অবসরের কি কোন বয়স আছে? অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় নেই। তবে সৃষ্টিকর্তার নিয়মে এবং পৃথিবীর মানব রচিত নিয়মেও অবসরের একটি বয়স সুনিদিষ্ট করা আছে। তবে কে মানে কার কথা। যেখানে সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তা যিনি আমাদের মালিক তাঁর কথাই আমরা মানি না আর মানব রচিত নিয়মতো অনেক দূরে। তবে এই অবসর নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা এবং আপনাদের অভিজ্ঞতাও কিন্তু একই তবে ভেবে দেখা ও দৃষ্টিভঙ্গির সিমায় নিয়ে আসায় যত বিপত্তি। কেউ একটু আগে নিয়ে আসেন আর কেউ একটু পরে নিয়ে আসেন।
কেন অবসর নিতে হবে এটাও ভেবেদেখার একটি বিষয়। তবে শরীর ও মন যতক্ষণ সতেজ ও সবল ততক্ষণ আপনি বা আমি কাজ করতে পারি এবং করতে হবে। তবে সেই কাজগুলো কখনো নিজের প্রয়োজনে আবার কখনে সৃষ্টির প্রয়োজনে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির প্রয়োজনেই আমাদেরকে কাজ করতে বলেন। আর এই কারণেই তিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। তবে আমরা তাঁর অভিপ্রায় না বুঝে নিজেদের প্রয়োজনেই বেশী কাজ করি।
সৃষ্টিকর্তা নিজে কাজ করেন এবং আমাদেরকে ব্যবহার করে কাজ করান। তবে কাজভেদে আমাদেরকে অবসরেরও সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন। যারা কঠোর পরিশ্রম করে তাদের জন্য ৫০-৫৫ বছর আর যারা কম পরিশ্রম করে বরং শিক্ষা দেয় ও আল্লার সেবায় নিয়োজিত তাদের জন্য শারীরিক ও মানুষিক অক্ষমতার পূর্ব পর্যন্ত। তবে সেই ক্ষেত্রে নিজে থেকে অবসর গ্রহণ এবং উপযুক্ত লোক প্রস্তুত ও নিয়োগ করে তার অধিনে সেবা ও শিক্ষা নিয়ে যাওয়া অনেক উত্তম ও ভাল। যা সৃষ্টিকর্তা তাঁর কালামে উল্লেখ করেছেন।
আমাদের জাগতিকতায় ও মানব রচিত ইতিহাসে এবং নিয়মেও এই একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে। তবে সরকারী এবং বেসরকারী হিসেবে একটি ফারাক আছে বৈকি। তবে নিজে থেকে অবসর নেয়ার সুযোগের জায়গাগুলোতে আর অবসর নীতি মানা হচ্ছে না। বরং মৃত্যুই যেন অবসরের মানদন্ড এবং চুড়ান্ত পর্যায় বা পর্ব হিসেবে দেখা যাচ্ছে।
সরকারও এমনকি বেসরকারী অফিসগুলোতেও অবসরের বিধি ভঙ্গ করা হচ্ছে। অবসরপ্রাপ্তদের দিয়ে কাজ করানোর প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। সৃষ্টিকর্তার বাক্য বলে যৌবনের কাজ বা ইবাদই উত্তম এবং তাঁর কাছে গ্রহণযোগ্য। আর আমাদের দৃশ্যমানতায় পৌঢ় ও বৃদ্ধের কাজই এখন মুখ্য হিসেবে পরিগণিত হয়ে যাচ্ছে। এই জায়গাগুলোতে কাজ করার সময় এখনই। নতুবা নতুন নতুন বিপদের সমূহ সম্ভবনা জাগা নিয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ থাকবে না।
তরুন ও যুবাদেরকে ব্যবহারের উপযুক্ত সময় এখন। তবে অভিজ্ঞতাসম্পন্নদের সংস্পর্শে রেখে তরুন যুবাদের প্রশিক্ষণ ও প্রশিক্ষিত করা ফরজে আইনের বিধানে সংযুক্ত করা দরকার। উভয়ের প্রয়োজনে উভয়কে ব্যবহার করা দরকার। অবসরপ্রাপ্তদের ব্যবহার করুন চাকুরী নয় বরং স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে। আমাদের দেশের এবং মানুষের প্রয়োজনে অবসরপ্রাপ্তদের এখনই স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজে লাগানোর সময়। চাকুরী নয় বরং নতুনদের কাজের গতিকে আরো শানিত করার লক্ষ্যে এবং অভিজ্ঞতার পরখে নিরীখে দেখে শতভাগ সফলতার নিশ্চয়তার প্রয়োজনে এই অবসরপ্রাপ্তদের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নিয়োগ বা নিয়োজিত করে উভয় কুলই রাখা সম্ভব হবে। অবসরপ্রাপ্তরা পাবে নিশ্চিত সময় পার করে পরপারে যাওয়ার একটি সতেজ সময়।
রাজনীতি ও ইমামতিতে এমনকি সামাজিক দেন দরবারে বা সরদারীতেও অবসরের কোন সীমা বা বয়সোল্লেখ না থাকায় যত বিপত্তি। তারা নিজেরা নিজ থেকে অবসর নিতে চাননা বা অবসরোত্তর জীবন যাপন করতে চান না। এমনকি নতুনদেরকে সুযোগও দিতে চান না। বরং আমৃত্যু বা মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত চলমান কাজ চালিয়ে যেতে চান। তবে এই ক্ষেত্রেও একটি বিধি বিধান রচনা করা দরকার। রাজনীতি ও ইমামতিতে ষাটউদ্ধদের অবসর দেয়া দরকার। দেন-দরবার এবং সালিশ সরদারীতেও ষাটউদ্ধদের অবসর দেয়া দরকার। তবে এইক্ষেত্রে যারা অভিজ্ঞ এবং সক্ষম তাদেরকে তাদের অভিজ্ঞতার জন্য এমনকি নতুনদের সহযোগীতা ও পরিপক্ষতার জন্য সময়ে সময়ে দাওয়াতের মাধ্যমে সম্মানীত করা দরকার। অথবা তাদের পরামর্শ শুনা ও মানা দরকার।
বর্তমানে রাজনীতি একটি পেশা ও নেশা। আর রাষ্ট্রবিজ্ঞানের রাজনীতি একটি আদর্শ ও সেবা। সুতরাং এই দুইয়ের মধ্যে যোজন যোজন পার্থক্য বিদ্যম। তাই এখন আমাদেরকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে আগামীর জন্য আমরা কি করব। তবে সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন ঘটিয়ে তাঁর ইচ্ছা ও অভিপ্রায়কে প্রাধান্য দিয়ে অগ্রসর হলে হয়তো সকল সমস্যা দূরীভূত হবে। তাহলইে সর্বমহলের গ্রহণযোগ্য ও সার্বজনীন কল্যাণকামী কার্যক্রম সুসম্পন্ন করা যাবে।
প্রত্যেক যায়গাই গঠনতন্ত্র ও নিয়ম-নীতি রয়েছে এবং সেই অনুযায়ীই সকল কিছু পরিচালিত হচ্ছে। তবে এইক্ষেত্রে নতুন করে নিয়ম-নিতি চালু করার প্রয়োজনীয়তা অনুভুত হচ্ছে এবং অনুভব করছি। তাই সকলকেই বলছি নতুন করে বয়সের বিষয়টি আপনাদের স্ব স্ব গঠণতন্ত্রে সন্নিবেশিত করে কার্যকরি ভূমিকা রাখার ব্যবস্থা করবেন। দৃশ্যমান ফ্যাসাদ এবং বয়োজৈষ্ট্যদের সম্মানের বিষয়টি পরিস্কার করে তরুন – যুবাদের কাজে লাগাবেন। বয়োজৈষ্ঠদের পরামর্শ অভিজ্ঞতা কাজে লাগাবেন। শ্রদ্ধা ও সম্মান বিরাজমান রাখবেন।
স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহনের নীতি ও রীতির চর্চা চালু করুন। অবসরের ক্ষেত্রে রুচির দুর্ভীক্ষ কাটিয়ে উঠুন। নিজেদের সময় ও অবারিত সুযোগকে কাজে লাগান। পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র বা দেশ গঠনে ভূমিকা রাখুন। নবী ও রাসুলদের জীবনী থেকে শিক্ষা নিন। পৃথিবীতে মহিয়ান ও মহীয়সীরা এমনকি নবী ও রাসুলরা তাদের জীবদ্দশায় কতদিন কাজ করেছেন তা ইতিহাস ও কিতাবসিদ্দ। তাই আসুন আমরা ইতিহাস ও কিতাব থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের জীবন ও সমাজ এবং পরিবার আর সর্বোপরি দেশকে সাজাই। আগামীর ইতিহাসকে নতুন করে রচনা করতে ভুমিকা রাখি। পৃথিবীর সকল ক্ষেত্রে সকল আইন ও নিয়ম-নিতিকে যুগোপযোগী করে গড়ে তুলি যাতে আগামীর পৃথিবী হয় সকলের জন্য উন্মুক্ত এবং সত্য ও সুন্দরের জন্য অভয়ারণ্য। সকল ইতিবাচকতাকে প্রাধান্য দিয়ে অগ্রসর হই আর সকল নেতিবাচকতাকে প্রাধান্য দিয়ে পরিহার করে খোদায়ী স্বভাবে অগ্রসর হই। সৃষ্টির মূল রহস্যভেদে পরিচালিত হই। সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলূকাত এবং সৃষ্টিকর্তার সিফতে সৃষ্টি মানুষ তারই মত কাজ শুরু করুক এই শেষ জামানায়। চীরস্থায়ী অবসরে যাওয়ার আগে নিজেদেরকে প্রস্তুত করুক বেহেস্তী সন্তান হিসেবে এবং বেহেস্তী বাসিন্দা হিসেবে। দুনিয়ার মেহমানদারী শেষ করুক শান্তি, আনন্দ, নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তার নীরিখে এই কামনাই সকলের জন্য। মাবুদ আল্লাহ বা সৃষ্টিকর্তা আমাদরকে সহায়তা করুন এবং কবুল করুন।