ইইউর বায়োমেট্রিক সীমান্ত ব্যবস্থা: অ-ইউরোপীয় ভ্রমণকারীদের জন্য কী পরিবর্তন আসছে

প্রশান্তি আন্তর্জাতিক ডেক্স ॥ ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর বাইরে থেকে যারা শেনজেন অঞ্চলে প্রবেশ করেন, তাদের জন্য ভ্রমণ প্রক্রিয়ায় বড় পরিবর্তন আসছে এই রবিবার থেকে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ইইউ চালু করছে নতুন বায়োমেট্রিক এন্ট্রি/এক্সিট সিস্টেম (ইইএস)। এই ব্যবস্থার আওতায় ব্রিটিশ ভ্রমণকারীসহ ইউরোপের বাইরের সব নাগরিকদের প্রথমবার শেনজেন অঞ্চলে প্রবেশের সময় তাদের আঙুলের ছাপ, মুখের ছবি এবং ব্যক্তিগত তথ্য নিবন্ধন করতে হবে। নতুন এই ব্যবস্থা ধীরে ধীরে চালু হবে এবং ২০২৬ সালের ১০ এপ্রিলের মধ্যে পুরোপুরি কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে ইউরোপীয় কমিশন।

কেন নতুন এই পরিবর্তন?

ইইউর লক্ষ্য হলো সীমান্ত ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটাল ও আধুনিক করা। একই সঙ্গে অবৈধ অভিবাসন, পরিচয় জালিয়াতি ও ভিসার মেয়াদ শেষে অবস্থান রোধ করা।

এখন থেকে হাতে করে পাসপোর্টে সিল দেওয়ার পরিবর্তে প্রতিটি ভ্রমণকারীর তথ্য ডিজিটাল রেকর্ডে সংরক্ষিত থাকবে, যা তার বায়োমেট্রিক পরিচয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে।

এছাড়া, যারা ভিসা ছাড়া সর্বোচ্চ ১৮০ দিনের মধ্যে ৯০ দিন থাকার অনুমতি পান, তাদের অবস্থানও এই সিস্টেমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নজরদারিতে থাকবে।

কীভাবে কাজ করবে এই ব্যবস্থা?

প্রথমবার কেউ শেনজেন অঞ্চলে প্রবেশ করলে তাকে পাসপোর্ট স্ক্যান করতে হবে, আঙুলের ছাপ দিতে হবে, মুখের বায়োমেট্রিক ছবি তুলতে হবে। বের হওয়ার সময় তার তথ্য পুনরায় যাচাই হবে এবং অবস্থান সময়সীমা অতিক্রম হয়েছে কিনা তা ইইএস ডাটাবেসে মিলিয়ে দেখা হবে। পরবর্তী যাত্রায় কেবল মুখের বায়োমেট্রিক যাচাই করলেই চলবে।

১২ বছরের নিচে শিশুদেরও নিবন্ধন করতে হবে। তবে তাদের শুধু ছবি তোলা হবে। এই প্রক্রিয়ার জন্য কোনও ফি দিতে হবে না।

কোথায় এই চেকগুলো হবে?

সব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, বন্দর, ট্রেন টার্মিনাল ও সড়ক সীমান্তে এই নিবন্ধন কার্যক্রম চলবে।

তবে যুক্তরাজ্যের ডোভার বন্দর, ফোকস্টোনের ইউরোটানেল টার্মিনাল এবং লন্ডন সেন্ট প্যানক্রাসের ইউরোস্টার টার্মিনালে যাত্রার সময়ই নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। সেখানে ফরাসি সীমান্ত কর্মকর্তারা প্রক্রিয়াটি তত্ত্বাবধান করবেন।

সীমান্তে কি ভিড় বাড়বে?

ইইউ বলছে, ধীরে ধীরে চালু করার কারণে বড় ধরনের বিলম্বের আশঙ্কা নেই। প্রয়োজনে সীমান্ত কর্মকর্তারা কিছু সময়ের জন্য চেক স্থগিত রাখতে পারবেন।

ডোভার ও ফোকস্টোনে আগামী ১২ অক্টোবর থেকে শুধু মালবাহী ট্রাক ও কোচ যানবাহনে ইইএস চেক শুরু হবে। ব্যক্তিগত গাড়ির চেক নভেম্বর থেকে, আর ইউরোটানেলে বছরের শেষে শুরু হবে।

ইউরোস্টার জানিয়েছে, নতুন নিয়ম ধীরে ধীরে কার্যকর করা হবে। তবে ব্রিটিশ সরকার ভ্রমণকারীদের অতিরিক্ত সময় হাতে রাখার পরামর্শ দিয়েছে।

পর্যবেক্ষকদের মতে, প্রকৃত পরীক্ষা হবে ২০২৬ সালের ইস্টার ও গ্রীষ্মকালীন ছুটির মৌসুমে। তখন অধিকাংশ পরিবার প্রথমবার এই নতুন সিস্টেমের আওতায় ভ্রমণ করবে।

আরও পরিবর্তন আসছে ২০২৬ সালে

ইইএস-এর পর ইইউ চালু করবে আরেকটি ব্যবস্থা। আর তা হলো ইউরোপীয় ভ্রমণ তথ্য ও অনুমোদন ব্যবস্থা (ইটিআইএএস)। এটি চালু হবে ২০২৬ সালের শেষ নাগাদ।

তখন শেনজেন অঞ্চলের বাইরের নাগরিকদের ভ্রমণের আগে অনলাইনে ইটিআইএএস অনুমোদন নিতে হবে, যেখানে ব্যক্তিগত তথ্য ও ভ্রমণ পরিকল্পনা জমা দিতে হবে এবং ২০ ইউরো ফি দিতে হবে।

এই অনুমোদন তিন বছর বা পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত বৈধ থাকবে।

ইউরোপীয় কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন বায়োমেট্রিক সীমান্ত ব্যবস্থা ইউরোপের সীমান্তকে ‘আরও নিরাপদ ও কার্যকর’ করবে। তবে ভ্রমণকারীদের জন্য এটি এক নতুন যুগের সূচনা হবে। কারণ এই ব্যবস্থায় প্রতিটি ভ্রমণ শুরু হবে একটি ডিজিটাল ছাপ রেখে।

সূত্র: রয়টার্স

Leave a Reply

Your email address will not be published.