প্রশান্তি আন্তর্জাতিক ডেক্স ॥ ইউক্রেন নিয়ে শান্তি প্রক্রিয়ায় ইউরোপ ও কিয়েভ যুক্ত না হলে রাশিয়া আরও ভূখন্ড শক্তি প্রয়োগ করে দখল করবে, এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। গত বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনায় অংশ না নিলে রাশিয়া সামরিক বা কূটনৈতিক যে পথেই হোক নিজের লক্ষ্য পূরণ করবে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার সঙ্গে যেমন আলোচনা চালিয়েছে, তেমনি আলাদাভাবে কিয়েভ ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গেও যুদ্ধ অবসানের প্রস্তাব নিয়ে কথা হয়েছে। তবে কোনও সমঝোতায় পৌঁছানো যায়নি। ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা ইউক্রেনীয় ভূখন্ড ছাড়ের দাবিতে উদ্বিগ্ন এবং কিয়েভ আরও শক্ত নিরাপত্তা নিশ্চয়তা চাইছে।
বার্ষিক প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে পুতিন বলেন, ২০২২ সালে ইউক্রেনে ব্যাপক সেনা পাঠানোর পর থেকে রাশিয়া সব ফ্রন্টে অগ্রসর হচ্ছে। বিরোধী পক্ষ ও তাদের বিদেশি পৃষ্ঠপোষকেরা যদি বাস্তব আলোচনায় অংশ নিতে অস্বীকার করে, তবে রাশিয়া সামরিক উপায়ে নিজের ঐতিহাসিক ভূমি মুক্ত করবে।
রাশিয়ার দাবি, তারা বর্তমানে ইউক্রেনের প্রায় ১৯ শতাংশ ভূখন্ড নিয়ন্ত্রণ করছে। এর মধ্যে রয়েছে ২০১৪ সালে সংযুক্ত করা ক্রিমিয়া উপদ্বীপ, পূর্ব ডনবাসের বেশির ভাগ এলাকা, খেরসন ও জাপোরিজ্জিয়ার বড় অংশ এবং আরও চারটি অঞ্চলের কিছু অংশ। রাশিয়া বলছে, ক্রিমিয়া, ডনবাস, খেরসন ও জাপোরিজ্জিয়া এখন রাশিয়ার অংশ। ইউক্রেন এ দাবি মানতে অস্বীকার করেছে এবং প্রায় সব দেশই অঞ্চলগুলোকে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে বিবেচনা করে।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রেই বেলোউসভ বলেন, ২০২৬ সালের জন্য একটি লক্ষ্য হলো রাশিয়ার আক্রমণের গতি বাড়ানো। তার বক্তব্যের সময় প্রদর্শিত একটি ¯্লাইডে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে যুদ্ধের জন্য রাশিয়া মোট দেশজ উৎপাদনের ৫.১ শতাংশ ব্যয় করছে।
ইউরোপীয় নেতারা বলে আসছেন, তারা কিয়েভের পাশে আছেন এবং ইউক্রেনে যুদ্ধের জন্য রাশিয়াকে কোনও পুরস্কার দেওয়া উচিত নয়। ডনবাসে রুশ-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী ও ইউক্রেনীয় বাহিনীর মধ্যে কয়েক বছরের লড়াইয়ের পরই এই যুদ্ধ শুরু হয়েছিল।
পুতিন বলেন, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন রাশিয়াকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল এবং ইউরোপীয় রাজনীতিকেরাও একই লক্ষ্য অনুসরণ করছেন। অবশ্য ইউরোপীয় নেতারা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি ইউরোপীয় রাজনীতিকদের ‘শূকরছানা’ বা ‘তরুণ শূকর’ বলে অভিহিত করে অভিযোগ করেন, তারা ন্যাটোভুক্ত কোনও দেশে একদিন রাশিয়া হামলা করতে পারে, এমন সতর্কবার্তা দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন।
পুতিনের ভাষায়, আমি বারবার বলেছি, ইউরোপীয় দেশগুলোর বিরুদ্ধে কোনও কল্পিত রুশ হুমকির কথা মিথ্যা ও আজগুবি। কিন্তু এটি ইচ্ছাকৃতভাবেই করা হচ্ছে।
কয়েক জন ইউরোপীয় নেতা অভিযোগ করেছেন, শান্তি আলোচনায় রাশিয়ার প্রকৃত কোনও আগ্রহ নেই। একই ধরনের সমালোচনা ইউরোপের দিকেও ছুড়ে দিয়ে বেলোউসভ বলেন, ইউরোপীয় শক্তিগুলো যুদ্ধ অবসানের প্রচেষ্টা নস্যাৎ করতে চাইছে এবং কয়েক বছরের মধ্যে রাশিয়া ও ন্যাটোর মধ্যে যুদ্ধের কথা বলছে। এ ধরনের নীতি আগামী বছর, ২০২৬ সালে সামরিক অভিযান অব্যাহত রাখার বাস্তব পূর্বশর্ত তৈরি করছে।