দেশ এখন ঘোর আমাবষ্যার অতল গহবরে হাবুডুবু হাচ্ছে। তলিয়ে যাচ্ছে মানুষের বিভেক ও ন্যায়-নীতি। হারিয়ে যাচেছ ঐতিহ্য এবং সুখের স্মৃতি। এইসকল এখন যেনো এক বিভিষিকাময় চাপা কান্নায় পরিণত হয়েছে। যতই দিন গড়াচ্ছে ততই পরিস্কার হচ্ছে বিপদের আশংকা। পৃথিবীর চারিদিক থেকে ঘীরে ধরেছে আমাদের এই দেশটাকে। সকলের স্বার্থরক্ষা ও পূরণের নিমিত্তেই যেন দেশের বারোটা বাজার পরের সর্বনাশটুকু সুসম্পন্ন হচ্ছে। আনাড়ি হাতের ছোয়ায় সর্বনাশ হচ্ছে আমাদের পবিত্র দেশ এবং ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে মানচিত্র। মাথা উঁচু করে দাড়ানো দেশটা আজ শীড় নীচু করে বাঁচার আকুতি জানাচ্চে। তবে এও জানেনা এই আকুতি মিনতি কার কাছে। সবই দিনে দিনে পরিস্কার হচ্ছে তবে এই পরিস্কারেও কোন সুরাহার পথ ও মত খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। অনিশ্চয়তার প্লেগ্রাউন্ডে অনিশ্চয়তার খেলায় মেতেছে এই জাতি। তবে বিভেকসম্পন্ন ও শান্তিপ্রীয় মানুষগুলো এখন অন্ধ ও বোবাতে পরিণত হয়েছে। কোন বলার বা দেখার সুযোগ ও সময়কে অবজ্ঞা করে নিজে বাচার এবং সৃষ্টিকর্তার অপার মহিমার এমনকি গৌরব ও সাম্যের ক্ষমতা দেখার আশা পোশন করছে।
জুলাই সনদ, আইন এবং বিচার এই জায়গায়ই আটকে আছে আমাদের দেশের শান্তির এবং স্থিতিশীলতার এমনকি নিরাপত্তার পথ। তবে এই শান্তি যে ক্রমান্বয়ে অশান্তিতে পরিণত হয়ে যাচ্ছে তা টের পাচ্ছে এই দেশের অরাজনৈতিক খেটেখাওয়া মানুষ এমনকি রাজনীতির সমর্থক আর সমালোচকগণ। এখন যারা শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য কাজ করছে তাদের বিরুদ্ধে আরেক দল ও গোষ্ঠি এবং উন্নত দেশের ক্ষমতার লিলাখেলায় শান্তি ও স্থিতিশিলতা বিসর্জিত হচ্ছে। আগে যারা শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিয়ে কাজ করেছিল তাদের বিরুদ্ধে গিয়ে এখনের শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রত্যাশিরা অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা উপহার দিয়েছে। এই ঘ্যারাকলে পড়ে এই জাতির সর্বনাশ বা বারোটা বেজেছে। এখন আর কি বাজবে সেটাই দেখা ও শুনা এবং বিশ্লেষণের দাবি রাখে।
স্বামীহারা স্ত্রীর বা বিধবা স্ত্রীর ক্ষেত্রে যেই ঘটনা ঘটে তার হুবহু স্বীকার এখন আমাদের বাংলাদেশ। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে বাংলাদেশ এখন বিধবায় পরিণত হচ্ছে। আর সকলেই ভাসুরের ভুমিকায় এসে সর্বনাশের শেষ পেরেকটুকু ঠুকে যাচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে দেশে কয়েকস্তরের সরকার রয়েছে। আর এই কয়েক স্তরের সরকারের মধ্যে চলছে ঘোরতর বিরোধ। আর এই বিরোধের অনলে পুড়ে ছাই বা বিরান হচ্ছে দেশ ও দেশবাসি। আর কতকাল এই অবস্থার স্বীকারে আমাদের পরিণত হতে হবে বলে বলতে পারেন কি?
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এখন এমনকি আগেও সর্বনাশের মাধ্যম হিসেবে চিহ্নিত বা বিবেচিত হয়েছিল। সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গোজবে সয়লাব এবং মানুষের চরিত্র হননে উম্মাদ হয়ে হামলে পড়ছে। এই গুজব বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ঠেকানো বা মোকাবিলা করার কোন হাতিয়ার বা মরনাস্ত্র এখন আবিস্কার হয়নি। তাই এই মাধ্যমে রমরমা ব্যবসা আর ধান্ধাবাজির ক্যারেসমেটিক খেলা চলছে যা পরিকল্পিত ম্যাটিকুলাস ডিজাইন দিয়েও রক্ষা পাওয়া যায়নি এবং যাবেও না। তাই আমাদের সর্বনাশের জন্য এই গুজব বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও দায়ি বটে। একটি কথা বলতে এবং স্বীকার করতেই হবে যে, মামুন ভাইয়ের আবিস্কৃত রুচির দুর্ভীক্ষ। আসলে আমরা এখন সর্বখারা হয়ে সবকিছু হারিয়ে বা হারানোর পথে বসে রুচির দুর্ভিক্ষের চর্চায় মনোনিবেশ করে হাই-হুতেশ করছি। এই রুচির দুর্ভিক্ষও গুজব বা সামাজিক মাধ্যমের উত্থানের কারণে পরিণত হয়েছে এবং সবকিছু পচনের সর্বশেষ কাজটুকু দাপটের সঙ্গে সুসম্পর্ন করে যাচ্ছে।
এই জাতি হুজুগে পাগল। হুশ একটু দেরিতে হয় আর যখন হুশ হয় তখন আর করার অবশিষ্ট বলে কিছু থাকে না। আমরা এমন এক জাতি যে, চিলে কান নিছে শুনে কানে হাত না দিয়েই চিলের পিছনে ছুটি। যখন ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত হয়ে ফিরে আসি আর কোন কারণে কানে হাত দেয় তখন দেখি কানতো আমার জায়গাতেই আছে তাহলে কেন এত ছুটাছুটি? তখন আর কিছু করার থাকেনা শুধুই অনুশুচনা আর নিজেকে ধীক্কার দেয়া। বর্তমানে আমাদের ঠিক এই পরিস্থিতি। আর এতেও স্বস্তি নেই, মুক্তি নেই, আশা নেই। কিংকতব্যবিমূঢ় হয়ে দিশাহিন যাত্রির ভুমিকায় দিনগুজার করছি।
আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো এখন মেরুদন্ডহীন হয়ে রাজনীতির নীতি ও আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়েছে। দেশ মার্তৃকার তরে স্বার্থ এবং ক্ষমতার দ্বন্ধে অন্ধ হয়েছে। লোভ-লালসায় সকল কিছু বিসর্জন দিয়ে পথে বসেছে। উপরের দিকে তাকিয়ে কোথা থেকে সাহায্য আসবে সেই প্রত্যশায় এবং আকাঙ্খায় সুযোগ খুজছে। আর সাহায্যকারীরা বিভিন্ন লোভনীয় প্রস্তাবে সকলকিছু গ্রাস করার বা মনোবাসনা ও কামনা পূর্ণ করার খেলায় মত্ত রয়েছে। এই খেলার মাঠে সবাই প্লোয়ার আর আমরা দর্শক এবং কেউ কেউ মালিকও বটে। কিন্তু দর্শক ও মালিকগণ লোভনীয় প্রস্তাবের লালসার স্বীকারে পরিণত হয়ে নিস্তেজ এবং নি:শেষ হয়ে হালিহাতে ফিরে শুন্য থেকে বিঘ শুণ্যে পরিণত হচ্চি। এই ঘোর অমানিশায় আমরা হারিয়ে যাচ্ছি। এই দিকে কারো খেয়াল নেই আর যাদের খেয়াল করার কথা তারাও ঐ লোভ লালসায় মত্ত।
বাংলাদেশের সকল সূচক নিম্নগতিতে প্রবাহিত। জাতিসংঘ থেকে পুলিশদ্বয় ফেরত। বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশীদের প্রত্যাহার বা ফেরত এবং বাংলাদেশকে সম্মান ও শ্রদ্ধার বদলে অবহেলা ও ঘৃণায় পর্যবসীত করে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তার সুরাহা করার সামথ্য ও যোগ্য উত্তরাধিরা আজ উধাও। সুতরাং আমরা এখন কোথায়? কি আমাদের আন্তর্জাতিক পরিচয় ও সম্মানের আর শ্রদ্ধার শেষ আশা? তবে যারা আজ এই স্থানে রয়েছেন তাদেরও নিরাপত্তার প্রয়োজনে দিশেহারা। কারণ তারা দেশে ও বিদেশে কোথাও নিরাপদ নয়। তাই তারা তাদের আগামীর নিরাপত্তা নিয়ে সংকায় রয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যা যা করার তাই করে যাচ্ছে। যাদের দেশে ও বিদেশে নেই নিরাপত্তা তারা কিভাবে এই জাতিকে দেবে নিরাপত্তা এই এখন বিভেকের প্রশ্ন এবং জাতির জানার আকাঙ্খা ও দেখার স্বপ্ন। এখানে একটি ঘটনা যা সদ্য ঘটেছে তা হলো এমন- আমাদের সুব্রত বাইন সাহেবকে পুলিশ হেলমেট পরিয়ে জেল থেকে কোর্টে নিয়ে আসছিল, তখন তিনি হেলমেট পড়তে অনিহা জানিয়ে হেলমেট খুলে ফেলছিল, কয়েকবার খোলার পরে পুলিশ পিড়াপিড়ি করে নিরাপত্তার কথা যখন বলছিল ঠিক তখনই তিনি বলে বসলেন যাদের নিজেরই নিরাপত্তা নেই তারা আবার দিবে আমার নিরাপত্তা। এই কথাটি কিন্তু শতভাগ সত্য এবং বাস্তবতাও তাই স্বীকার করে। আর এর থেকে আমাদেরও শিক্ষা নেয়া উচিত। বর্তমান থেকে উত্তরণের পথে সত্যের সঙ্গে মিথ্যার লড়াইয়ে টিকে থাকার যুদ্ধে সকলেরই একসঙ্গে সত্যেও পক্ষে অবস্থান নেয়া উচিত এবং সেই সত্যকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার মহড়ায় শরিক হওয়া দরকার। মহান খোদা তায়ালা এই সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করবেনই এবং সত্যদ্বারাই এই দেশ সেই সত্যের স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হবে। এই জাতি ফিরে পাবে তার সকল অধিকার ও ন্যায্য পাওনা। তাই আসুন সত্যের পক্ষে অবস্থান স্পষ্ট করি। নিজ নিজ স্বার্থ এবং মিথ্যাকে পরিহার করি। লোভ ও লালসাকে ত্যাগ করি। সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে চলি এবং তাঁর ইচ্ছা ও অভিপ্রায়কে প্রাধান্য দিয়ে এগিয়ে যায়। জাতিকে এবং দেশকে স্বনির্ভরতায় পরিপূর্ণতা দেয়। এই ঘোর আমাবশ্যার অতল গহবর থেকে দেশকে উদ্ধার করি।