ইউনেস্কোর ৪৩তম সাধারণ পরিষদের সভাপতি বাংলাদেশ

প্রশান্তি ডেক্স ॥ ইউনেস্কোর ৪৩-তম সাধারণ পরিষদের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছে বাংলাদেশ। ইউনেস্কোতে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও ফ্রান্স নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত খন্দকার এম তালহা সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন।

গত মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) পরিষদের ২২২তম অধিবেশনে অনুষ্ঠিত ভোটে রাষ্ট্রদূত তালহাকে নির্বাচিত করেছে প্যারিসভিত্তিক জাতিসংঘ সংস্থার নির্বাহী পর্ষদ।

সাধারণ পরিষদের সভাপতি পদে বাংলাদেশ, জাপান, ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়া প্রজাতন্ত্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। তবে গত সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারত তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছিল।

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস, শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার এবং সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা মোস্তফা সারওয়ার ফারুকী বাংলাদেশকে এই মর্যাদাপূর্ণ পদে নির্বাচিত করায় নির্বাহী বোর্ডের প্রশংসা করেন।

প্রফেসর ইউনূস একে ‘ঐতিহাসিক অর্জন’ বলে অভিহিত করেন এবং বাংলাদেশের সফল অভিযানে নেতৃত্বের জন্য শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা এবং স্থায়ী মিশনকে ধন্যবাদ জানান।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এটি বাংলাদেশের জন্য একটি গর্বের মুহূর্ত।’

শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার বলেন, ‘ইউনেস্কোর সর্বোচ্চ পদে এই নির্বাচন শিল্প, সংস্কৃতি ও শিক্ষায় বাংলাদেশের অবদানের প্রতি বিশ্বব্যাপী দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। এটি একটি বিরল সম্মান।’

সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা মোস্তফা সারওয়ার ফারুকী বলেন, ‘ইউনেস্কোর সাম্প্রতিক অধিবেশনে বাংলাদেশের সক্রিয় অংশগ্রহণ ইতোমধ্যে প্রশংসিত হয়েছে। এই নতুন ভূমিকাটি বিশ্ব মঞ্চে আমাদের শৈল্পিক, সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহ্যবাহী ল্যান্ডস্কেপের প্রাণবন্ততা তুলে ধরার জন্য একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম সরবরাহ করে।’

২০২১ সালে ইউনেস্কোতে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসাবে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত তালহা বাংলাদেশের নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রাখার জন্য নির্বাহী বোর্ডের সদস্যদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বৈশ্বিক বহুপাক্ষিকতার এই সংকটময় সময়ে ইউনেস্কোর ম্যান্ডেট সমুন্নত রাখতে নিরলসভাবে কাজ করার অঙ্গীকার করে তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের দেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক অর্জন।’

রাষ্ট্রদূত তালহা প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ইউনেস্কোতে দেশের ৫৩ বছরের সদস্যপদের ইতিহাসে শীর্ষ এই পদের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি অক্টোবরের শেষের দিকে উজবেকিস্তানের সমরকন্দে অনুষ্ঠেয় সাধারণ পরিষদের আসন্ন ৪৩তম সভায় রোমানিয়ার রাষ্ট্রদূত সিমোনা মিরেলা মিকুলেস্কুর স্থলাভিষিক্ত হবেন এবং আগামী দুই বছর মেয়াদে এই শীর্ষ পদ অলংকৃত করবেন।

রাষ্ট্রদূত তালহা বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিসের একজন সিনিয়র পেশাদার কূটনীতিক, যার তিন দশকেরও বেশি কূটনৈতিক অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি ১৯৯৫ সালে ১৫তম ব্যাচের সদস্য হিসেবে পররাষ্ট্র ক্যাডারে যোগদান করেন। অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ে স্নাতকোত্তর রাষ্ট্রদূত তালহা নিউইয়র্ক, তেহরান, জেনেভা ও লন্ডনে বাংলাদেশ মিশনে দায়িত্ব পালন করেন। সদর দপ্তরে অবস্থানকালীন তিনি রাষ্ট্রাচার প্রধান এবং মহাপরিচালক (পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাকে গত ২০২১ সালে ফ্রান্স, মোনাকো, আইভরি কোস্টে রাষ্ট্রদূত এবং ইউনেস্কোর স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল।

ইউনেস্কোতে বাংলাদেশের অনেক কূটনৈতিক সাফল্যের মূল স্থপতি ছিলেন রাষ্ট্রদূত তালহা। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ইউনেস্কোর নির্বাহী বোর্ড এবং অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সুরক্ষায় আন্তঃরাষ্ট্রীয় পর্ষদসহ ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে জয়লাভ করেছে। ‘ঢাকায় রিকশা ও রিকশা শিল্প’কে বাংলাদেশের অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি আনয়নে তিনি নেতৃত্বশীল ভূমিকা পালন করেন।

রাষ্ট্রদূত তালহা শিক্ষা সংক্রান্ত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ০৪ বাস্তবায়নের জন্য উচ্চ-পর্যায়ের স্টিয়ারিং কমিটির শেরপা হিসাবে টানা দুই মেয়াদে নির্বাচিত হন। তিনি শিক্ষা বিষয়ক লক্ষ্য ও অভীষ্ট বাস্তবায়নে নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত দেশসমূহের জন্য বিশ্বব্যাপী তহবিল গঠনের জন্য বিভিন্ন দরকষাকষিতে অংশগ্রহণ করেন। রাষ্ট্রদূত তালহা ইউনেস্কোতে সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তির বৈচিত্র্য সম্পর্কিত আন্তঃরাষ্ট্রীয় পর্ষদের (২০০৫ কনভেনশন) এবং বেসরকারি অংশীদারদের জন্য পর্ষদের (এনজিপি) সভাপতিত্ব করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.