প্রশান্তি ডেক্স ॥ বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংকে কর্মী ছাঁটাইয়ের ঢেউ আরও তীব্র হলো। চাকরি বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে এবার একসঙ্গে আরও ২০০ কর্মীকে অব্যাহতি দিয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। চলতি সপ্তাহে দ্বিতীয় দফায় এ ছাঁটাইয়ের ফলে মোট ৪০০ কর্মী চাকরি হারালেন।

তবে ব্যাংক কৃর্তপক্ষের দাবি, বিষয়টি দক্ষতা যাচাই ও অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষার অংশ। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) পরিচালিত ‘বিশেষ যোগ্যতা মূল্যায়ন পরীক্ষা’ ঘিরেই এ প্রক্রিয়া শুরু হয়। ওই পরীক্ষায় অংশ নেন ৪১৪ জন কর্মী, যার মধ্যে ৮৮ শতাংশ বা ৩৬৪ জন উত্তীর্ণ হয়েছেন। বাকি ৫০ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়ে পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ দেওয়া হবে। আর পরীক্ষায় অংশ না নেওয়া প্রায় পাঁচ হাজার কর্মীকে আপাতত ওএসডি (বিশেষ দায়িত্বে সংযুক্ত) করা হয়েছে।
কেন ছাঁটাই? : ইসলামী ব্যাংকের একাধিক সূত্র বলছে, যাদের চাকরি বাতিল করা হয়েছে, তারা কেবল অযোগ্যতার কারণে নয়, বরং পরীক্ষার বিরুদ্ধে সামাজিক মাধ্যমে অপপ্রচার, সহকর্মীদের অংশগ্রহণে বাধা এবং ব্যাংকের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নেওয়ার মতো কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন।
নিয়োগ থেকে বিতর্ক : ২০১৭ সালে এস আলম গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে গতবছরের আগস্ট পর্যন্ত ব্যাংকটিতে প্রায় ১১ হাজার লোক নিয়োগ পান। অভিযোগ রয়েছে, এর মধ্যে ৮ হাজার ৩৪০ জনকে বিজ্ঞপ্তি বা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা ছাড়াই নিয়োগ দেওয়া হয়। এখন তাদের যোগ্যতা যাচাই নিয়েই মূলত পুরো প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
গত ২১ আগস্ট চট্টগ্রামের চাক্তাই শাখার সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার মো. জিয়া উদ্দিন নোমান বিশেষ যোগ্যতা মূল্যায়ন পরীক্ষা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন। আদালত বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন বাংলাদেশ ব্যাংককে। পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্পষ্ট জানায়, এ ধরনের পরীক্ষা গ্রহণ ও চাকরি বহাল রাখা বা বাতিল করা ব্যাংকের নিজস্ব এখতিয়ার।
ব্যাংকের অবস্থান : ইসলামী ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিভাগের প্রধান ড. কামাল উদ্দীন জসীম বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য কাউকে ছাঁটাই করা নয়, বরং দক্ষতা যাচাই ও বৈধতা নিশ্চিত করা। পরীক্ষায় অংশ নেওয়া কর্মীদের বিশাল অংশ উত্তীর্ণ হয়েছেন। যারা পারেননি, তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আর পরীক্ষায় অংশ নেওয়া সম্ভব হয়নি এমন কর্মীদের জন্যও নতুন করে সুযোগ রাখা হয়েছে।’
সনদ যাচাইয়ে জালিয়াতি ধরা : ব্যাংকটি শুধু পরীক্ষাতেই থেমে থাকেনি, নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীদের একাডেমিক সনদও যাচাই করছে। প্রথম ধাপে বেসরকারি ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ হাজার ২১৪ জনের সনদ যাচাইয়ে বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৩০টি জাল সনদ শনাক্তের তথ্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ বেসরকারি ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকের এই ব্যাপক ছাঁটাই এবং যোগ্যতা মূল্যায়ন প্রক্রিয়া শুধু প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরীণ সংকট নয়, সামগ্রিক ব্যাংকিং খাতের জন্যও তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা বহন করছে। নিয়োগের স্বচ্ছতা, দক্ষতা যাচাই এবং কর্মসংস্থান নিরাপত্তা সবই এখানে প্রশ্নের মুখে। বিশেষ করে রাজনৈতিক প্রভাবিত নিয়োগ প্রক্রিয়ার জটিলতা এখন আদালত, বাংলাদেশ ব্যাংক ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এক নতুন পর্যায়ে যাচ্ছে।
ব্যাংক খাতের বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইসলামী ব্যাংকের এই উদ্যোগ ভবিষ্যতে অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য নজির তৈরি করতে পারে। তবে এর প্রভাব কর্মীদের মধ্যে অস্থিরতা, সেবার মান এবং প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তিতেও দীর্ঘমেয়াদে পড়তে পারে।