ট্রাম্পকে বিচার না করার প্রতিশ্রুতি না দিলে আইসিসির ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞার হুমকি

প্রশান্তি আন্তর্জাতিক ডেক্স ॥ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে (আইসিসি) তাদের প্রতিষ্ঠাতা দলিল সংশোধন করে রিপাবলিকান এই প্রেসিডেন্ট ও তাঁর শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনও তদন্ত না করার নিশ্চয়তা দিতে বলেছে। এই দাবি না মানলে আদালতের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছে ওয়াশিংটন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আইসিসি যদি যুক্তরাষ্ট্রের এই দাবি এবং গাজা যুদ্ধ নিয়ে ইসরায়েলি নেতাদের বিরুদ্ধে তদন্ত বাতিল এবং আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে পুরোনো তদন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করার দুটি দাবি না মানে, তাহলে আরও আইসিসি কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হতে পারে এবং আদালতকেই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হতে পারে।

আইসিসির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিলে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম গভীরভাবে ব্যাহত হবে। যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে আদালতটিকে মার্কিন সার্বভৌমত্বের ওপর হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখে আসছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন কর্মকর্তা জানান, ওয়াশিংটন ইতোমধ্যে তাদের দাবি আইসিসির সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কাছে জানিয়েছে। এই রাষ্ট্রগুলোর বেশ কয়েকটি মার্কিন মিত্র। যুক্তরাষ্ট্র ২০০২ সালে গঠিত রোম সংবিধির সদস্য নয়।

এ দাবি ও নিষেধাজ্ঞার হুমকির বিষয়টি আগে প্রকাশ হয়নি। গত বছর নভেম্বরে আইসিসির বিচারকরা গাজা সংঘাতে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট এবং হামাস নেতা ইব্রাহিম আল-মাসরির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

২০২০ সালের মার্চে আফগানিস্তানে সম্ভাব্য অপরাধ নিয়ে তদন্ত শুরু করেন কৌঁসুলিরা, যাতে মার্কিন সেনাদের কর্মকাণ্ড ও অন্তর্ভুক্ত ছিল। ২০২১ সাল থেকে আদালত মার্কিন ভূমিকার তদন্তকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে না, তবে আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধও করেনি।

এসব অভিযোগ বাতিল করতে চলতি বছর আইসিসির নয়জন কর্মকর্তা, যাদের মধ্যে বিচারক ও কৌঁসুলিরা রয়েছেন, তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে আদালতকে প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া থেকে বিরত ছিল, কারণ এতে আদালতের কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হতো।

রোম সংবিধি পরিবর্তন করা অত্যন্ত কঠিন, কারণ এর জন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলোর দুই-তৃতীয়াংশের সম্মতি প্রয়োজন। আইসিসির জনসংযোগ বিভাগ জানিয়েছে, রোম সংবিধি সংশোধনের ক্ষমতা সদস্য রাষ্ট্রগুলোর হাতে। আর আদালতের এখতিয়ারে মৌলিক পরিবর্তন আনতে আরও বৃহত্তর সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রয়োজন হতে পারে।

ট্রাম্পকে বিচার থেকে অব্যাহতি দিতে যুক্তরাষ্ট্র আদালতের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে কি না এ বিষয়ে তারা মন্তব্য করেনি।

বিশ্বের স্থায়ী যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইসিসির সদস্য রাষ্ট্রের সংখ্যা ১২৫। এতে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত সব রাষ্ট্র রয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন এই আদালতের সদস্য নয়। সদস্য রাষ্ট্রের ভূখণ্ডে সংঘটিত অপরাধের জন্য ব্যক্তি, এমনকি ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রপ্রধানের বিরুদ্ধেও আইসিসি বিচার পরিচালনা করতে পারে।

মার্কিন প্রশাসন কোন অভিযোগ নিয়ে সবচেয়ে উদ্বিগ্ন তা স্পষ্ট করেনি। তবে আন্তর্জাতিক আইন অঙ্গনে ২০২৯ সালে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হতে পারে আলোচনা রয়েছে জানান ওই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, সমাধান হলো রোম সংবিধি পরিবর্তন করা। এতে স্পষ্ট হবে আদালতের এখতিয়ার নেই ট্রাম্পের বিচার করার।

সেপ্টেম্বর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী ক্যারিবীয় ও লাতিন আমেরিকার উপকূলজুড়ে কথিত মাদকবাহী নৌকার বিরুদ্ধে হামলা চালিয়ে ৮০ জনের বেশি মানুষকে হত্যা করেছে। এ হামলায় দুজন বেঁচে থাকা ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে কি না তা নিয়ে কংগ্রেস তদন্ত করছে। হোয়াইট হাউজ হামলাটিকে বৈধ বলেই দাবি করছে।

ভেনেজুয়েলায় মার্কিন কর্মকাণ্ড নিয়ে তদন্তের অনুরোধ এসেছে কি না, এ প্রশ্নে আইসিসির দুই ডেপুটি প্রসিকিউটর শুক্রবার জানান, এ ধরনের কোনও অনুরোধ তারা পাননি।কবে থেকে যুক্তরাষ্ট্র এই দাবি জানানো শুরু করেছে, তা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন ওয়াশিংটনের ওই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের সার্বিক দায়মুক্তি আদালতের মূল নীতিকে দুর্বল করবে এবং এ ধরনের পরিবর্তন আনতে হলে আদালতের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী সংস্থা অ্যাসেম্বলি অব স্টেটস পার্টিজের অনুমোদন লাগবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.