জেলখানার দিনগুলি

jailhanar-dingolo-1[1]চলমান…

অফিসের কাজের জন্য প্রতিনিয়ত ব্যাকুল হয়ে আনচান আনচান করে কিন্তু কোন সুযোগ না থাকায় বেদনাহত হয়ে মোনজাত করে যাচ্ছিলাম। আমি আমার সহকর্মীদের নিয়া ক্ষমা চাইতে ব্যকুল হয়ে ছিলাম আর সুযোগ চেয়ে খোদার কাছে প্রার্থনা করছিলাম। জেল খানায় প্রার্থনা করা বা এবাদত করা সম্পূর্ন অবৈধ্য পরিবেশ কিন্তু সুযোগ নিয়ে চেষ্ঠা করে যাচ্ছি যেন অন্তত খোদার সান্নিধ্যে থাকা যায়। তবে দিনের এবং রাতের বেশীর ভাগ সময়ই আমি আমার পরিবাবের এবং অফিসের কথা চিন্তা করে বিষন্ন হয়ে পড়ি আর মোনাজাত করে শক্তি সঞ্চয় করি। মাঝে মাঝে যখন দেখা আসে তখন নিজেকে অপরাধী বোধ থেকে ছোট মনে হয় এবং মুক্তির বানি শোনার আশায় ও অফিস এর কাজ এবং পরিবারের সদস্যদের খবর পাওয়ার আশায় ব্যাকুল থাকি। আমার কাছে মনে হয় প্রতিটি মিনিট যেন এক হাজার বছরের সমান। কোন কাজ নেই শুধু বসে থাকা আর মোনাজাত করা। মোনাজাতেও বাধা আছে। জেল কোড মানা এবং সেই অনুযায়ী চলা একটু জটিল। নইলে কেস টেবিলে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন। অলিখিত নিয়মেই বেড়াজালে সবসময় বদ্ধ কুটিরে আবদ্ধ থাকতাম আর মান সম্মান নিয়ে ভাবতাম। অস্থিরতাই যন্ত্রনায় ছটফট করতাম কখন ৩টা বাজবে ৩টার সময় এক ঘন্টা পাওয়া যায় জেল থেকে বের হওয়ার। আর ঐ সময়টুকু জেলের ভিতরের মাঠে যাওয়া যায়। সেখানে গিয়ে হাটাচলা এমনকি অনেক বন্দিদের বন্ধিদশার কথা এমনকি অভিজ্ঞতা ও মুক্তি পাওয়ার কথা শোনা যায়।
অফিস ছেলে মেয়ে স্ত্রী সহকর্মী মা বাবা বন্ধু বান্ধব ও আত্মীয় স¦জন সহ অসংখ্য গুণগ্রাহীর কথা মনে পড়ে এবং নিজের নামের আগে বন্দী উপাধী যুক্ত হওয়ায় নিজেকে জঘন্য অপরাধী ও পাপি মনে হয়। কত অসহায় তা বুঝার সুযোগ হয় এই জেলপরিবেশে। হতাশার মধ্যে সাময়িক আনন্দের জন্য বিখ্যাত সস্ত্রাসী (মিরপুর) বোমা কালুর জেল নির্ভর বাস্তব সত্য গান। তার গান শুনে প্রাণ ছুয়ে যায় এবং ট্যালেন্ট নিয়ে ভাবতে সময় পায় ও আল্লাহকে শুকরিয়া জানাই। প্রায়ই বিভিন্ন হাজতিরা আমার রুমে এসে শান্তনা দেন। বাড়ীর খবর ও অফিসের খবর শোনার জন্য মনটা ব্যাকুল হয়ে থাকে। যখন কেউ আসত তখন একটু ভাল লাগত এবং মুক্তির বানী শুনতে মনে চাইত। কিন্তু বাস্তবে তা না দেখে হাতাশা আরো বেড়ে যেত। অনেক সময় বন্ধিরা আমাকে সঙ্গ দিত। তাদের অভিজ্ঞতা ও কষ্ঠের কথা শুনে শান্তনা দেয়ার ভাষাও হারিয়ে ফেলতাম। বিশেষ করে আওয়ামিলীগ এর সক্রিয় কর্মী হওয়া সত্ত্বেও তাদের এই জেল বিনা অপরাদে মেনে নেয়া যায় না। বিডিআর জুয়েল ভাই, জুলফিকার ভাই, আল আমীন ও মীরকান এবং সাইফুল সহ আরো অনেকেই। বিডিআর সাইদ ভাই এর কাছ থেকে কিছু সামগ্রী ক্রয় করে পরিচয় হয় এবং তার সহযোগীতা পেয়েছি। কয়েদি বন্দি রানা ভাই এর সহযোগীতাও পেয়েছি। হতাশার মাঝে সাময়িক শান্তির পরশ খুঁজে পেয়েছি।
আমার স্ত্রীর কথা শুনার জন্য ব্যাকুল ছিলাম কিন্তু কোন সুযোগ পাইনি সর্বোপর আমি প্রায় পাগল হয়েই গিয়েছিলাম। আপন, সুমন, নজরুল এবং দোহা মাঝে মধ্যে দেখা করে আমাকে আশার বানী শুনিয়েছিল যা দিন পার করতে সহযোগীতা করেছে মাত্র। আমি আমার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার জন্য আমার শাশুরীর সঙ্গে কথা বলি কিন্তু কোন লাভ হয়নি বরং একটু মন খারাপ ও চিন্তা বেড়ে গিয়েছিল। আমাকে যখন রিমান্ডে আনা হল তখন আমি থানায় বসে আমার শ্বশুরের ল্যান্ড ফোনে ফোন দিয়ে চেষ্টা করি আমার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে কিন্তু সবই বিফলে য়ায়।

চলমান…

Leave a Reply

Your email address will not be published.