তিন আপত্তিতে ফ্রন্টের বৈঠকে ভারতীয় দূতাবাস অংশ নেয়নি

প্রশান্তি ডেক্স॥ আত্মপ্রকাশের পর জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট প্রথম কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করলো গত বৃহস্পতিবার। বাংলাদেশে অবস্থানরত বিভিন্ন দূতাবাস ও মিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট শীর্ষ নেতারা। ৩০টি দেশের কূটনীতিকরা লেকশোর হোটেলে আয়োজিত এই মতবিনিময়ে উপস্থিত ছিলেন। লক্ষণীয় ব্যাপার হলো ভারতীয় দূতাবাসের কোন প্রতিনিধি সেখানে ছিলেন না। ভারতীয় দূতাবাসের প্রতিনিধি উপস্থিত না থাকা নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যেই হতাশা এবং নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। জানা গেছে, ড. কামাল হোসেন নিজে এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দু’জনই বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত হর্ষবর্ধন শ্রিংলার সঙ্গে কথা বলেন।3rd Apotteta Byatok
শ্রিংলা বলেছিলেন, ‘আমরা দেখছি।’ জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের অন্যতম নেতা এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী অবশ্য বলেছেন, ‘শারদীয় দুর্গাপূজার জন্যই সম্ভবত ভারতীয় দূতাবাসের কোন কর্মকর্তা মতবিনিময় সভায় উপস্থিত থাকেন নি।’কিন্তু কূটনীতিক সূত্রে জানা গেছে, দুর্গাপূজা নয় বরং ফ্রন্টের সঙ্গে জামাতের সম্পর্ক স্বচ্ছ এবং পরিষ্কার না হওয়া সহ তিন কারণে ভারত ঐ মতবিনিময় সভায় যায়নি। ভারতের রাষ্ট্রদূত ঐ দিনই দুপুরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে দীর্ঘ এক ঘন্টা বৈঠক করেন। একই দিনে ভারতীয় দূতাবাসের একজন পদস্থ কর্মকর্তা বারিধারায় বিকল্প ধারার সভাপতি অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ভারতীয় দূতাবাস জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যাপারে তিনটি আপত্তি জানিয়েছে। এ কারণেই তারা জাতীয় যুক্তফ্রন্টের মতবিনিময়ে যোগ দেয়নি। আপত্তিগুলো হলো:
১. জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের প্রধান দল বিএনপির সংগে জামাতের সম্পকের অস্পষ্টতা। ভারত মনে করে, জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট গঠনের আগে বিএনপির উচিত ছিলো জামাতের সংগে সম্পর্কচ্ছেদ। এর আগেও ভারত একাধিক বার বিএনপিকে জামাতের সংগ ত্যাগ করার পরামর্শ দিয়েছিল। ভারত মনে করে, গণতান্ত্রিক ধারায় রাজনীতি করতে হলে বিএনপিকে আনুষ্ঠানিক ভাবে জামাত ছাড়ার ঘোষণা দিতে হবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে জামাতের অবস্থান স্পষ্ট না হওয়ায় ভারত মত বিনিময়ে যোগ দেয়নি। ২. তারেকের নেতৃত্ব নিয়েও ভারতের আপত্তি আছে। ভারতের সঙ্গে সর্বশেষ আনুষ্ঠানিক বৈঠকে আবদুল আউয়াল মিন্টু আশ্বস্থ করেছিলেন যে, ২১ আগষ্টের গ্রেনেড হামলা মামলার পর তারা (বিএনপি) এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। ভারত দীর্ঘদিন ধরেই, তারেক জিয়াকে দলের শীর্ষ পদে রাখার বিরোধিতা করে আসছে। গ্রেনেড হামলা রায়ের পর, তারেক জিয়াকে নেতৃত্ব থেকে না সরানোর যে সিদ্ধান্ত বিএনপি নিয়েছে, তাতে ভারত- বিএনপির সম্পকের অবনতি ঘটেছে।
৩. জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের থাকার যৌক্তিকতা নিয়ে ভারত প্রশ্ন তুলেছে। ভারত মনে করে, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বাংলাদেশে পাকিস্তানপন্থী থিংক ট্যাংক। জাতীয় ফ্রন্ট আত্মপ্রকাশের পরই তারা এ ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছিলে। কিন্তু ফ্রন্ট এ ব্যাপারে কোন সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনি। ভারত বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় বৈদেশিক ফ্যাক্টর। তাই তাদের অনুপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এই মতবিনিময় আদৌ ফলপ্রসু হলো কিনা-সে প্রশ্ন কূটনীতিক মহলে উঠেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.