প্রশান্তি ডেক্স॥ ভূমিকম্পে সারা দেশে পাঁচ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে পুরান ঢাকায় তিন এবং নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জে এক জন করে মারা গেছেন। এদিকে ভূমিকম্পে দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘরবাড়ি ধসে এবং অন্যান্য দুর্ঘটনায় হতাহতের খবরে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।

গত শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকালে ভূমিকম্পের পর কসাইটুলির কেপি ঘোষ স্ট্রিটের ২০/সি নস্বরের ভবনের রেলিং ভেঙ্গে নিচে পড়ে। এতে তিন পথচারী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের নাম-পরিচয় জানাতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় ১০ জন পথচারী আহত হয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, ভূমিকম্পের সময় হঠাৎ করে ছয়তলা ভবনের রেলিং ধসে পড়ে তিন পথচারী ঘটনাস্থলে নিহত হন। ভবনটির নিচে একটি গরুর মাংস বিক্রির দোকান ছিল। সেখানে থাকা ক্রেতা ও পথচারীরা আহত হন। ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত হন।
বংশাল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ সোহেল হোসেন বলেন, ভবন ধসের ঘটনা ঘটেনি। তবে ভবনের রেলিং ভেঙ্গে নিচে পড়েছে। ভাঙ্গা বস্তুর আঘাতে ভবনের পাশে থাকা তিনজন গুরুতর আহত হন। তাদের উদ্ধার করে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (মিটফোর্ড হাসপাতাল) নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, নিহতদের মরদেহ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে মৃত ব্যক্তিদের পরিচয় জানা যায়নি। তবে শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
এর আগে ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহজাহান শিকদার বলেন, ভবন ধসের খবর পেয়ে সদরঘাট ও সিদ্দিকবাজার ফায়ার স্টেশন থেকে দুটি ইউনিট সেখানে যায়। কিন্তু সেখানে ভবন ধসের ঘটনা ঘটেনি। পলেস্তারার কিছু অংশ ও কিছু ইট খসে পড়েছিল। এতে তিনজন আহত হন। তবে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা পৌঁছানোর আগেই আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যান স্থানীয়রা।
গুলশান ১ ভবনের কিছু টাইলস্ খসে পড়ে রাস্তায় ভীতির সৃষ্টি করে। ঐ বিল্ডিংয়ে কর্মরত শ্রমিকরা ভয়ে কাজ না করে পাওনা মজুরি না নিয়ে চলে যায়। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় বাড়িটির তেমন কোন ক্ষতি হয়নি বরং ভয়ের কারণে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।
নরসিংদীর পলাশে ভূমিকম্পের সময় মাটির দেয়াল ধসে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ছাদের কার্নিশ ধসে পড়ে তিন জন গুরুতর আহতসহ বিভিন্ন স্থানে ৪০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। নিহতের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন পলাশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনির হোসেন।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ভূমিকম্পে দেয়াল ধসে ফাতেমা নামে এক নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় নবজাতকের মা ও এক প্রতিবেশী আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। রূপগঞ্জের ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মোখলেসুর রহমান এ তথ্য জানান।
এছাড়া গাজীপুরের শ্রীপুরে ভূমিকম্পের সময় একটি পোশাক কারখানা থেকে হুড়োহুড়ি করে বের হতে গিয়ে তিন শতাধিক শ্রমিক আহত হয়েছেন। শ্রীপুর পৌরসভার গড়গড়িয়া মাস্টার বাড়ি এলাকায় ডেনিমেক লিমিটেড পোশাক কারখানায় এ ঘটনা ঘটে। স্বজনরা আহতদের গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা পঙ্গু হাসপাতাল, ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যান।
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গত শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিট ২৬ সেকেন্ডে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পটির মাত্রা ৫ দশমিক ৭ এবং উৎপত্তিস্থল নরসিংদীর মাধবদী।