধাক্কা। কারণ এটি ছিল সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং নেতানিয়াহুর একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈদেশিক নীতি সাফল্য।
সম্প্রতি ইসরায়েলি সরকার পশ্চিম তীর সংযুক্তির পূর্বাভাসমূলক কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে পূর্ব জেরুজালেমসহ পশ্চিম তীর দখল করে ইসরায়েল। জাতিসংঘ ও অধিকাংশ দেশ এ ধরনের পদক্ষেপের বিরোধিতা করে।
নেতানিয়াহুর জোট ডানপন্থি জাতীয়তাবাদী দলগুলোর ওপর নির্ভরশীল। সংযুক্তিকরণ আগামী বছরের সম্ভাব্য নির্বাচনের আগে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভোট জয়ের হাতিয়ার হতে পারে।
আবুধাবি চলতি মাসে নেতানিয়াহুর ডানপন্থি জোটকে সতর্ক করে দিয়েছিল যে পশ্চিম তীর সংযুক্তকরণ হবে উপসাগরীয় এই রাষ্ট্রের জন্য একটি ‘রেড লাইন’। তবে এরপর কী ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে তা জানায়নি।
২০২০ সালে আব্রাহাম অ্যাকর্ডসের অধীনে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনকারী ইউএই, প্রতিক্রিয়াস্বরূপ তাদের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহারের কথা বিবেচনা করছিল বলে সূত্রগুলো রয়টার্সকে জানিয়েছে।
ইসরায়েলের এক সূত্র জানিয়েছে, সরকার মনে করছে তারা ইউএই’র সঙ্গে টানাপোড়েনপূর্ণ সম্পর্ক পুনর্গঠন করতে পারবে। আরব রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ইউএইকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ধরা হয়। তারা ২০২০ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছিল। অন্যরা ছিল বাহরাইন ও মরক্কো।
এরপর থেকে আর কোনও আরব রাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপন করেনি। ইসরায়েলের সঙ্গে কেবল মিসর ও জর্ডানের কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে এবং কাতারের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে, যদিও পূর্ণ স্বীকৃতি নেই। একসময় সমৃদ্ধ ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল ইউএই ও ইসরায়েলের মধ্যে। তবে গাজা যুদ্ধের কারণে তা ঠান্ডা হয়ে গেছে। সম্পর্ক স্থাপনের পাঁচ বছর পরও নেতানিয়াহু এখনও উপসাগরীয় এ রাষ্ট্রে সফর করেননি।
সূত্র জানিয়েছে, ইসরায়েলের সঙ্গে বাড়তে থাকা উত্তেজনার অংশ হিসেবে উপসাগরীয় রাষ্ট্রটি গত সপ্তাহে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, নভেম্বর মাসে দুবাই এয়ারশোতে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা কোম্পানিগুলোকে প্রদর্শনী করার অনুমতি দেবে না। এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা এ সিদ্ধান্তের সত্যতা নিশ্চিত করেছে।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা এ সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অবগত হয়েছে, তবে বিস্তারিত জানায়নি। আবুধাবিতে ইসরায়েলি দূতাবাসের এক মুখপাত্র বলেছেন, সপ্তাহব্যাপী এ বাণিজ্যমেলায় ইসরায়েলের অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা এখনও চলছে।
প্রথমে ইসরায়েলের গণমাধ্যমই ইউএই’র এই পদক্ষেপের খবর প্রকাশ করে।
ইউএই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক কমানোর সম্ভাবনা নিয়ে কোনও প্রশ্নের জবাব দেয়নি।
আবুধাবিতে ইসরায়েলের দূতাবাসের মুখপাত্র বলেছেন, ইসরায়েলের আব্রাহাম অ্যাকর্ডসের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ এবং ইউএই’র সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার কাজ অব্যাহত রাখবে।
ইউএই’র পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা লানা নুসেইবেহ ৩ সেপ্টেম্বর রয়টার্স ও ইসরায়েলি মিডিয়াকে বলেছিলেন, পশ্চিম তীর সংযুক্তকরণ আব্রাহাম অ্যাকর্ডসকে বিপদের মুখে ফেলবে এবং আঞ্চলিক সংহতির প্রচেষ্টা শেষ করে দেবে।
ওই সতর্কবার্তা এসেছিল কাতারে হামাস নেতাদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলের বিমান হামলার আগেই। ওই হামলাকে ‘বিশ্বাসঘাতকতাপূর্ণ’ বলে নিন্দা করেছিলেন ইউএই প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের কূটনৈতিক উপদেষ্টা আনোয়ার গারগাশ।
সম্পর্ক স্থাপনের পর ইউএই ও ইসরায়েল ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলে, যেখানে অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। এর আগে বহু বছর ধরে গোপন যোগাযোগ চলছিল।
কিন্তু ২০২৩ সালে নেতানিয়াহু ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে। আবুধাবি বহুবার ইসরায়েলি মন্ত্রী বেন-গভিরের আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণের স্থিতাবস্থা বদলে ইহুদিদের সেখানে প্রার্থনার সুযোগ দেওয়ার প্রচেষ্টার নিন্দা করেছে। এই স্থান মুসলিম ও ইহুদিদের জন্য পবিত্র এবং বর্তমানে অমুসলিমরা শুধু পরিদর্শন করতে পারে। কিন্তু প্রার্থনা করতে পারে না।
ইউএই ইসরায়েলের পশ্চিম তীরে বসতি সম্প্রসারণের নীতি, গাজায় সামরিক অবরোধেরও সমালোচনা করেছে। বলেছে, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য ইসরায়েলের পাশাপাশি একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রয়োজন।
অথচ চলতি মাসেই নেতানিয়াহু ঘোষণা করেছেন কোনও ফিলিস্তিন রাষ্ট্র থাকবে না।