সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দেওয়ার আগে নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন

প্রশান্তি ডেক্স ॥ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এখন কেবল যোগাযোগের মাধ্যম নয়-এটি হয়ে উঠেছে ব্যক্তিগত তথ্যের এক বিশাল ভান্ডার। আর সেই ভান্ডারেই সুযোগ খুঁজে নিচ্ছে অনলাইন প্রতারকরা। আপনার জীবনের ছোট-বড় নানা তথ্য তারা সংগ্রহ করে নিতে পারে খুব সহজেই। এরপর সেসব তথ্য ব্যবহার করে তারা আপনার পরিচয়ে প্রতারণা, ফিশিং লিংক পাঠানো বা রোমান্স স্ক্যাম চালাতে পারে।

কিন্তু কীভাবে নিজেকে রক্ষা করবেন? চলুন জেনে নিই-কী পোস্ট করা উচিত নয়, এবং কীভাবে নিজের সামাজিক মাধ্যমকে নিরাপদ রাখা যায়।

পোস্ট দেওয়ার আগে ৪টি প্রশ্ন নিজেকে করুন: অনেকের জন্য সামাজিক মাধ্যম পেশাগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কেউ হয়তো ক্যারিয়ার গড়তে চান, কেউ নতুন বন্ধু বানাতে বা কোনও শখ শেয়ার করতে চান। এসব উদ্দেশ্যে পাবলিক পোস্ট করা যায়, তবে ব্যক্তিগত জীবনের অনেক তথ্য গোপন রাখাই ভালো।

পোস্ট দেওয়ার আগে নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন:

১। কে জানবে এটা? আপনার পোস্টটি কার জন্য? যদি কেবল নিজের জন্যই লিখেন, তবে প্রকাশ্যে শেয়ার না করে ব্যক্তিগতভাবে রাখাই ভালো।

২। আমি কি চাই অচেনা মানুষ এটিকে দেখুক? মনে রাখবেন, অনলাইনে কিছুই ‘শূন্যে হারিয়ে যায়’ না। লাইক বা কমেন্ট না পেলেও অনেকেই আপনার পোস্ট দেখছে। অপরিচিতরাও এসব তথ্য ব্যবহার করে আপনার সম্পর্কে ধারণা তৈরি করতে পারে-বা আরও খারাপভাবে, প্রতারণার ফাঁদ পাততে পারে।

৩। আমি কি চাই এটি আজীবন আমার সঙ্গে থাকুক? ইন্টারনেটে কিছু একবার প্রকাশ পেলে তা মুছে ফেলা কঠিন। তাই পোস্ট দেওয়ার আগে ভাবুন, এই লেখা বা ছবি ভবিষ্যতে আপনার জন্য বিব্রতকর হতে পারে কিনা।

৪। পোস্ট দেওয়ার পর কী হতে পারে? পোস্ট থেকে আপনি কী লাভ করবেন, আর কী হারাতে পারেন- সেটা ভেবে দেখুন। ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করলে আপনি হারাতে পারেন আপনার গোপনীয়তা, নিরাপত্তা ও অজ্ঞাতনামা থাকার সুযোগ।

সামাজিক মাধ্যম সুরক্ষিত রাখার ৪টি ধাপ:-

১। প্রাইভেসি সেটিংস পরিবর্তন করুন। আপনার প্রোফাইলটি পাবলিক থেকে প্রাইভেটে নিন। নির্ধারণ করুন কে আপনার পোস্ট, ছবি বা ভিডিও দেখতে পারবে। উদাহরণস্বরূপ, ফেসবুকের প্রাইভেসি চেকআপ ও অফ-ফেসবুক একটিভিটি টুল ব্যবহার করে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন কে আপনার পোস্টে যুক্ত হতে পারবে।

২। পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করুন। সব প্ল্যাটফর্মে একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতিটি অ্যাকাউন্টের জন্য আলাদা ও শক্তিশালী পাসওয়ার্ড রাখুন এবং সেগুলো নিরাপদে সংরক্ষণের জন্য একটি পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করুন।

৩। মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন চালু করুন। অ্যাকাউন্টে অননুমোদিত প্রবেশ ঠেকাতে এটি সবচেয়ে কার্যকর ব্যবস্থা। লগইন করার সময় পাসওয়ার্ড ছাড়াও একটি অতিরিক্ত নিরাপত্তা কোড বা ডিভাইস ভেরিফিকেশন লাগবে, যা প্রতারকদের হাত থেকে আপনার তথ্য রক্ষা করবে।

৪।  ব্যবহার না করা অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলুন। যে অ্যাকাউন্টগুলো আর ব্যবহার করেন না, সেগুলো ডিলিট করে দিন। কারণ ফাঁকা বা নিষ্ক্রিয় অ্যাকাউন্ট হ্যাকারদের টার্গেটে পরিণত হয়। আপনার পুরনো ছবি ও তথ্য ব্যবহার করে তারা প্রতারণা বা ফিশিং স্ক্যাম চালাতে পারে।

যদি আপনি নিয়মিত কিছু শেয়ার করতে চান, তবে পাবলিক পোস্টের বদলে নিরাপদ মেসেজিং অ্যাপের গ্রুপ চ্যাটে শেয়ার করুন। যেমন ‘সিগন্যাল’ অ্যাপে পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে নিরাপদে যোগাযোগ করা যায় এবং স্টোরি বা ফিড শেয়ার করার সুবিধাও আছে।

আর যদি সত্যিই মনের কথা বলতে চান, তাহলে নিজস্ব ডায়েরি বা জার্নাল রাখুন—ডিজিটাল বা কাগজে-কলমে। এতে আপনার ভাবনাগুলো নিরাপদ থাকবে, অথচ বাইরের কেউ তা জানতে পারবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published.