গাজায় যুদ্ধ বিরতি ট্রাম্প বললেন, লক্ষ্য এখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান

প্রশান্তি আন্তর্জাতিক ডেক্স ॥ ইসরায়েল-হামাসের নাজুক যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি বিনিময় চুক্তি কার্যকর থাকা অবস্থায়, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি এখন মনোযোগ দিচ্ছেন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটানোর দিকে। একই সঙ্গে তিনি মস্কোকে আলোচনার টেবিলে আনতে কিয়েভকে দীর্ঘ-পাল্লার অস্ত্র দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছেন। গত বুধবার (১৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় হোয়াইট হাউজ বলরুম প্রকল্পের সমর্থকদের উদ্দেশে দেওয়া এক নৈশভোজ ভাষণে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে ট্রাম্প বলেন, ‘আজ আমরা কিছু অগ্রগতি করেছি, মধ্যপ্রাচ্যে যা ঘটেছে তার কারণেই।’ মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি এ খবর জানিয়েছে।

ইউক্রেন ও গাজা যুদ্ধের অবসান ঘটানো ছিল ট্রাম্পের ২০২৪ সালের পুনর্নিরবাচন প্রচারণার অন্যতম প্রধান অঙ্গীকার। কারণ তিনি বারবার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে এই সংঘাতগুলো মোকাবেলায় ব্যর্থতার জন্য সমালোচনা করেছেন। কিন্তু তার পূর্বসূরির মতোই, ট্রাম্পও প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কারণে বাধার মুখে পড়েছেন। কারণ তিনি রুশ নেতাকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সরাসরি শান্তি আলোচনা করতে রাজি করাতে ব্যর্থ হয়েছেন। এদিকে যুদ্ধটি প্রায় চতুর্থ বছরে গড়াতে চলেছে।

তবে গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর ট্রাম্প নতুন করে আত্মবিশ্বাস দেখাচ্ছেন যে তিনি এবার রুশ আগ্রাসনের অবসান ঘটাতে কিছুটা অগ্রগতি করতে পারবেন। পাশাপাশি তিনি ইঙ্গিত দিচ্ছেন, পুতিন যদি দ্রুত আলোচনায় না আসেন, তাহলে তার ওপর চাপ বাড়াতে প্রস্তুত তিনি।

এর আগে এই সপ্তাহে জেরুজালেমে কনেসেটে দেওয়া এক ভাষণে ট্রাম্প বলেন, গাজার যুদ্ধবিরতি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এমন একটি ভিত্তি তৈরি করবে যার মাধ্যমে ইসরায়েল ও তার মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিবেশীদের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণে সহায়তা করা সম্ভব হবে। তবে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, তার প্রধান পররাষ্ট্র নীতি অগ্রাধিকার এখন ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় সশস্ত্র সংঘাতটির অবসান ঘটানো।

ট্রাম্প বলেন, ‘প্রথমে আমাদের রাশিয়ার বিষয়টা শেষ করতে হবে।’ এরপর তিনি তার বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘স্টিভ, যদি তোমার আপত্তি না থাকে, তাহলে আগে রাশিয়ার দিকেই মনোযোগ দিই, ঠিক আছে?’ পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রধান যোগাযোগ রক্ষাকারী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন স্টিভ উইটকফ।

এদিকে শুক্রবার ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যে বৈঠক হওয়ার কথা, যা হবে চলতি বছরে তাদের চতুর্থ মুখোমুখি সাক্ষাৎ।

বৈঠকের আগে ট্রাম্প বলেন, তিনি ইউক্রেনকে দীর্ঘ-পাল্লার টমাহক ক্রুজ মিসাইল বিক্রি করার বিষয়টি বিবেচনা করছেন। পুতিন শিগগিরই যুদ্ধ শেষ করতে না রাজি হন, তাহলে এই মিসাইল কিয়েভকে রুশ ভূখণ্ডের গভীরে আঘাত হানতে সক্ষম করবে।

দীর্ঘদিন ধরেই এই অস্ত্র চেয়ে আসছেন জেলেনস্কি। তিনি বলেন, এটি ইউক্রেনকে রাশিয়ার ওপর যথাযথ চাপ তৈরি করতে সহায়তা করবে যাতে পুতিন আলোচনায় বসতে বাধ্য হন।

পুতিন স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, ইউক্রেনকে টমাহক সরবরাহ করা হলে মস্কো-ওয়াশিংটনের সম্পর্ক আরও খারাপ হবে। তবু ট্রাম্প নিরুৎসাহিত হননি।

গত মঙ্গলবার ট্রাম্প বলেন, ‘জেলেনস্কি টমাহক চায়। আমাদের কাছে অনেক টমাহক আছে।’

এছাড়া জেলেনস্কি আশা করছেন, ট্রাম্পকে তিনি রাশিয়ার অর্থনীতির ওপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপে রাজি করাতে পারবেন যদিও এখন পর্যন্ত ট্রাম্প এতে অনীহা দেখিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.