বেসরকারী কলেজ শিক্ষকদের ভাগ্য ঝুলে আছে নীতিমালায়

প্রশান্তি ডেক্স ॥ অন্তবর্তী সরকারের আমলে দাবি আদায়ে রাজপথে নেমে পুলিশি নির্যাতনের প্রথম শিকার হয়েছিলেন এমপিওভুক্ত বেসরকারি কলেজের এমপিওবিহীন অনার্স-মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকরা। আন্দোলন করে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা বাড়িভাড়া ১৫ শতাংশ আদায় করতে পেরেছেন। স্বতন্ত্র এবতেদায়ি শিক্ষকদেরও এমপিওভুক্তির আওতায় নিচ্ছে সরকার। যদিও পাঁচ দফা দাবি আদায়ে তারা আবার আন্দোলন শুরু করেছেন। তবে, এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের উচ্চশিক্ষা স্তরের অনার্স ও মাস্টার্সের শিক্ষকরা তাদের দাবির বিপরীতে এখনও একটি টাকাও পাননি।

দেশের ৩১৫টি বেসরকারি এমপিওভুক্ত কলেজের অনার্স-মাস্টার্স স্তরের প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষক ৩৩ বছর ধরে সরকারি কোনও অনুদান পান না। বৈষম্যবিরোধী অন্তবর্তী সরকারের আমলে তাই দাবি আদায়ে রাজপথে নেমেছিলেন শিক্ষকরা।

গত বছরের ১৫ থেকে ১৭ অক্টোবর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের সামনে টানা তিন দিন আন্দোলন করেন বেসরকারি কলেজের অনার্স-মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকরা। আন্দোলনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন লাঠিচার্জ, জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে শিক্ষকদের আন্দোলন ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ। আহত হন বেশ কয়েকজন শিক্ষক, যাদের মধ্যে শিশুসস্তানসহ নারী শিক্ষকও ছিলেন।

ওই ঘটনার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০১৮ সালের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা সংশোধন করে শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করার উদ্যোগ নেয়। তবে নীতিমালা সংশোধন হয়নি গত এক বছরেও।

জানতে চাইলে বেসরকারি কলেজ অনার্স-মাস্টার্স ফেডারেশনের সভাপতি নেকবর হোসেন আমাদের প্রতিনিধিকে বলেন, ‘আন্দোলনের পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে এমপিওভুক্তির সিদ্ধান্ত হয়, সে কারণে আন্দোলন থেকে সরে এসেছিলাম। আমরা চাই দ্রুত জনবল ও এমপিও নীতিমালা সংশোধন করে এমপিওভুক্তির ব্যবস্থা নিক। তবে চলতি অক্টোবরের মধ্যে যদি নীতিমালা সংশোধন না হয় তাহলে নভেম্বর থেকে আবার আন্দোলন কর্মসূচি দেবো।’

তিনি বলেন, ‘সরকার নীতিমালাটি চূড়ান্ত করছে বলে জেনেছি। যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তাহলে আবারও আন্দোলনে যাওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।’

বেসরকারি কলেজ অনার্স-মাস্টার্স ফেডারেশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি হারুন অর রশিদ বলেন, ‘আমরা গত বছর অক্টোবর মাসে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের সামনে আন্দোলন করেছি। আমরাই সবার আগে আন্দোলন করেছি, সবার দাবি পূরণ হলেও আমাদের দাবি পূরণ হয়নি। অন্তবর্তী সরকারের সহযোগিতার জন্যই আমরা আন্দোলন স্থগিত করে অপেক্ষা করছি। আমরা চাই দ্রুত নীতিমালা সংশোধন করে জনবল কাঠামোতে অন্তভূক্ত করে এমপিওভুক্তির ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে নীতিমালার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়েছে। বৈঠকের রেজুলেশন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় বাজেটসহ নীতিমালা অনুমোদনের জন্য অর্থবিভাগে প্রস্তাবনা পাঠানোর উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নীতিমালা সংশোধন করতে চিঠি দেওয়া হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে। তবে এখনও নীতিমালা সংশোধনের অগ্রগতি দৃশ্যমান হয়নি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উচ্চশিক্ষায় কামিল স্তরের মাদ্রাসার শিক্ষকরা এমপিওভুক্ত হলেও বেসরকারি কলেজের অনার্স-মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকরা এমপিওবঞ্চিত ৩২ বছরের বেশি সময়।

২০২৪ সালে আওয়ামী লীগের নতুন গঠন করা সরকারের শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পান ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি দায়িত্ব পাওয়ার পর (আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে) বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছিলেন, ‘উন্নয়ন ব্যয় কমিয়ে শিক্ষকদের সুযোগ সুবিধা বাড়ানো হবে। বাড়িভাড়া বৃদ্ধিসহ অন্যান্য সুবিধা দেওয়া হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে বেসরকারি অনার্স কলেজের শিক্ষকদের বেতন ভাতার ব্যবস্থা করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সম্মতি না দিলে প্রথমবার অর্ধেক এবং পরে বেতনের শতভাগ দেওয়া হবে।’ তার এই বক্তব্যের কিছু দিন পর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে।

সরকার পতনের দুই মাস পরই মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের সামনে লাগাতার আন্দোলন শুরু করেন বেসরকারি কলেজের অনার্স-মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জনবল কাঠামো অনুযায়ী ডিগ্রি স্তর পর্যন্ত পরিচালিত এমপিওভুক্ত কলেজগুলোয় ১৯৯৩ সালে অনার্স-মাস্টার্সের অনুমোদন দেয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। বিধিবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত স্কেলে কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষকদের মূল বেতন দেওয়ার শর্তে অনার্স-মাস্টাসের্র বিষয় অনুমোদন পায়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট কলেজের টিউশন ফি থেকে শিক্ষকদের বেতনভাতা দেওয়ার নির্দেশনা দেয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে। এই পর্যায়ে কলেজগুলোর জনবল কাঠামোতে স্থান পায়নি অনার্স ও মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকদের পদ। ফলে সরকারি বিধিবিধানের আলোকে এমপিওভুক্ত হওয়ার সুযোগ বঞ্চিত হন তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published.