প্রশান্তি ডেক্স॥ হ্যালো, হিরো আলম বলছেন? হিরো আলম: কচ্চি, কে কচ্চেন? দলীয় মনোনয়ন তুললেন? নির্বাচন করবেন? হিরো আলম: বগুড়া-৪ আসন থ্যাকে ইলেকশন করিচ্চি। জাতীয় পার্টি থ্যাকে মনোনয়ন তুলচি। গত (মঙ্গলবার) মনোনয়ন জমা দিচ্চি। কেন্দ্রীয় নেতা জিএম কাদের আর নায়ক মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা হামাক সাহস দিচ্চে, উৎসাহ যোগাচ্চে। এমপি হবার পারলে মন্ত্রীও করবে কচ্চে। কিন্তু আপনি বগুড়া সদরের বাসিন্দা? অন্য এলাকার ভোটার আপনাকে চিনবে? আপনাকে ভোট দিবে?
হিরো আলম: হামাক চিনে না বগুড়াত লোক কম আচে। হিরো আলম এখন ওয়াল্ড ফেমাস স্টার। হামার বাড়ি বগুড়াত। সদরত ভোট করবার চাচনো। কিন্তু অন্য এডা কারণে কাহালু-নন্দীগ্রামত ভোট করিচ্চি। ওই এলাকাত হামার বহু ভক্ত, সগলি হামাক চিনে। জনগণের ভালোবাসায় হামার সম্বল। ক্যানডিডেট হলে হামিই জিতমো।
আপনি তো আগে ইউপি সদস্য পদেও নির্বাচন করে হেরেছেন? সংসদ নির্বাচনে জিতবেন কীভাবে?
হিরো আলম: ভোটত জিততে টেকা লাগে না, সাহস লাগে। ভোটারের ভালোবাসা, সমর্থন লাগে। সেডা হামার আচে। আগে দুইবার মিম্বারত দাঁড়াচি। ৬ জন ক্যানডিটেড আচল। একবার ৭১, আরেকবার ১৬ ভোটে মিম্বার ইলেকশনত ঠকচি। মেম্বারের ভোটত ফেল করার পর খুব কষ্ট পাচি। তখন হিরো আলমক কেউ চিনিচ্চিল না। সগলিক সেদিন কচলাম ভোট করলে বড়ডা-ই (সংসদ নির্বাচন) করমো। এখন হিরো আলম ওয়াল্ড সেলিব্রিটি। গোটা বিশ্বে সগলি হামাক চিনে। হামি জিরো থেকে হিরো আলম, এজন্যি বড় নির্বাচনডা-ই করারই সিদ্ধান্ত লিচি।
আপনি যেখানে নির্বাচন করার কথা বলছেন সেখানে তো অনেক প্রভাবশালী নেতা নির্বাচন করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন, জাসদের বর্তমান সাংসদ একেএম রেজাউল করিম তানসেন, বিএনপি থেকে চারবার নির্বাচিত জিয়াউল হক মোল্লা। এসব নেতার সঙ্গে প্রতিদ্বনিদ্বতা করতে পারবেন?
হিরো আলম: নেতাগেরে টেকা আচে, হামার আচে জনগণের ভালোবাসা। ৫০০ মিউজিক ভিডিও, ৮০ টি স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা এবং পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা ‘মারছক্কা’র হিরো হামি। বলিউলের’ বিজু দ্যা হিরো’ নামে একটি সিনেমায় অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হইচি। দুনিয়াজুড়ে কোটি ভক্ত হামার। ফেসবুক পেজে ফলোয়ার ৩ লাখ ৩১ হাজার। হিরো আলমের প্রতি মানুষের সেই ভালোবাসার জোরেই নির্বাচনে জিতমো হামি। হামার নেতা হুসাইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় আসলে মন্ত্রীও হবার পারি।
শুনলাম আপনি বিএনপির চেয়ারপারসনের সঙ্গে লড়তে বগুড়া-৬ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নের চেষ্টা করেছিলেন।
হিরো আলম: ওগলা যারা কচ্চে, তারা সগলি না জানেই কচ্চে। সদরে হামি ভোট করবার চাচলাম, তবে আওয়ামী লীগ থ্যাকে লয়। জাতীয় পার্টি কথা দিলে রাখে, এ জন্যি লাঙল মার্কার প্রার্থী হবার চাচ্চি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে তুমুল আলোচনায় আসা কেবল ব্যবসায়ী থেকে ঢালিউড ও বলিউডের অভিনেতা বনে যাওয়া বগুড়ার আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম গত মঙ্গলবার এভাবেই মুঠোফোনে বগুড়ার আঞ্চলিক ভাষায় সঙ্গে কথা বলছিলেন।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পাটির ‘লাঙল’ মার্কায় নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়ে দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন তিনি। গত মঙ্গলবার দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে এই মনোনয়নপত্র জমা দেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কয়েক বছর ধরে ব্যাপক আলোচিত হিরো আলমের হঠাৎ করে রাজনীতিতে আসা এবং নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণায় নতুন করে আলোচনায় তিনি। গত মঙ্গলবার দিনভর বগুড়ার সর্বত্র আলোচিত হয় হিরো আলমের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি। হিরো আলমের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার খবর ইতিমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘ভাইরাল’ হয়ে গেছে। বগুড়ার প্রত্যস্ত এরুলিয়া গ্রামে একসময় সিডি বিক্রি করতেন আশরাফুল আলম। সিডি যখন চলছিল না তখনই মাথায় আসে কেবল সংযোগ ব্যবসার। কেবল সংযোগের ব্যবসার সুবাদে মিউজিক ভিডিও তৈরি শুরু করেন। ইউটিউবে প্রায় ৫০০ মিউজিক ভিডিও ছাড়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ গণমাধ্যমে আলোচনায় আসেন হিরো আলম। ইউটিউবে প্রকাশ করা তাঁর নিজস্ব ভিডিওগুলোও অনেক জনপ্রিয়। ভিডিওগুলোর নির্দেশনাও দেন হিরো আলম। ভিডিও গুলোর মূল চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। ইউটিউবে হিরো আলমের এসব ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে তাঁর ভিডিও নিয়ে কৌতুক শুরু হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোয় তাঁর ভিডিও নিয়ে হয় ট্রল। তবে সবকিছু ছাপিয়ে তরুণ প্রজন্মের কাছে ব্যাপক পরিচিতি পান তিনি।
হিরো আলম বলেন, ছোটবেলা থেকেই অভাব-অনটনের সঙ্গে লড়াই কর বড় হয়েছেন তিনি। পড়াশোনা করেছেন সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত। সিডির ব্যবসার সুবাদে ২০০৮ সালে নিজেই একটা মিউজিক ভিডিও তৈরি করেন। নায়ক-নির্দেশক তিনি নিজেই।
এরপর তা কেবল চ্যানেলে প্রচার করেন। পরিচিতরা প্রশংসা করেন। আলম সিডি ব্যবসা বাদ দিয়ে মিউজিক ভিডিও বানানোয় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। হিরো আলম ইতিমধ্যেই ‘মার ছক্কা’ নামের একটি চলচ্চিত্রে নায়ক চরিত্রে অভিনয় করেছেন। বলিউড পরিচালক প্রভাত কুমারের ‘বিজু দ্য হিরো’ নামে চলচ্চিত্রেও অভিনয় করছেন তিনি।
২০১৬ সালে হিরো আলম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় তোলেন। বাংলাদেশের গণমাধ্যমের শিরোনাম হন তিনি। ভারতের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হন তিনি। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমও তাঁকে নিয়ে প্রতিবেদন ছাপা হয়।
হিরো আলমের সঙ্গে ছবি তুলে ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম ছবি তুলে ফেসবুকে প্রকাশ করায় বিবিসি হিন্দি, জি নিউজ, এনডিটিভি, ডেইলি ভাস্কর, মিড-ডের মতো ভারতের প্রথম সারির সংবাদ মাধ্যমগুলো তাঁকে নিয়ে প্রতিবেদন করে। সেখানে হিরো আলমকে বাংলাদেশের বিনোদনজগতের তারকা বলে উল্লেখ করা হয়।
ফেসবুকে হিরো আলমের রেকর্ড অনুসারীর ভিত্তিতে গুগল তথ্য তথ্য প্রকাশ করে বলিউড নায়ক সালমান খানের চেয়েও হিরো আলমকে গুগলে বেশিবার খোঁজা হয়েছে। আল্টিমেট ইন্ডিয়ার বরাত দিয়ে ইউএনবির খবরে বলা হয়েছে, গুগলে কাকে সবচেয়ে বেশিবার খোঁজা হয়, তার একটি তালিকা করে ইয়াহু ইন্ডিয়া। জরিপে দেখা গেছে,‘সুলতান’ ও ‘দাবাং’ তারকা খ্যাত সালমান খানকে পেছনে ফেলেছেন হিরো আলম। সালমানের চেয়েও বেশিবার খোঁজা হয়েছে হিরো আলমকে।
হিরো আলমের বিপক্ষে লড়বেন কারা :
হিরো আলম লাঙল প্রতীকে যে আসনে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন কাহালু ও নন্দীগ্রাম উপজেলা নিয়ে গঠিত সেই বগুড়া-৪ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ১১ হাজার ৯৪১ জন। ১৯৯১ সালে এই আসনে বিএনপির সাংসদ নির্বাচিত হন দলের প্রয়াত যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক মোল্লা। তাঁর মৃত্যুর পর ১৯৯৪ সালের উপনির্বাচনে প্রয়াত সাংসদের ছেলে জিয়াউল হক মোল্লা দলীয় মনোনয়নে সাংসদ হন। এ ছাড়া তিনি আরও তিন দফা সাংসদ হন। ২০০৭ সালে দেশে জরুরি অবস্থা জারির পর সংস্কারপন্থী নেতাদের পক্ষ নেওয়ায় জিয়াউল হক মোল্লা দলে কোণঠাসা হয়ে পড়েন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তাঁকে বাদ দিয়ে মোস্তফা আলী মুকুলকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হলে তিনি মহাজোট মনোনীত জাসদের প্রার্থী একেএম রেজাউল করিম তানসেনকে হারিয়ে সাংসদ হন।
২০১৪ সালের নির্বাচন বিএনপি বয়কট করে। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগে সমঝোতার ভিত্তিতে জাপার নুরুল আমিনকে জেতার সুযোগ করে দিতে মাঠ ছেড়ে দেয়। কিন্তু মহাজোটের অন্যতম শরিক জাসদের রেজাউল করিম তানসেন মনোনয়ন প্রত্যাহার না করলে নির্বাচন হয়। নির্বাচনে জাপার প্রার্থীকে হারিয়ে তিনি সাংসদ হন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংস্কার পন্থী জিয়াউল হককে ইতিমধ্যেই দলে ফিরিয়ে এনে প্রার্থী করতে যাচ্ছে বিএনপি। জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ২৮ অক্টোবর নির্বাচনী জনসভা থেকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে একেএম রেজাউল করিম তানসেনকে (জাসদ) ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিনও এ আসন থেকে নির্বাচন করার জন্য মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন।