প্রশান্তি ডেক্স ॥ ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত চুক্তির লক্ষ্যে দরকষাকষিতে বাংলাদেশ দুর্বল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী। অপরদিকে, বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশের পণ্য কেনার সুযোগ কম। আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে চাই।

গত বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) ‘বাংলাদেশ-মার্কিন ট্যারিফ চুক্তি: কীভাবে বাণিজ্য সুবিধা হতে পারে’ শীর্ষক এক সেমিনারে এ মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী।
বিশেষজ্ঞ ও নীতিনির্ধারকরা সম্প্রতি সই হওয়া বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক চুক্তির সর্বোচ্চ সুফল পেতে একটি সমন্বিত জাতীয় কৌশল প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তারা বলেছেন, এ চুক্তি দেশের বাণিজ্য খাতের জন্য যেমন সুযোগ তৈরি করেছে, তেমনই কিছু চ্যালেঞ্জও বয়ে এনেছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (অর্থ মন্ত্রণালয়) ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এতে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশ নেন। বিআইআইএসএসের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল ইফতেখার আনিস স্বাগত বক্তব্য দেন এবং অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, বাণিজ্য বিনিয়োগ বাড়াতে হলে এ ক্ষেত্রে দরকষাকষিতে আমাদের দক্ষতা জরুরি। আমরা বাণিজ্য খাতের দরকষাকষিতে দুর্বল। আমাদের দক্ষতা আরও বাড়াতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা সংস্কার চাই। সবক্ষেত্রেই সংস্কার আনার চেষ্টা করছি। বাণিজ্য খাতে সংস্কার আনতে সমন্বিত অনলাইনে সেবা চালু করা হয়েছে।
বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, ছয় মাসের নোটিশে শুল্ক নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বাংলাদেশ সফল হয়েছে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমাদের পণ্য কেনার সুযোগ কম। তবে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে চাই।
তিনি বলেন, সে লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিন লাখ টনেরও বেশি গম আমদানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে আমাদের পণ্য রফতানি বাড়াতে হলে পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে। প্রবন্ধ উপস্থাপনায় বিআইআইএসএস-এর গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবীর, আইইউবিএটি’র অধ্যাপক ড. গোলাম রাসুল এবং বিজিএমইএ’র সিনিয়র সহ-সভাপতি ইনামুল হক খান শুল্ক চুক্তির ফলে বাংলাদেশের রফতানি প্রতিযোগিতার ওপর প্রভাব তুলে ধরেন।
বক্তারা উল্লেখ করেন, চলতি বছরের ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়া এ চুক্তির ফলে বাংলাদেশের ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্কহার ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে নামানো হয়েছে।
তারা এ অর্জনকে একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে অভিহিত করেন, যা বাংলাদেশকে ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মতো আঞ্চলিক প্রতিদ্ব্নদ্বীদের সমকক্ষ স্থানে নিয়ে এসেছে এবং প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমারের তুলনায় আরও প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে রেখেছে।
বক্তারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অন্যতম বড় রফতানি বাজার, বিশেষ করে পোশাক খাতে। এ চুক্তি যথাযথভাবে কাজে লাগানো গেলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আরও সম্প্রসারিত হতে পারে।
তবে তারা সতর্ক করে বলেন, পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক শুল্ক পরিস্থিতি তাৎক্ষণিক নীতি-মনোযোগ ও সব অংশীজনের সমন্বিত পদক্ষেপ দাবি করে।
সেমিনারে বলা হয়, এ চুক্তির পুরোপুরি সুফল পেতে হলে বাংলাদেশকে পুরো বাণিজ্য ব্যবস্থাকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি সমন্বিত কৌশল গ্রহণ করতে হবে।
সেমিনারে নীতিনির্ধারক, ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞদের একযোগে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক যুদ্ধ-সংশ্লিষ্ট অনিশ্চয়তার মধ্যেও টেকসই প্রবৃদ্ধি ও স্থিতিস্থাপকতা নিশ্চিত করা যায়। উন্মুক্ত আলোচনায় সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, কূটনীতিক, সেনা কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী নেতা, শিক্ষাবিদ, গবেষক, গণমাধ্যমকর্মী এবং শিক্ষার্থীরা সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং তাদের অভিমত ও সুপারিশ তুলে ধরেন।