প্রশান্তি ডেক্স ॥ রাজধানী ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সাতটি কলেজ নিয়ে প্রস্তাবিত ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ নিয়ে নতুন সংকট দেখা দিয়েছে। বিদ্যমান খসড়া অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপন করা হলেই স্বতন্ত্র ও ঐতিহ্য হারাবে সাতটি কলেজ। তাছাড়া কলেজগুলোর শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশাও ভিন্ন। আর প্রস্তাবিত খসড়া অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় হলে ঢাকায় উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্র সংকুচিত হচ্ছে। এসব কারণে ঢাকা কলেজসহ অন্যান্য কলেজের স্বতন্ত্র ও ঐতিহ্য রক্ষার দাবি জানানো হচ্ছে বর্তমান ও সাবেক ছাত্রছাত্রীদের মধ্য থেকে।

অপরদিকে, নতুন করে শিক্ষার্থীরা অধ্যাদেশ দিয়ে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যতের চেয়ে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ কী হবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
গত ৫ অক্টোবর ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’র অধ্যাদেশের খসড়া প্রকাশের পর থেকে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের একাংশ আপত্তি তোলেন। সকালে কলেজ আর বিকালে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার বিষয়টি নিয়ে তীব্র আপত্তি তোলেন তারা। উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা কলেজের স্বকীয়তা রক্ষা এবং ভবিষ্যতে উচ্চমাধ্যমিক স্তর থাকবে কিনা, তা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন বলে জানান।
ঢাকা কলেজের উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করে তাদের অনিশ্চয়তার কথা জানান। অধ্যাদেশ নিয়ে আপত্তি তোলেন বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরাও।
প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়টি নিয়ে গত রবিবার (১২ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সংবাদ সম্মেলন করে ঢাকা কলেজের ঐতিহ্য রক্ষার দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী।
মীর সরফত আলী সাপ্তাহিক প্রশান্তিকে বলেন, ‘ভারতীয় উপমহাদেশের তথা বাংলাদেশের প্রাচীনতম উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা কলেজ ১৮৫ বছরের ঐতিহ্যের ধারক। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ১৮৫৭ সালে ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত। তার আগে ১৮৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা কলেজ। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এ পর্যন্ত অগণিত শিক্ষার্থীর জীবন উচ্চশিক্ষায় আলোকিত করেছে। ২০ হাজারের বেশি বর্তমান শিক্ষার্থী ও কয়েক লাখ প্রাক্তন শিক্ষার্থীর আবেগ-অনুভূতিতে একাকার হয়ে আছে ‘ঢাকা কলেজ’ নামের প্রিয় প্রতিষ্ঠানটিতে। শিক্ষা বিস্তারের ইতিহাস, ভূমিকা ও প্রভাব পর্যালোচনায় এটি একটি ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’ বা বিশ্ব ঐতিহ্য। বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সকলেই আমরা এই মহীরুহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির কার্যকর ভূমিকা ও উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করি।’
প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ১০ দফা
গত ১২ অক্টোবর ঢাকা কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলনে কলেজগুলোর স্বকীয়তা বজায় রাখতে ১০ দফা দাবি তুলে ধরেন। এগুলো হলো-
১) যেকোনও মূল্যে বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার প্রাচীনতম বিদ্যাপীঠ ঢাকা কলেজের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও স্বাতন্ত্র্য সংরক্ষণ করতে হবে।
২) এই কলেজের অবকাঠামোসহ এক ইঞ্চি জমিও অন্য কোনও প্রতিষ্ঠানের নামে লিখে দেওয়া যাবে না।
৩) বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বা ব্যক্তিস্বার্থ সংরক্ষণে এবং বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে শিক্ষা-সংকোচনমূলক কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাবে না।
৪) অক্সফোর্ড, ফেডারেল বা অন্য কোনও মডেল অনুসরণে একটি নিয়ন্ত্রণকারী বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে, যেখানে ঢাকা কলেজসহ প্রসিদ্ধ সাতটি সরকারি কলেজ স্বমহিমায় স্বাতন্ত্র্য ও ঐতিহ্য বজায় রেখে প্রতিযোগিতা মূলকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে।
৫) উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিতে হবে। তাদের ‘নিজভূমে পরবাসী’ বানানোর ষড়যন্ত্র পরিহার করতে হবে।
৬) উচ্চশিক্ষা কার্যক্রমের ক্ষেত্রে সিলেবাস শেষ করা, যথাসময়ে পরীক্ষাগ্রহণ ও দ্রুততম সময়ে ফলাফল প্রকাশ নিশ্চিত করতে হবে; শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন সেশনজটমুক্ত করতে হবে।
৭) শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত যৌক্তিক করার জন্য দ্রুত শিক্ষক সংখ্যা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। শিক্ষার বৈষম্য নিরসনে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুরূপ বিভাগপ্রতি ২০ থেকে ৩৫ জন শিক্ষক এবং প্রয়োজনীয় সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ বা পদায়ন করতে হবে। সময়ের দাবিতে নতুন নতুন চাহিদাসম্পন্ন বিভাগ খুলতে হবে।
৮) শিক্ষার্থীদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় মেধাবৃত্তি প্রদান, আবাসন সুবিধা বৃদ্ধি, খাবারে ভর্তুকি প্রদান ও শিক্ষাঋণ প্রদান করতে হবে। তাদের খেলাধুলা ও সহশিক্ষা-কার্যক্রমের সুযোগ বাড়াতে হবে। রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজে শিক্ষার্থীপ্রতি বরাদ্দ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমান করতে হবে।
৯) শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, প্রাক্তনশিক্ষার্থী, শিক্ষাবিদ, সুশীলসমাজসহ সংশ্লিষ্ট সবার মতামতের আলোকে, টেকসই ও বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।
১০) প্রায় এক লাখ ৭০ হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন এবং শত বছরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে হাইব্রিড শিক্ষা বা কোনও অপ্রচলিত শিক্ষা কাঠামোর পরীক্ষা-নিরীক্ষার উপকরণে পরিণত করা যাবে না। কোনও অবস্থাতে সমাজের নিম্নবিত্ত পরিবারের সস্তানদের, বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ বন্ধ বা সীমিত করা যাবে না।
ঢাকা কলেজ
অধ্যাদেশের খসড়ায় ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির প্রস্তাবিত মডেল স্কুলিং পদ্ধতির বিরোধিতা করে বিক্ষোভ ও সংবাদ সম্মেলন করেছে ঢাকা কলেজের উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীরা। গত রবিবার (১২ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টায় সাইন্সল্যাবে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন তারা। এ সময় শিক্ষার্থীরা জানান, কলেজকে সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি করা হলে তাদের কী হবে? তারা বলেছেন, ‘সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটিকে অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়া হোক, ঢাকা কলেজের ক্যাম্পাস ঢাকা কলেজেই থাক।’
গত সোমবার (১৩ অক্টোবর) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ঢাকা কলেজসহ সাত কলেজের অনার্স, মাস্টার্স ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’ ব্যানারে শান্তির মিছিল ও ঐক্য সমাবেশ করে। এই সমাবেশে কলেজের স্বকীয়তা বজায় রেখে সাত কলেজ সমস্যার টেকসই সমাধান দাবি করা হয়।
বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ
ঢাকার সাতটি সরকারি কলেজের জন্য প্রস্তাবিত কাঠামোয় নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করার উদ্যোগের প্রতিবাদ জানিয়েছে বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের উচ্চমাধ্যমিক স্তরের ছাত্রীরা। তারা আশঙ্কা করে বলেছেন, প্রস্তাবিত কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় হলে নারী শিক্ষার এই প্রতিষ্ঠানটি সংকুচিত হবে এবং নারী শিক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শিক্ষার্থীরা পাঁচ দফা দাবি জানায় সরকারের কাছে।
তাদের দফাগুলো হলো-
১) বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজকে ‘হাইব্রিড’ বানানোর অপচেষ্টা থেকে সরে আসতে হবে।
২) নারী শিক্ষার এই প্রতিষ্ঠানকে সমন্বিত কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় করার সব ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে। সে জন্য বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের কোনও অবকাঠামো ব্যবহার না করে স্বতন্ত্র জায়গায় স্বতন্ত্র নামে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
৩) উচ্চমাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় একসঙ্গে চলতে পারে না। এতে উচ্চমাধ্যমিক বা বিশ্ববিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সে জন্য বেগম বদরুন্নেসাকে কলেজকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা বন্ধ করতে হবে।
৪) ‘হাইব্রিড’ বিশ্ববিদ্যালয় নয়, হাইকোয়ালিটি স্বতন্ত্র জায়গায় গবেষণাভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় করা হোক।
৫) শিক্ষার মানোন্নয়নে বেগম বদরুন্নেসার সরকারি মহিলা কলেজের অবকাঠামো উন্নয়ন, আবাসন সুবিধা বৃদ্ধি, যাতায়াত সুবিধা বৃদ্ধিতে বাস বাড়াতে হবে।
সাত কলেজের দুই কলেজের মধ্যে নারী শিক্ষালয় দুটি কলেজ
সাত কলেজের স্নাতক পর্যায়ে আসন সংখ্যা ২৬ হাজারের বেশি। আর উচ্চ মাধ্যমিকে আসন সংখ্যাও ১০ হাজারের বেশি। ইডেন মহিলা কলেজ ও বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের আসনগুলো শুধু ছাত্রীদের এবং ঢাকা কলেজের আসনগুলো শুধু ছাত্রদের জন্য সংরক্ষিত। এছাড়াও সরকারি তিতুমীর কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ এবং সরকারি বাঙলা কলেজে ছাত্রছাত্রী উভয়ই ভর্তি হতে পারবে।
সরকারি এই সাত কলেজের মধ্যে পাঁচটিতে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থী রয়েছে। তবে ইডেন ও তিতুমীর কলেজে উচ্চমাধ্যমিক স্তর নেই।
বিভক্ত শিক্ষার্থীরা, ঘটতে পারে সহিংসতাও
রাজধানীর সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বর্তমানে বিভাজন তৈরি হয়েছে। বিভাজিত শিক্ষার্থীরা গত সোমবার (১৩ অক্টোবর) শিক্ষা ভবন এলাকায় পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করছেন। শিক্ষার্থীদের একাংশ প্রস্তাবিত ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’র অধ্যাদেশ দ্রুত জারির দাবিতে শিক্ষা ভবন অভিমুখে গত সোমবার (১৩ অক্টোবর) পদযাত্রা করছে। আরেক দল দাবি করছে পদযাত্রার নামে মব সৃষ্টি করে সরকারি সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করার চেষ্টা হচ্ছে এবং এ জন্য তারা শহীদ মিনারে শান্তির মিছিল ও ঐক্য সমাবেশ করবে। দুই পক্ষ আন্দোলনের ডাক দিয়ে বিবৃতিও দিয়েছে।
সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর আন্দোলনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সাত কলেজের সমন্বয়ে প্রস্তাবিত ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রণীত ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে প্রকাশিত ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অধ্যাদেশ-২০২৫’-এর খসড়া নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে নানা তর্ক-বিতর্ক হয়েছে! কিন্তু আমাদের লক্ষ্য এখন শুধুই অধ্যাদেশ।
গত সোমবার (১৩ অক্টোবর) আব্দুল গণি রোড ও কলেজ রোড সংলগ্ন শিক্ষা ভবন অভিমুখে পদযাত্রার কর্মসূচি পালনকারী শিক্ষার্থীরা অধ্যাদেশ জারির চূড়ান্ত দিনক্ষণ জানতে চান। তারা বলছেন, বর্তমান শিক্ষার্থীরা অধ্যাদেশ নিয়েই তবে পড়ার টেবিলে ফিরবেন।
অন্যদিকে, সাত কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ (অনার্স, মাস্টার্স ও এইচএসসি) ব্যানারে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর কমিটি নামে একটি ক্ষুদ্র, বিচ্ছিন্ন ও বিপথগামী শিক্ষার্থী গোষ্ঠী এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর এবং উসকানিমূলক ‘মার্চ টু শিক্ষা ভবন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আমরা সাত কলেজের অনার্স, মাস্টার্স ও এইচএসসি পর্যায়ের প্রকৃত সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের উদ্দেশ্যমূলক এ কর্মসূচি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি।
গত ১২ অক্টোবর ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীরা সায়েন্স ল্যাব মোড় দখল করে বিক্ষোভ করেন। ওই সময় শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমাদের ইন্টারমিডিয়েটের অস্তিত্ব আছে, থাকবে। কিন্তু যারা এই মডেলের বিশ্ববিদ্যালয় চাইছে, তাদের জায়গা থেকে তারা চাইতেই পারেন। কিন্তু এই মডেলের বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিকানা ঢাকা কলেজে হবে না।’
ইউজিসির বক্তব্য
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান সাপ্তাহিক প্রশান্তিকে বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব আমরা পালন করেছি। পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।’
মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য
গত ১২ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, প্রস্তাবিত ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ অধ্যাদেশের খসড়া বিষয়ে অংশীজনসহ সর্বসাধারণের মতামত গ্রহণের উদ্দেশ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের ওয়েবসাইটে গত ২৪ সেপ্টেম্বর খসড়াটি প্রকাশ করা হয়, যা ৯ অক্টোবর তারিখ পর্যন্ত উন্মুক্ত ছিল। ইতোমধ্যে ছয় হাজারেরও অধিক মতামত পাওয়া গেছে।
বর্তমানে মতামতগুলো সংকলন ও বিশ্লেষণের কাজ চলমান রয়েছে। ওই প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, শিক্ষাবিদ ও শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ অংশীজনের সঙ্গে শিগগিরই ধারাবাহিক পরামর্শ সভা আয়োজন করা হবে। অংশগ্রহণমূলক ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সবার মতামতের প্রতিফলন ঘটবে বলে আশা করা যায়।
শিক্ষা ক্যাডারদের চাওয়া
জানতে চাইলে বিসিএস জেনারেল অ্যাডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব ড. মো. মাসুদ রানা খান সাপ্তাহিক প্রশান্তিকে বলেন, ‘জগন্নাথ কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করতে গিয়ে ৩৫০টি শিডিউল পদ হারায় বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারা। তাই সাত কলেজ নিয়ে গঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের পদগুলো যেন শিক্ষা ক্যাডারের হাত ছাড়া না হয়। এই সাত কলেজে শিক্ষা ক্যাডারের শিডিউলভুক্ত এক হাজারেরও বেশি। এসব পদে শিক্ষা ক্যাডার থেকেই নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে।’
ড. মো. মাসুদ রানা খান বলেন, ‘আমাদের মূল বিষয় হচ্ছে জগন্নাথে আমাদের ৩৫০টি ক্যাডার পদ হারিয়ে গেছে। এই সাতটি কলেজে সারা দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা আসেন। সব শিক্ষার্থী তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবেন না। বিভিন্ন সেক্টরে যাবেন। অনেক সেক্টরের চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছিল। একটি বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষার পথ বন্ধ হবে।’