ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি ॥ ঠাকুরগাঁও জেলা সম্মিলিত শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন কমিটির তথ্যমতে, এবার জেলায় ৪৭৫ টি মন্ডপে একযোগে শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

শেষ মুহূর্তে ব্যস্ত সময় পার করছে প্রতিমা শিল্পীরা। প্রতিমা তৈরিতে এঁটেল ও বেলে মাটি ছাড়াও বাঁশ-খড়, দড়ি, লোহা, পাট, কাঠ, রংসহ বিভিন্ন রঙের ছিটকাপর ও দড়ি দিয়ে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তাঁরা।
শুধু দুর্গা প্রতিমা নয়, পাশাপাশি গণেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী ও সরস্বতীর প্রতিমাকে দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তুলতে হয় তাদের। মহিষাসুর, সিংহসহ সবার বাহনও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।
তাই সেগুলোকেও দিতে হয় সমান গুরুত্ব। আর এসব মিলিয়েই পরিপূর্ণ হয় একটি দুর্গার প্রতিমা।
যেমনটি দেখা গেছে, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জিউ মন্দির, দুর্গাবাড়ি মন্দির, শান্তিনগর মন্দির, ফারাবাড়ি মন্দির সহ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে সব মন্দিরেই।
প্রতিমার কাজ প্রায় অধিকাংশই শেষ। রং আর তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে দেবীর প্রতিচ্ছবি।
মহা ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে দূর্গা পূজা। ঢাক ঢোল আর কাঁসর বাদ্যে দেবীর বোধন পূজার মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। এ বছর দেবী দুর্গা কৈলাস থেকে মর্তৈ ধামে আসছে গজে করে (অর্থাৎ হাতিতে) পাঁচদিন নানা আনুষ্ঠানিকতা শেষে মরতে থেকে কৈলাসে দেবী ফিরবেন দোলায় (অর্থাৎ পালকিতে)।
প্রতিমা শিল্পীরা জানিয়েছেন প্রতিবছর তারা দুর্গার প্রতিমা তৈরি করে থাকেন। এবারও তারা দিনরাত পরিশ্রম করে পরিবারের সকলকে নিয়ে প্রতিমা তৈরি কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে।
কিছু মণ্ডপগুলোতে ছোট করে প্রতিমা বানাচ্ছেন মন্দির কমিটি। জিনিসপত্র দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে। এতে তাদের এই পরিশ্রমে তেমন কোন লাভবান হতে পারছেন না প্রতিমা শিল্পীরা। তারপরও বংশের ঐতিহ্য কে টিকিয়ে রাখতে তাদের এই পরিশ্রম। ইতিমধ্যে প্রতিমা বানানোর কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। চলছে রঙের গাছ দৃষ্টি নন্দন রূপে সাজানো হচ্ছে প্রতিমাগুলো। বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার সভাপতি জয়মন্ত অলক বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে এবারও শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। মন্দিরগুলোতে কাজ প্রায় শেষের দিকে, এখন শুধু প্রতিমা রং এর কাজ বাকি আছে। পূজা উপলক্ষে যুব মহাজোটের সদস্যরা বিভিন্ন মন্দিরের খোঁজখবর নেওয়া হয়।
জেলা যুব মহাজোট সবসময় সকল সনাতন ধর্মালম্বীদের পাশে আছে এবং থাকবে। পূজার এখন শুধু আনুষ্ঠানিকতা অপেক্ষায়।
এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্মরন্টের সভাপতি মনোরঞ্জন সিং বলেন, সকলে মিলে দুর্গাপূজা উপলক্ষে তারা সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। প্রতিবছর যেভাবে জেলায় দুর্গাপূজা উদযাপন করা হয় ঠিক একই ভাবে এবারও দুর্গাপূজা উদযাপন করা হবে।
এদিকে সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম প্রশান্তি প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, জেলায় এই বছর প্রতিটি দুর্গাপূজা মণ্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব পালিত হবে, প্রতিটি দুর্গা মন্ডপে আনসার নিয়োগ করা থাকবে, পুলিশের টল টিম মাঠে থাকবে এছাড়াও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মনিটরিং করবেন ।
তিনি আশা করেন ঠাকুরগাঁওয়ে সকলে মিলে একটি সুন্দর দুর্গাপূজা পালন হবে। আসছে দুই অক্টোবর বিজয়া দশমীতে সিঁদুর খেলা শোভাযাত্রার মধ্যে দিয়ে ঠাকুরগাঁও পুরো শহরের রিভারভিউ উচ্চ বিদ্যালয়ের পিছনে টাঙ্গন নদীতে দুর্গার ঘাটে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হবে এই উৎসবটি।