ভুয়া ওয়েবসাইট ও অ্যাপ চিনার সহজ উপায়

প্রশান্তি ডেক্স ॥ দিন দিন অনলাইন প্রতারণা আরও জটিল ও চতুর হয়ে উঠছে। ভুয়া ওয়েবসাইট ও প্রতারণামূলক অ্যাপ এখন এমনভাবে তৈরি করা হচ্ছে, যা দেখতে হুবহু আসল প্ল্যাটফর্মের মতো। এসব ফাঁদে পড়ে ব্যবহারকারীরা অজান্তেই তাদের ব্যক্তিগত তথ্য, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিবরণ কিংবা পাসওয়ার্ড তুলে দিচ্ছেন প্রতারকদের হাতে।

একটি ভুল ক্লিকই ডেকে আনতে পারে পরিচয় চুরি, আর্থিক ক্ষতি এবং দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা ঝুঁকি। তবে কিছু সাধারণ সতর্কতা ও কৌশল জানা থাকলে সহজেই এসব প্রতারণা চিহ্নিত করা সম্ভব।

ভুয়া ওয়েবসাইট চেনার উপায় : ওয়েব ঠিকানা ভালো করে দেখুন। প্রতারকরা অনেক সময় আসল ওয়েবসাইটের নামের কাছাকাছি ডোমেইন ব্যবহার করে। যেমন একটি অক্ষর বদলে দেওয়া বা অতিরিক্ত চিহ্ন যোগ করা। তাই ওয়েব ঠিকানা (ইউআরএল) ভালোভাবে মিলিয়ে দেখুন।

বানান ও ভাষাগত ভুলে সতর্ক হোন। নামকরা প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত পেশাদার কনটেন্ট ব্যবহার করে। কোনও ওয়েবসাইটে ঘনঘন বানান ভুল, অসংলগ্ন বাক্য বা নিম্নমানের ছবি থাকলে সেটি সন্দেহজনক হতে পারে।


https না থাকলে সাবধান : যদি ওয়েবসাইটের ঠিকানা ‘https://’ দিয়ে শুরু না হয় এবং ব্রাউজার নিরাপত্তা সতর্কবার্তা দেয়, তাহলে সেখানে ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। নিরাপদ সংযোগ না থাকলে তথ্য সহজেই হ্যাকারদের হাতে চলে যেতে পারে।
অবিশ্বাস্য কম দামের ফাঁদ : দাম যদি বাস্তবতার তুলনায় অস্বাভাবিক কম হয়। বিশেষ করে নামী ব্র্যান্ড বা দামী পণ্যের ক্ষেত্রে তাহলে সেটি প্রতারণার ফাঁদ হতে পারে।

অফারের বার্তা: “মাত্র একটি পণ্য বাকি”, “অফার শেষ হতে আর ৫ মিনিট” এ ধরনের বার্তা বা রিসেট হওয়া কাউন্টডাউন টাইমার দিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করা হয়। এগুলো সাধারণত প্রতারণার কৌশল।

ব্যবসায়িক তথ্যের অভাব : যদি কোনও ওয়েবসাইটে প্রকৃত ঠিকানা, কাস্টমার কেয়ার নম্বর বা নিবন্ধিত ব্যবসায়িক তথ্য না থাকে, কিংবা কোম্পানির ইমেইলের বদলে জিমেইল বা ইয়াহু ব্যবহার করা হয় তাহলে সেটি বড় সতর্ক সংকেত।

ভুয়া অ্যাপ শনাক্ত করার উপায়: অ্যাপের অনুমতি যাচাই করুন। অ্যাপ ইনস্টল করার আগে সেটি কী কী অনুমতি চাইছে তা ভালোভাবে দেখুন। একটি সাধারণ অ্যাপ যদি অপ্রয়োজনীয়ভাবে কন্টাক্ট, কল লগ বা ফোনের অবস্থা জানার অনুমতি চায়, তাহলে সেটি ডেটা চুরির উদ্দেশ্যে তৈরি হতে পারে।

রিভিউ পড়ুন, তবে সতর্কভাবে: শুধু বেশি ভালো রেটিং দেখেই বিশ্বাস করবেন না। অনেক সময় ভুয়া বা কেনা রিভিউ দেওয়া হয়। নেতিবাচক মন্তব্যে যদি প্রতারণা, অতিরিক্ত বিজ্ঞাপন বা অস্বাভাবিক আচরণের কথা বলা থাকে, তাহলে সাবধান হওয়া জরুরি।

ডাউনলোড সংখ্যা রিভিউ মিলিয়ে দেখুন : কোনও অ্যাপের ডাউনলোড সংখ্যা অনেক হলেও রিভিউ খুব কম থাকলে সেটি সন্দেহজনক হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে কৃত্রিমভাবে ডাউনলোড সংখ্যা বাড়ানো হয়।

অ্যাপ কতদিন ধরে বাজারে আছে দেখুন : নতুন অ্যাপগুলো অনেক সময় পুরোপুরি পরীক্ষিত হয় না। কিছু ক্ষতিকর অ্যাপ প্রথমে নিরীহ থাকলেও পরে ক্ষতি করে। প্রয়োজন না হলে কিছুদিন অপেক্ষা করে রিভিউ পরিস্থিতি দেখাই ভালো।

গুগল প্লে প্রটেক্ট চালু রাখুন : অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীদের জন্য গুগল প্লে প্রটেক্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এটি অ্যাপ ইনস্টলের আগে যাচাই করে এবং নিয়মিত ফোন স্ক্যান করে। চাইলে অতিরিক্ত সুরক্ষার জন্য নির্ভরযোগ্য অ্যান্টিভাইরাস অ্যাপও ব্যবহার করা যেতে পারে।

সতর্কতাই সেরা সুরক্ষা : অনলাইন জগতে নিরাপদ থাকতে প্রযুক্তিগত জ্ঞান যতটা দরকার, তার চেয়েও বেশি দরকার সচেতনতা। ওয়েবসাইট বা অ্যাপ ব্যবহারের আগে একটু সময় নিয়ে যাচাই করলে বড় ধরনের প্রতারণা থেকে নিজেকে সহজেই রক্ষা করা সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published.