দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং আগামীর বাংলাদেশ

Agami bangladesবাআ॥ আমাদের জীবনে সুস্পষ্টতা নাই। আমরা যে কী করিতে পারি, কত দূর আশা করিতে পারি, তাহা বেশ মোটা লাইনে বড় রেখায় দেশের কোথাও আঁকা নাই। আশা করিবার অধিকারই মানুষের শক্তিকে প্রবল করিয়া তোলে। আশা করিবার ক্ষেত্র বড় হইলেই মানুষের শক্তিও বড় হইয়া বাড়িয়া ওঠে। কোনো সমাজ সকলের চেয়ে বড় জিনিস যাহা মানুষকে দিতে পারে তাহা সবার চেয়ে বড় আশা। সেই আশার পূর্ণ সফলতা সমাজের প্রত্যেক লোকেই যে পায় তাহা নহে; কিন্তু নিজের গোচরে এবং অগোচরে সেই আশার অভিমুখে সর্বদাই একটা তাগিদ থাকে বলিয়াই প্রত্যেকের শক্তি তাহার সাধ্যের শেষ পর্যন্ত অগ্রসর হইতে পারে। একটা জাতির পক্ষে সেইটাই সবার চেয়ে মস্ত কথা। (রবীন্দ্র রচনাবলি, ত্রয়োদশ খন্ড, ‘লক্ষ্য ও শিক্ষা পৃ. ৬৯৯)।
রবীন্দ্রনাথ বরাবরই এই আশার কথা বলে গেছেন। আমাদের জাতি গঠনে তাঁর এই আশাবাদী কথা, গান, লেখা আমাদের যুগে যুগে অনুপ্রাণিত করেছে। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও রবীন্দ্রনাথের গান ও রচনাবলির বড় ভক্ত ছিলেন। যখনই জেলে গেছেন রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের বই সঙ্গে নিয়ে যেতেন। মনের ওপর যখন হতাশা ভর করতে চাইত, তখন তিনি রবীন্দ্রনাথের আশাজাগানিয়া কবিতা আওড়াতেন। ‘কারাগারের রোজনামচা’য় ২৭ জুলাই ১৯৬৬ তিনি লিখেছেন, ‘কবিগুরুর কথাগুলো স্মরণ করে একটু স্বস্তি পেলাম।’ সেই কথাগুলো ছিল :
বিপদে মোরে রক্ষা করো
এ নহে মোর প্রার্থনা
বিপদে আমি না করি যেন ভয়।
বিপদকে তিনি কোনো দিন ভয় করেননি বলেই অগণিত মানুষের ভরসার কেন্দ্রে পরিণত হতে পেরেছিলেন। নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও সারা বাংলাদেশে তিনি মুক্তির আশা ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ তিনি একই সঙ্গে বাঙালির কষ্ট, ক্ষোভ ও আশার কথা বলেছেন। ‘এ দেশকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ’, তিনিই বলতে পারেন যার মনে রয়েছে আশার বিশাল ভান্ডার। পুরো মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে তাঁর দেওয়া সেই অফুরন্ত আশা ও ভরসাকে পুঁজি করেই। স্বাধীন দেশের দায়িত্ব নিয়েও তিনি কখনো হতাশার বাণী ছড়াননি। বরং যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতি, সমাজ, প্রশাসন পুননিরমাণে ব্রতী হয়েছেন বিপুল আশা ও উদ্দীপনার সঙ্গে। অতি অল্প সময়ে দেশের সংবিধান, প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, শিক্ষানীতি, শিল্পনীতি, কৃষিনীতি, মহাকাশনীতি, পররাষ্ট্রনীতিসহ সব খাতেই আশার স্বপন বুনে গেছেন। সেই আশার ওপর ভর করে তাঁরই কন্যার হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছে আজকের দ্রুত অগ্রসরমাণ বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী নীতি-ভাবনায় যেমন সাধারণ মানুষের কল্যাণ ছিল, কেন্দ্রে তেমনি তাঁর কন্যার উন্নয়ন কৌশলেরও মূলে রয়েছে তাদের সামগ্রিক কল্যাণ। বঙ্গবন্ধুকন্যাও একজন আশাবাদী দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়ক। বহু দূরের বিষয়গুলো তিনি ঠিক ঠিক দেখতে পান বর্তমানে দাঁড়িয়েই। তাই যতই দিন যাচ্ছে নানামুখী তাৎপর্যপূর্ণ নীতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ বঙ্গবন্ধুকন্যার শাসনামল এক অনন্য বৈশিষ্ট্য হিসেবে স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হচ্ছে।
তিনি যে একজন ‘ভিশনারি’ রাষ্ট্রনায়ক কদিন আগে একনেকে শতবর্ষী বদ্বীপ পরিকল্পনা পাস করে তার প্রমাণ রেখেছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের আঘাতে জর্জরিত বাংলাদেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদি এই পরিকল্পনার মাধ্যমে নদীভাঙন, নদীশাসন, নদী ব্যবস্থাপনা, নগর ও গ্রামে পানি সরবরাহ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি একটি মাটি, মানুষ ও পানির সুব্যবহারের সমন্বিত দীঘমেয়াদি পরিকল্পনা। নদীমাতৃক বাংলাদেশের সম্ভাবনাকে সম্পূর্ণ রূপে কাজে লাগানোর অভিপ্রায়ে নেদারল্যান্ডসের পানি ব্যবস্থাপনা অভিজ্ঞতাকে মাথায় রেখে এই পরিকল্পনা করা হয়েছে। তিন লাখ কোটি টাকার এই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ফলে বছরে আরো দেড় শতাংশ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উপকূল, হাওর, বরেন্দ্র, ভাঙনপ্রবণ নদীর মোহনা ও চর এবং দ্রুত বর্ধিষ্ণু নগরাঞ্চলে যেসব ঝুঁকি সৃষ্টি হচ্ছে সেসব মোকাবেলার জন্য এই পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। একদিকে নদীর মূল চ্যানেলে ক্যাপিটাল ড্রেজিং এবং অন্যদিকে নতুন ভূমি প্রাপ্তির কথা মাথায় রেখে নদীভাঙনের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা এবং গভীরতর নদীপথে সস্তায় পণ্য ও মানুষ চলাচলের সুব্যবস্থা করাই এই পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য। পানিসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ছাড়াও এই পরিকল্পনায় ভূমি, কৃষি, জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ, পানি, খাদ্য, নিরাপত্তা, ‘ইকোলজি’ সংরক্ষণ করার কথা বলা হয়েছে। এর ফলে টেকসই বাড়তি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
সমন্বিত নীতি প্রণয়ন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের বাধাগুলো চিহ্নিত করে এই পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। অস্বীকার করার উপায় নেই যে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির বিচারে সম্মুখ সারির দেশ বাংলাদেশ। বিচ্ছিন্ন কিছু প্রকল্প হাতে নিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা মোটেই সম্ভব নয়। তাই এই মহাপরিকল্পনা। নিঃসন্দেহে এর জন্য প্রচুর অর্থ লাগবে। তাই সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তি খাতকেও এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিনিয়োগ করতে হবে। এর ফলে ব্যক্তি খাতেরও প্রচুর আয়-উন্নতি হবে। আর ৮০টির মতো যে প্রকল্প এ জন্য গ্রহণ করা হয়েছে, সেগুলোর বাস্তবায়নে ব্যক্তি খাত ও সামাজিক খাতকেও এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে এই পরিকল্পনার জন্য ক্রমপরিবর্তনশীল পরিবেশের তথ্য সংগ্রহ, জ্ঞানভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মডেল—বিল্ডিং ও গবেষণা শুধু সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সম্ভব নয়। ব্যক্তি খাত ও অলাভজনক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কেন্দ্র, দেশি-বিদেশি পরামর্শকসহ নানা ধরনের অংশগ্রহণকারীর তৎপরতায় এটি এক জীবন্ত পরিকল্পনা হিসেবে বেড়ে উঠবে। কেননা প্রতি পাঁচ বছর পর পর এই পরিকল্পনার জন্য তথ্য হালনাগাদ করতে হবে। অসংখ্য বিশেষজ্ঞের সম্মিলিত জ্ঞানের ফসল এই বদ্বীপ পরিকল্পনা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে তৈরি হয়েছে এই বিশাল পরিকল্পনা। পরিকল্পনা কমিশনের ভূমিকাও ছিল প্রশংসনীয়। একে আরো অর্থবহ ও টেকসই করতে হলে প্রতিনিয়ত বিশেষজ্ঞ ছাড়াও প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, এনজিও, ব্যক্তি খাতের প্রতিনিধি ও ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষের সঙ্গে নিরন্তর আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। এই পরিকল্পনা সফলভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এক অনন্যসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপনে সক্ষম হবে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সারা বিশ্বে নিজস্ব অর্থে নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে তার নৈতিক অবস্থান বেশ সুদৃঢ় করেছে। এই বদ্বীপ পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের কৌশল নির্ধারণ করে বাংলাদেশ তার অবস্থান আরো নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেল।
শুরুতেই বলেছিলাম যে বঙ্গবন্ধুকন্যা অনেক দূরে তাঁর দৃষ্টিকে প্রসারিত করতে পারেন। ঠিক যেমনটি তিনি করেছিলেন ২০০৮ সালে ‘দিনবদলের সনদ’ গ্রহণ করে। সে সময় তিনি দেশবাসীকে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। অনেকের সন্দেহ ছিল। অনেকে চুপি চুপি হেসেছেনও। কিন্তু আজকের ডিজিটাল সমাজ ও অর্থনীতিকে কি কেউ অস্বীকার করতে পারছেন? না, পারছেন না। গত এক দশকে দূরদর্শী শেখ হাসিনা দুটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে দেখিয়ে দিয়েছেন যে ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়। অস্বীকার করার তো উপায় নেই যে অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনের ভিত্তি তিনি এরই মধ্যে সুদৃঢ়ভাবে স্থাপন করে ফেলেছেন। আর তাঁর এই উন্নয়ন কৌশলের মূল কথাই হচ্ছে : এক. দ্রুত প্রবৃদ্ধি, তবে তা হতে হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক; দুই. ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, তবে প্রযুক্তিকে জানাতে হবে স্বাগত; তিন. স্বয়ম্ভর তবে অন্য খাতের সঙ্গে গড়তে হবে অংশীদারত্ব। এই কৌশলেই তিনি ২০১০-২০২১ সালের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা, ২০১১ সাল থেকে পর পর দুটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং ২০১৫ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের সুদৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।
জনগণের ও সরকারের উদ্ভাবনী শক্তি, রাষ্ট্রবহির্ভূত নানা খাতের অংশগ্রহণে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং সর্বোপরি সামাজিক দায়বদ্ধ উন্নয়নের এক সুদূর প্রসারিত শক্ত পাটাতন এই ১০ বছরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঠিকই গড়ে তুলেছেন। আমরা আশান্বিত এই কারণে যে এই ধারার উন্নয়নের সুফল আমরা এরই মধ্যে পেতে শুরু করেছি। চলতি অর্থবছর শেষে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ২০ শতাংশের নিচে নেমে আসবে, গড় জীবনের আয়ু সাড়ে ৭২ বছরের বেশি হবে, মাছে-ভাতে বাঙালি আরো বেশি স্বস্তিতে থাকবে। এই পাটাতনের ওপর ভর করেই গড়ে উঠবে আগামীর বাংলাদেশ। ওই বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু যেমনটি বলেছিলেন, ‘মায়েরা হাসবে, শিশুরা খেলবে।’ এরই মধ্যে বাংলাদেশ কৃষিতে অসাধ্য সাধন করেছে। আবাদি জমি কমলেও দ্রুত যন্ত্রের ব্যবহারে উৎপাদনশীলতা বেড়েছে। কৃষিতে বহুমুখীকরণ ঘটেছে। মাছ, সবজি, চাল উৎপাদনে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। ৯৫ শতাংশ জমি এখন যন্ত্রে চাষ হয়। তরুণ, শিক্ষিত কৃষক এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আধুনিক মূল্য সংযোজিত কৃষি। এই ১০ বছরে কৃষিঋণের পরিমাণ আড়াই গুণ বেড়েছে। প্রবাসীদের আয় নয়া কৃষিতে যুক্ত হচ্ছে। প্রাণিসম্পদের ব্যাপক উন্নতি চোখে পড়ার মতো। এবারের ঈদুল আজহায় বিদেশি গরু আমদানি হয়নিই বলা চলে। মাছে-ভাতে বাঙালির সামনে অপার সম্ভাবনা হাতছানি দিচ্ছে। পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনীতির চাঙ্গাভাবের কারণে গ্রামীণ মজুরি বাড়ছে। অসংখ্য খুদে উদ্যোক্তা গড়ে উঠেছে। তাই দারিদ্র্য কমে গেছে। চুক্তিভিত্তিক কৃষিতে বর্গাচাষিদের অবস্থানও শক্তিশালী হয়েছে। গ্রামীণ নারীর ক্ষমতায়ন ঘটেছে। গ্রামে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা বেশি বেশি স্কুল-কলেজে পড়ছে। তারা ভালো খাচ্ছে। কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসা পাচ্ছে।
এই ১০ বছরে বস্ত্র, চামড়া, সিরামিক, ওষুধ, পাটশিল্পের আশানুরূপ অগ্রগতি ঘটেছে। পর পর দুদুবার ক্ষমতায় থাকার কারণে শেখ হাসিনার সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিপ্লব সাধন করেছে। বিগত ১০০ বছরে যেখানে মাত্র পাঁচ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে, সেখানে গত মাত্র ১০ বছরে এর তিন গুণেরও বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হযেছে।
একইভাবে বস্ত্র খাতকে সবুজায়নসহ শিল্প খাতের ব্যাপক উন্নতি করা গেছে। এই প্রক্রিয়া আরো জোরদার হচ্ছে। তা সত্ত্বেও আমাদের সামনে রয়েছে অনেক চ্যালেঞ্জ। প্রতিবছর ১৬ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জ্বালানি খাতকে আরো বেশি সবুজায়ন, রপ্তানি খাতকে বহুমুখী করা ও ইউরোপ-মার্কিন বলয়ের বাইরে নিয়ে যাওয়া, ২০৩০ সালের মধ্যে কৃষি উৎপাদন দ্বিগুণ করা, দেশি বাজার আরো প্রসারিত করা, খেলাপি ঋণের দুর্বিষহ বোঝা লাঘব করে আর্থিক খাতকে স্বচ্ছ ও স্থিতিশীল রাখা, ই-কমার্স/এফ-কমার্সসহ ব্যবসা-বাণিজ্যকে আরো ডিজিটাল করা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের জন্য প্রশিক্ষণ, অর্থায়ন ও বাজার সম্প্রসারণ করা, ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগকে সুগম করা, জলবায়ু সহনীয় উন্নয়নপ্রক্রিয়া আরো জোরদার করার মতো অনেক চ্যালেঞ্জই মোকাবেলার জন্য আমাদের নিজেদের প্রস্তুত রাখতে হবে।
আশার কথা, আমাদের দূরদর্শী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য পানি, বিদ্যুৎ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য শিল্পায়নসহ আগামীর বাংলাদেশ নির্মাণে এরই মধ্যে বাস্তব পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল, রূপপুর আণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, বিশেষ শিল্পাঞ্চল গড়াসহ অবকাঠামো উন্নয়নে অভূতপূর্ব কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। নতুন প্রজন্মের উদ্যোক্তা তৈরির জন্য প্রশিক্ষণ, অর্থায়ন, বিনিয়োগবান্ধব নীতি-কৌশল গ্রহণে তাঁর সরকার সদা তৎপর। নিঃসন্দেহে অপরিকল্পিত নগরায়ণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা মোটেও সহজ কাজ নয়। তবে দূরদর্শী প্রধানমন্ত্রী গ্রামগুলোতে পরিকল্পিত আবাসস্থল গড়ে তোলা, ঢাকার আশপাশে স্মার্ট উপনগর গড়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। আমরা যদি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রেখে সামাজিক শান্তি অক্ষুণ্ন রেখে ওপরে উল্লিখিত পরিকল্পনাসহ বাস্তবায়নে একাগ্রচিত্তে নিরবচ্ছিন্নভাবে এগিয়ে যেতে পারি, তাহলে নিশ্চয় ২০৪১ সাল নাগাদ সমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশ গড়তে সক্ষম হব।
লেখক: ড. আতিউর রহমান; অর্থনীতিবিদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভনর

Leave a Reply

Your email address will not be published.