সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচন দিতে ন্যাশনাল লইয়ার্স অ্যালায়েন্সের আল্টিমেটাম

প্রশান্তি ডেক্স ॥ বিগত সরকারের পতনের পর সুপ্রিম কোর্টের সব অফিস ও সেকশনে অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে শক্তিশালী বার গঠনের লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (সুপ্রিম কোর্ট বার) নির্বাচন আগামী ১০ জানুয়ারির মধ্যে আয়োজনের দাবি জানিয়েছে ‘ন্যাশনাল লইয়ার্স অ্যালায়েন্স’। অন্যথায়, সাধারণ আইনজীবীদের সই গ্রহণের মধ্য দিয়ে তলবি সভা ডেকে বর্তমান এডহক কমিটি ভেঙে দিয়ে বারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা হবে বলেও আল্টিমেটাম দিয়েছেন বক্তারা।

গত বুধবার (৩ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট বার অডিটোরিয়ামে এক উন্মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠানের বক্তারা এসব মন্তব্য করেন। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সমর্থিত ন্যাশনাল লইয়ার্স অ্যালায়েন্স এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

এসময় বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক এসএম আজমল হোসেন বাচ্চু, সদস্য সচিব এরশাদুল বারী খন্দকার, যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফা আজগর শরিফি, যুগ্ম সদস্য সচিব নাজমুস সাকিব, মুখ্য সংগঠক সাকিল আহমাদ প্রমুখ। 

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট ফারুক আহমদ, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সেক্রেটারি সিনিয়র অ্যাডভোকেট গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি এ.বি.এম রফিকুল হক তালুকদার রাজা, বিকল্পধারা বাংলাদেশ এর মহাসচিব শাহ আহমেদ বাদল, অ্যাডভোকেট আশরাফুজ্জামান প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, সুপ্রিম কোর্ট বারের একজন আইনজীবী এখানে ভোট দিলে জেলা বারে দিতে পারবেন না। আবার জেলা বারে ভোট দিলে সুপ্রিম কোর্ট বারে দিতে পারবেন না। একাধিক বারের সদস্য থাকা বিষয়ক বিধানের সংশোধনও জরুরি। আইনজীবীরা শুধু একটি সমিতিতে ভোট দিতে পারবেন এমন বিধান পুনঃপ্রবর্তনের দাবি জানান তারা।

এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট হুমায়রা নূর বলেন, যেই বার অ্যাসোসিয়েশন দখল নিয়ে ২০২২-২৪ সাল পর্যন্ত আমরা যে ন্যক্কারজনক ঘটনা দেখেছি, যার কারণে আমাদের বারের সম্মানিত সদস্যরা অপমানিত হয়েছেন, মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছেন। সেই তারাই এখন বার পরিচালনায় অভিভাবকত্বের দায়িত্ব পেয়েছেন। কিন্তু তাদের তো আজীবনের জন্য বার নিয়ন্ত্রণের জন্য লিজ দিয়ে দেওয়া হয়নি। আমরা কেউ চাইনা এই বার কয়েকটা মানুষের কাছে এই বার কুক্ষিগত না থাকুক। বারের প্রতিটি মানুষ বিজ্ঞ আইনজীবী। তাদের সম্মান নিয়ে খেলার অধিকার তাদের কে দিয়েছে? ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন (বারের সভাপতি) আপনার সঙ্গে বসে যারা বিভিন্ন রেজ্যুলেশন পাশ করে তারা কী নির্বাচিত? যাদের রুম (কিউবিক্যালস) নেই তাদের রুম না দিয়ে বিশেষ মানুষদের রুম দেয়। বারের নির্বাচন দিন। শেখ হাসিনা বা শেখ হাসিনার দালাল হয়ে যাবেন না আপনারা। আপনারা তাদের মতো একই কাতারে পড়বেন না। কোন অধিকারে আপনার বারের সদস্যদের অধিকার খর্ব করেন? যুগ্ম সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট নাজমুস সাকিব বলেন, আমাদের আজকের সবার প্রধান দাবি দ্রুত সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচন দিতে হবে। কিন্তু এখানে আরেকটা পপুলার দাবি রয়েছে ‘মেনি বার ওয়ান ভোট’ পদ্ধতি চালু করার। অর্থাৎ একজন আইনজীবী সর্বোচ্চ দুটি বারে সদস্য থাকতে পারেন। কিন্তু তারা ভোট দেবেন মাত্র একটি। ২০০৩ সালে এই পদ্ধতি চালু করেছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। কিন্তু ২০১১ সালে সেই বিধান একজনকে নির্বাচিত করার জন্য পরিবর্তন করা হয়েছিল। এছাড়াও সুপ্রিম কোর্টের অনেক আইনজীবী তাদের রাজনৈতিক প্রভাবকে ব্যবহার করে কোটের্র বিচারপতিদের ওপর প্রভাব বিস্তার করেন। আমরা চাই মেধা ও সাবমিশনের ভিত্তিতে আদালতের বিচার প্রক্রিয়া চলবে। আপনারা (বিচারপতিরা) কোনোভাবেই এসব প্রভাবে নতি স্বীকার করবেন না। সাধারণ আইনজীবীরা আপনাদের পাশে আছে। যাদের যুক্তিতর্ক ভালো তারাই আদালতের আদেশ পাবেন। পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টে অতিরিক্ত বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া বন্ধ করুন। এভাবে অতিরিক্ত বিচারপতি নিয়োগের মাধ্যমে পরবর্তী সময়ে যদি তাদের কনফার্ম না করা হয় তবে তাদের সম্মানহানি ঘটবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.