প্রশান্তি আন্তর্জাতিক ডেক্স ॥ চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্ধিতায় নজিরবিহীন এক নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। এ বাস্তবতায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) দ্রুত সংস্কার না করলে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে পড়বে। নিরাপত্তা, জ্বালানি, প্রযুক্তি ও বাণিজ্যে বাড়তে থাকা চ্যালেঞ্জের মুখে এ সতর্কবার্তা দিয়েছে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ও জেপিমরগান চেজের প্রধান নির্বাহী জেমি ডাইমনের নেতৃত্বে প্রণীত একটি প্রতিবেদন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

সরকার, ব্যবসা ও নাগরিক সমাজের নেতাদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে তৈরি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাঠামোগত পরিবর্তনের সমাপতনে রাষ্ট্র, বাজার ও প্রতিষ্ঠানগুলোর চরিত্র বদলে যাচ্ছে। এর ফলে যেসব দেশ ও জোট একসময় নিরাপত্তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করত এবং একই সঙ্গে চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়াত, তারা নতুন ঝুঁকির মুখে পড়ছে।
১৯৯৭ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থাকা টনি ব্লেয়ার এবং জেপিমরগান চেজের প্রধান নির্বাহী জেমি ডাইমন বলেন, প্রতিরক্ষা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে অগ্রাধিকার দিতে ইউরোপকে আরও গভীর সমন্বয়ের পথে যেতে হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিজ শক্তিতে দাঁড়াতে না পারলে যুক্তরাষ্ট্র বা চীনের সঙ্গে পদ্ধতিগত প্রতিযোগিতা সামলানো আরও কঠিন হবে। সংস্কার ঐচ্ছিক নয়, প্রাসঙ্গিক থাকতে এটি অপরিহার্য।
এমন বক্তব্য এসেছে এমন এক সময়ে, যখন ইইউ ইউক্রেনের অর্থায়ন এবং নিয়মভিত্তিক অর্থনৈতিক সম্পর্কের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপট নিয়ে করণীয় নির্ধারণে শীর্ষ বৈঠক করছে। একই সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলসহ বিভিন্নভাবে ইইউর ওপর চাপ বাড়াচ্ছেন।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ফন ডার লিয়েন বলেছেন, ইউরোপকে সংস্কার করতে হবে এবং নিজের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে। ইইউ সমর্থকেরা উল্লেখ করেন, বৈশ্বিক জিডিপিতে ইউরোপের অংশ কমলেও যুক্তরাষ্ট্রও একই প্রবণতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, নতুন ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় ভারত ও উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর মতো মাঝারি শক্তির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রাজনৈতিক পপুলিজমের উত্থান বিশ্বব্যবস্থাকে নড়বড়ে করে তুলছে বলেও উল্লেখ করা হয়।
‘ওয়ার্ল্ড রিওয়ার্ড: ন্যাভিগেটিং অ্যা মাল্টি-স্পিড, মাল্টিপোলার অর্ডার’ শীর্ষক প্রতিবেদনের লেখক আলেকজান্ডার জর্জ বলেন, অতীতে মানুষ দিকনির্দেশনার জন্য ইতিহাসের উদাহরণে তাকাতে পারত। আমরা এখন এমন এক নতুন বিশ্বে বাস করছি, যা আগে কখনও ছিল না। এটা যেন থ্রিডি দাবার বোর্ড।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা এখনও টিকে আছে, তবে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশটির সবচেয়ে বড় হুমকি অভ্যন্তরীণ, উচ্চ ঋণ মোকাবিলা করাও এতে কঠিন হয়ে পড়ছে। অন্যদিকে, জনসংখ্যা ও ঋণসংকট সত্ত্বেও প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারবে কি না, তার ওপর চীনের গতিপথ নির্ভর করবে।
মাঝারি শক্তিগুলোর ক্ষেত্রে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়া থেকে তেল কেনার প্রতিক্রিয়ায় ভারতের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্ক বহুমুখী জোটনীতির সীমাবদ্ধতা দেখিয়েছে। আবার সংযুক্ত আরব আমিরাত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রযুক্তিগত সম্পর্ক জোরদার করায় বোঝা যাচ্ছে, প্রযুক্তির ক্ষেত্রে দেশগুলোকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বেছে নিতে হচ্ছে।
জেপিমরগান চেজ ও টনি ব্লেয়ার ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল চেঞ্জ যৌথভাবে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। জেপিমরগান চেজ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে ১০ বছরে ১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের সহায়তা পরিকল্পনা শুরু করেছে। টনি ব্লেয়ার জেপিমরগানের আন্তর্জাতিক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, যা প্রতিষ্ঠানটিকে কৌশল ও ভূরাজনীতি বিষয়ে পরামর্শ দেয়।