প্রশান্তি আন্তর্জাতিক ডেক্স ॥ সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে একটি বিমানঘাঁটিতে সামরিক উপস্থিতির প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েল ও সিরিয়ার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন নিরাপত্তা চুক্তি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে ছয়টি নির্ভরযোগ্য সূত্রকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

এ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে তা হবে ইরানের ঘনিষ্ঠ সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সিরিয়ার কৌশলগত পুনর্গঠনের এক বড় ইঙ্গিত।
গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওয়াশিংটনে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার সঙ্গে বৈঠক করবেন। এটি হবে কোনও সিরীয় রাষ্ট্রপ্রধানের প্রথম ওয়াশিংটন সফর।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ঘাঁটির প্রস্তুতি সম্পর্কে জানেন এমন ছয়টি সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র এ ঘাঁটি ব্যবহার করবে ইসরায়েল-সিরিয়া চুক্তি পর্যবেক্ষণের জন্য। সূত্রগুলোর মধ্যে দুজন পশ্চিমা কর্মকর্তা ও এক সিরীয় প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা রয়েছেন।
পেন্টাগন ও সিরীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তবে এক মার্কিন প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেছেন, আমরা সিরিয়ায় আইএস (ইসলামিক স্টেট) মোকাবিলায় আমাদের অবস্থান নিয়মিতভাবে মূল্যায়ন করছি, তবে সেনা অবস্থান বা সম্ভাব্য অবস্থান সম্পর্কে মন্তব্য করি না।
একজন পশ্চিমা সামরিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত দুই মাসে পেন্টাগন একাধিক নজরদারি মিশন পরিচালনা করেছে এবং রিপোর্টে বলা হয়েছে, ঘাঁটির দীর্ঘ রানওয়ে এখনই ব্যবহারের উপযোগী।
দুজন সিরীয় সামরিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রযুক্তিগত আলোচনাগুলো মূলত লজিস্টিক, নজরদারি, জ্বালানি সরবরাহ ও মানবিক কার্যক্রমে ঘাঁটির ব্যবহারের ওপর কেন্দ্র করে হচ্ছে। তবে সিরিয়া পূর্ণ সার্বভৌমত্ব বজায় রাখবে।
এক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে সামরিক সি-১৩০ বিমান ব্যবহার করে ঘাঁটির রানওয়ে পরীক্ষা করেছে। এক নিরাপত্তারক্ষী জানান, মার্কিন বিমানগুলো পরীক্ষামূলকভাবে এখানে অবতরণ করছে।
নতুন পরিকল্পনাটি যুক্তরাষ্ট্রের লেবানন ও ইসরায়েলে গঠিত দুটি পর্যবেক্ষণ ঘাঁটির মতো হবে। ওই দুই ঘাঁটিতে ট্রাম্প প্রশাসন মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অস্ত্রবিরতি পর্যবেক্ষণ করছে।
উত্তর-পূর্ব সিরিয়াতেও কয়েক বছর ধরে মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে। সেখানে তারা কুর্দি নেতৃত্বাধীন বাহিনীকে সহায়তা করছে আইএস মোকাবিলায়। চলতি বছরের এপ্রিলে পেন্টাগন জানিয়েছিল, সেখানে সেনা সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে ১ হাজারে আনা হবে।
প্রেসিডেন্ট শারা সম্প্রতি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনও সামরিক উপস্থিতি সিরীয় রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক অনুমোদনের মাধ্যমেই হতে হবে। সিরিয়া শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বৈশ্বিক আইএসবিরোধী জোটে যোগ দেবে বলে দুই দেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, দামেস্ক সফরে গত ১২ সেপ্টেম্বর মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান অ্যাডমিরাল ব্র্যাড কুপার ও যুক্তরাষ্ট্রের সিরিয়া বিষয়ক দূত থমাস ব্যারাক প্রেসিডেন্ট শারার সঙ্গে বৈঠক করেন।
তাদের বৈঠকের পর যুক্তরাষ্ট্র এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, সিরিয়ায় আইএস দমনে শারার ভূমিকা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও সমৃদ্ধির ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়নে সহায়ক হবে। তবে সেখানে ইসরায়েলের নাম উল্লেখ করা হয়নি।
ওয়াশিংটন দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েল ও সিরিয়ার মধ্যে একটি নিরাপত্তা চুক্তি বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। সেপ্টেম্বরের জাতিসংঘ অধিবেশনে চুক্তিটি ঘোষণা করার পরিকল্পনা থাকলেও শেষ মুহূর্তে আলোচনা স্থগিত হয়।
একজন সিরীয় কূটনৈতিক সূত্র রয়টার্সকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র চাইছে এ বছরের মধ্যেই চুক্তি চূড়ান্ত হোক, সম্ভব হলে প্রেসিডেন্ট শারার ওয়াশিংটন সফরের আগেই।