জেলখানার দিনগুলি

jailhanar-dingolo-1[1]যারা যামেলা করেছেন তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি। সম্পক ও আগের মতই রয়েছে। দোয়া করি তাদের সকলের জন্য। আমার অভিভাবক আইন মন্ত্রী জনাব এডভোকেট আনিছুল হক সাহেবকে ধন্যবাদ জানাই তার সহযোগীতার জন্য। বেসিসের প্রত্যেকটি মেম্বারকে ধন্যবাদ জানাই আমার জন্য দোয়া করার জন্য। আমার জীবনের ভাল ও মন্দের সময়ে প্রতিটা মানুষকে ধন্যবাদ জানাই তাদের দোয়া, সহযোগীতা, পরামর্শ ও মূল্যবান সময় আমাকে দেয়ার জন্য। কসবা উপজেলার এমনকি আমার জন্মস্থান সৈয়দাবাদ গ্রামের সহ এলাকাবাসীকে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানাই আমার পাশে থাকার জন্য। কি দেখলাম এবং শিখলাম: মানবতার আর্তনাদ আর নির্যাতনের সমারোহ। আগে জানতাম মানুষ মানুষের জন্য আর জীবন জীবনের জন্য। কিন্তু এখন জানি জেলে এইসব নিতীবাক্য ও মূল্যবোধ সম্পূর্ণ নিষেধ। জেল কোডে ঐ অবিধানগুলোর কার্যকারীতা ও সম্মান আকার্যকর। তবে উপলদ্বীতে আয়ত্ব করেছি এবং নব চেতনায় শিক্ষা নিয়েছি যা আরো আগেই নেয়া উচিত ছিল। জেল থেকে মূল্যবোধের শিক্ষা দেয়া ও নেয়া উচিত। জেল বা কারাভ্যন্তরে যা নিষেধ তার সবই পাওয়া যায়। একটি প্রবাদ বা খনার বচন তৈরী হয়েছে এই কারাবিধি এবং আচরণের বহি:প্রকাশে “যদি টাকা থাকে তাহলে সবই মিলে”। আর টাকা এবং টেলিফোন না থাকলে নির্যাতিত হয়ে কঠোর ও কঠিন সংগ্রামে লিপ্ত থেকে মৃত্যুর সঙ্গে আলিঙ্গন করতে হয়। শুধু একটি জিনিষ বা উপাদান আজ জেল থেকে বিলিন; আর তা হলো মানবতা, মানবিকতা বা খোদায়ী মূল্যবোধ। যদি এগুলো জাগ্রহ করা যায় তাহলে হয়ত আমল পরিবর্তন হয়ে সংশোধনাগারে রুপান্তর হয়ে সংশোধীত বা রুপান্তরিত জীবন নিয়ে স্ব গৃহে ফিরতে পারবে। এখানে যারা আসে বেশীর ভাগই বিভিন্ন মাদক, নেশায় আসক্ত এবং মাদক বিক্রেতা। সুতরাং পড়ালেখার এবং সামাজিক শিক্ষার বালাই এদের কাছে নেই। তাদেরকে দমন করা সত্যিই কষ্ঠকর। আর যারা শিক্ষিত কিন্তু পয়সার বা অর্থের বাগারম্বও নেই তাদের অবস্থান সেই অশিক্ষিত আসক্ত মানুষদের কাতারে। যাদের টাকা আছে অথবা টেলিফোন আছে তাদেরকে আমদানী খাটতে হয় না বরং হাসপতাল বা সেলে আবার কেউ ডিবিশনে জায়গা কওে নেয়। যাদের টাকা এবং উপর মহলে যোগাযোগ অথবা পুর্বের অভিজ্ঞতা বা জানা শোনা আছে তারা জেলে প্রবেশের আগেই সব বন্দোবস্ত কওে জেলে সুখের ঠিকানা খুজে নেই। আর যারা জানে না তারা কষ্ঠের মধ্যে দিয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করে অধিকার আদায় করে। মিয়াসাব, জমাদার দিনে তিনবার গুনতি নেয়। তিনবারই তারা বন্ধিদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে। প্রতি গোসলে একটি ৭৫ টাকা দামের হলিউড সিগারেট নেই। কেউ অজ্ঞতাবশত যদি কোন ভুল করে তাহলে লাঠির বাড়ি এবং ২০০ টাকা  (বেনসন) জরিমানা দিতে হবে। নতুবা টাওয়ার করে দিবে অথবা আমদানী করে দিবে। জনাব সুবেদার সাহেব খুব ভাল ব্যবহার করে বিভিন্ন উপদেশ মুলক বক্তব্য দিয়ে থাকেন। কোন সমস্যা হলে অভিযোগ করতে বলেন। কিন্তু বাস্তবে যে অভিযোগ করবে তখন উভয় কেই চরম মূল্য হিসেবে অত্যাচার সহ্য করতে হবে। মিয়াসাব এবং জমাদারদের লোভাতুর দৃষ্ঠিভঙ্গি আমাকে হতভাগ করে। রুমে বসে কাজ করতে মনে চায় কিন্তু কোন কাজ নেই তবে জলপরির কাজ আছে। কাজ হল প্রতি দিন রুম, টয়লেট পরিষ্কার, খাবার আনা এবং ময়লা ফেলা। এই সব কাজের জন্য প্রতিদিন রাতে লটারী হয় যার নাম উঠে সে ১০০ টাকা দিতে হবে ঐ জলপরীকে। নিজে চেয়েছিলাম কাজ করতে কিন্তু করতে পারিনি ঐ রুম মেটদেও বা বন্ধিদের ভালবাসার জন্য। সবাই আমাকে ভালবাসে তাই তারা কাজ করতে দিতো না।

Leave a Reply

Your email address will not be published.