ঢাকা এখন জিম্মি দশায় ছটফটাচ্ছে। ঢাকাকে রক্ষায় বা উদ্ধারে যেন কারো কোন পদক্ষেপ বা ভুমিকা নেই। ঢাকার কোন অভিভাবক নেই। মফস্বল শহরের উপজেলা বা জনআতঙ্কের জেলা শহরের ন্যায় এখন ঢাকা যেন তার পুরোনো ঐতিহ্য হারিয়ে এক মহা ফ্যাসাদে পড়ে নি:শেষ হয়ে যাচ্ছে। রাস্তা-ঘাট, স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত, রাজার, মার্কেট, ফুটপাত সব জায়গাই অভিভাবক শুন্যতা বিরাজ করে যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে।
রাস্তাঘাটে কোন শৃঙ্খলা নেই। নিরাপত্তা নেই, নিশ্চয়তা নেই। সময় আর মৃত্যু যন্ত্রনা যেন তাড়া করে বেড়াচ্ছে। এরই মাঝে জীবনের গতি এবং সময়ের গতি নি:শেষ হয়ে বারোটা বাজাচ্ছে। সদ্য স্বাধীন দেশের এই রূপবৈচিত্র এক আতঙ্ক সৃষ্টি করে যাচ্ছে। সদ্য আবিস্কৃত বাংলাদেশী টেসলা উল্টা-সোজা এমনকি গণবসতির মতো ছেয়ে গেছে। কোন জায়গা নেই একটু গাড়ি বা মানুষ দাঁড়ানোর জন্য। যদি কোন কারণে একটু জায়গা খুজে পাওয়া যায় সেখানে আবার হোন্ডা, সিএনজি ও সাইকেল বাহনে সয়লাভ। তাহলে এই ঢাকার ঐতিহ্য ও রক্ষাণাবেক্ষণ এবং নিয়ম-শৃঙ্খলা কি পলাতক হাসিনা নিয়ে গেছে?
অপরদিকে পরিকল্পিত নগরির স্থানে এখন অপরিকল্পিত টেসলার মহড়া এ যেন টেসলায় অবরুদ্ধ ঢাকা নগরি। তার উপর আবার উল্টা পথে জনগণ, রিক্সা (টেসলা), হোন্ডা ও কোন সময় গাড়ি পাড়ি দিয়ে জটলা এবং স্থায়ী বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। এই দশা থেকে উন্নরণের কোন উপায় অবশিষ্ট আছে বলে মনে হয় কি? দেখার মত অবশিষ্ট কেউ আছেন কি?
আরেকটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ যে, নব্য স্বাধীন দেশে আইন-কানুন, নিয়ম শৃঙ্খলা বা বিধি-বিধান নেই। শুধু আছে বিশৃঙ্খলা আর হতাশা ও একবুক যন্ত্রণা। এই ঢাকার যত রাস্তা আছে সবখানেই দুই পাশ দখল হচ্ছে ক্ষুদ্র টং এবং ভ্যানদ্বারা নিয়ন্ত্রিত ভ্রাম্যমান এবং স্থায়ী আসন গেড়ে বসা ব্যবসায়ী দ্বারা। রাস্তার ফুটপাতগুলো অনেক আগেই দখলে নিয়ে মানুষকে ফুটপাত থেকে বিতারিত করে রাস্তায় নামিয়েছে কিন্ত এখন সেই রাস্তাও দখলে। তাহলে মানুষের পায়ে হাটা চলার উপায় কি? পাশাপাশি রাস্তায় চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টিকারীরা এখন যান চলাচলেও বিঘ্ন ঘটিয়ে মরন যন্ত্রণার নতুন কারণে পরিণত হয়েছে। কেউ তো আর দেখার বা বলা এমনকি সময়োচিত পদক্ষেপ নেয়ার নেই। তাই এই দৈন্যদশায় দিশেহারা ঢাকা।
জনবসতী ঘনত্ব অনুযায়ী ঢাকা এখন প্রায় বসবাসের অনুপযোগীতায় পরিণত হয়ে যাচ্ছে। তাই এই সময় এই ঢাকায় বসতি স্থাপন বন্ধ এবং পরিকল্পনি নগরির চিন্তা চেতনায় এমনকি অতিরিক্ত লোকের সমাগম ঠেকানো ফরজে আইনে পরিণত হয়েছে। নতুবা এই ঢাকা অচীরেই বসবাসের অনুপযোগী হয়ে বন্দিদশায় পরিণত হবে।
এই সকল অনাচার এবং পরিকল্পনাহীন কর্মকান্ডের ফলে অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসা এবং ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানে সঠিক সময়ে যাতায়াত ও প্রয়োজনীয় কার্য সম্পাদনে বিঘ্ন ঘটছে। এর ফলে অনেকের জীবন বাতি নিভে গিয়ে অন্ধকারে তলিয়ে গেছে। জীবনের সকল গুরুত্বপূর্ণ কাজ ও সময় হারিয়ে যাচ্ছে; জীবন স্তব্ধ হয়ে জীম্মি দশায় পর্যবসীত হয়েছে। কেউ কি আছেন এই সকল বিষয় দেখার? খোজ-খবর নেয়া ও পদক্ষেপ বাস্তবায়নের কেউ নেই এটা বলাই এখন সহজ এবং সত্যি।
আমাদের নগর পরিকল্পনাবিদ, বুদ্ধিজীবি এবং সাধারণ মানুষ এমনকি সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ এখন ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা জরুরী। নতুবা এই ঢাকা অচিরেই বন্দিদশায় পড়ে বিকলাঙ্গ হবে। সকল হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হলে ঢাকাকে এইসকল আনাচার থেকে মুক্ত করতে হবে। মুক্ত করতে হবে ঢাকার দখল হওয়া সকল স্থান। বৈধ সকল কিছু রেখে অবৈধ সকল কিছু ঢাকা থেকে বিতারিত করতে হবে। কর্মসংস্থানের সঙ্গে যুক্ত যারা বৈধ তাদেরকে রেখেই ঢাকাকে সাজাতে হবে। নতুবা নতুন ঢাকার রূপ রস গন্ধ মৃত মানুষের পচা দুগন্ধের চেয়ে ভয়াবহ মহামারিতে পরিণত হবে।
পরিশেষে মহান খোদার নিকট কামনা করি মানুষ, এবং সৃষ্টির কল্যাণে কেউ এগিয়ে আসুক অথবা কাউকে খোদা তায়ালা এই অরাজকতা থেকে মুক্তির জন্য নিয়োজিত করুক এবং সবাইকে পরিত্রান দিক। বিশ্ব মানবতা এবং পাপ থেকে মুক্তির ত্রাত্রা হযরত ঈসার ন্যায় কাউকে বর্তমান থেকে উত্তরণের জন্য নিযুক্ত করে আমাদের মাঝে পাঠিয়ে দিন। আমরা মুক্তি চাই, স্বস্তি চাই, নিশ্চয়তা চাই, নিরাপত্তা চাই এবং মৌলিক চাহিদার সৌহাদ্যপূর্ণ সুস্পষ্ট জোগান পেতে চাই। ন্যায়-পরায়নতার ভিত্তিতে; ন্যায্যতা এবং সাম্যের অভয়ারণ্যে পথ চলতে চাই। মহান খোদা তায়ালা আমাদেরকে রক্ষা করুন এবং সামনে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিন। আমিন॥