প্রশান্তি ডেক্স॥ ২০০৪ সালের ঘটনা ১০ দিন ক্রমাগত ধর্ষণ শেষে ঋতু পায়ে কাঁপতে কাঁপতে ঘরে ফেরে ১৫-বছরের কিশোরি সন্ধ্যা। উঠোনে দাঁড়ানো মা মেয়ের এ করুণ অবস্থায় ফিরতে দেখে চিৎকার দিয়ে ডাকে স্বামীকে। ১০-দিন নিখোঁজ থাকার পর মেয়ের এ অবস্থায় প্রত্যাবর্তনে বাকরুদ্ধ হয়ে জগদীশ তাকিয়ে থাকে একখন্ড মাংসের শরীর নিয়ে হেঁটে আসা সন্ধ্যার দিকে। মাকে জড়িয়ে ধরার আগেই দরজায় পড়ে যায় ১০-দিনের ক্লান্ত-শ্রান্ত ধর্ষিতা সন্ধ্যা!
নবগ্রামের দরিদ্র কৃষক জগদীশ তার ধানী জমি আর বাড়িটি বন্ধক রেখে দশ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিল ক্ষমতাধীন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতা আক্কেল আলী থেকে। ৬ মাসের মাথায় জগদীশের একমাত্র মেধাবী কন্যা সন্ধ্যা, টিউশনি করে টাকা জমিয়ে, একদিন পুরো ১০ হাজার টাকা নিয়ে হাজির হলো আক্কেল আলীর বাড়ি। এবং বললো, “কাকা টাকাটা রাখুন আর আর্শীবাদ করবেন আমায়, যেন ইন্টারে ভাল কলেজে ভর্তি হতে পারি আমি। পড়ালেখা করে ভাল চাকুরি করে মা-বাবার দু:খ ঘোচাতে চাই আমি। যাতে ছেলে না থাকার কষ্ট না থাকে তাদের মনে”।
হাতে নগদ ১০-হাজার টাকা পেয়ে মনটা দারুণ খারাপ হয় আক্কেল আলীর। সে কোনদিন মনে করিনি, জগদীশ নামের দরিদ্র হিন্দু কৃষক কখনো ১০-হাজার টাকা একত্র করতে পারবে এবং ছুটাতে পারবে তার বন্ধককৃত জমি। সন্ধ্যার প্রতি দারুণ রাগ হয় তার। এ মেয়েটা মেধাবী না হলে, টিউশানি করে টাকা না কামাতে পারলে, কোনদিন নিতে পারতো না। রাগে ক্ষোভে নিজের রাজনৈতিক গুন্ডা ক্যাডার টগন আর কাল্টুকে ডেকে বলে, “সন্ধ্যাকে অপহরণ করে নিয়ে যা কাল্টু তোর বাড়িতে”।
পরদিন টিউশানিতে যাওয়ার পথে, একটা গাড়িতে মুখ চেপে অপহরণ করে সন্ধ্যাকে কাল্টু আর টগন। যা ঘটনাক্রমে দেখে ফেলে নাপিত হরলাল। হিন্দু প্রতিবেশী হরলাল দৌঁড়ে এসে জগদীশকে খবর দেয়, তার মেয়ে সন্ধ্যাকে অপহরণের ঘটনা। স্ত্রী আর হরলালসহ জগদীশ উপস্থিত হয় আক্কেল আলীর বাড়ি। পায়ে ধরে বলে কাল্টু আর টগন কর্তৃক তার মেয়েকে অপহরণের কথা এবং তাকে ছেড়ে দিতে। আক্কেল আলী ডেকে আনে কাল্টু আর টগনকে। তারা কসম করে বলে এ ঘটনা মিথ্যা, বানানো। তারা কখনো দেখেনি সন্ধ্যাকে। মিথ্যা অভিযোগ আনার জন্যে নাপিত হরলালকে গলা ধাক্কা দেয় আক্কেল ও তার গুন্ডা দল। চোখ ঘুরিয়ে হরলালকে বলে, “এমন করলে এ মুসলিম দেশে থাকতে পারবা না মালাউন বাছারা তোমরা। মুসলমানের নামে এতোবড় বদনাম”!
স্থানীয় থানায় গিয়ে একই অভিযোগ করে জগদীশ আর হরলাল। থানার ওসি সাহেব আক্কেল আলীর মত বড় সম্মানি নেতার নামে এমন মারাত্মক মিথ্যা অভিযোগ করার জন্যে বের করে দেয় দুজনকে। বলে, “বাড়াবাড়ি করলে নিজের মেয়েকে গুম করার জন্যে গারদে ঢুকাবো। চোখ মুছতে মুছতে থানা থেকে বেড়িয়ে আসে জগদীশ। কি করবে এ দরিদ্র অশিক্ষিত সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্য, জামাত সমর্থিত হিন্দু বিদ্বেষী ক্ষমতাসীন জোট সরকারের স্থানীয় দাপুটে নেতার বিরুদ্ধে, কুল কিনারা পায়না।
পুরো ১০-দিন কাল্টুর বৌ-হীন বাড়িতে পর্যায়ক্রমে সন্ধ্যাকে ধর্ষণ করতে থাকে আক্কেল, টগন আর কাল্টু। মানে ১০-দিনে কমপক্ষে ৩০-বার ধর্ষিতা হয় সন্ধ্যা। এ ১০-দিন তাকে ঐ ঘরে পুরো উলঙ্গ করে রাখে অপহরণকারীরা। শেষ দিন সন্ধ্যাকে আক্কেল মিয়া বলে, “মা সন্ধ্যা, তোমাকে এখন ছাইড়া দিমু কিন্তুক কাপড় ছাড়া ঘরে ফিরবা ক্যামনে? একটা মুচলেকা লেইকা দিলে, কাপড় পরাইয়া সম্মানের সাথে বাড়ি দিয়া আমু তোমারে”। অবশেষে সন্ধ্যা এইমর্মে একটা মুচলেকা দেয় যে, “তার মা-বাবার সাথে রাগ করে নিজ ইচ্ছেতে আক্কেল মিয়ার বাড়িতে এই ১০-দিন ছিল সে। তাকে আক্কেল মিয়া খুবই আদর যতœ করেছে মেয়ের মত, কোন খারাপ আচরণ তার সাথে করা হয়নি”।
বাড়ি ফিরে একদম বোবা হয়ে থাকে সন্ধ্যা। মা-বাবা কারো সাথে কোন কথাই বলেনা সে। প্রতিবেশিরা নানা কানাঘুষা করতে থাকলে, একদিন নিজ শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরায় সন্ধ্যা। চিৎকার শুনে মা-বাবা পানি দিতে দিতে ৯০% শরীর পুড়ে যায় এসএসসি পাস মেধাবী তরুণি ১৫-বছরের সন্ধ্যার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। খবর শুনে এসপি নিজে এসে বয়ান গ্রহণ করেন সন্ধ্যার। মৃত্যুর আগে সন্ধ্যা তাকে অপহরণ, ১০-দিন আটকে রেখে ৩-জনের ধারাবাহিক ধর্ষণের লোমহর্ষক বর্ণনা দিতে পারে এসপি সাহেবকে। পরদিন হাসপাতালে মৃত্যু হয় জগদীশের একমাত্র সন্তান সন্ধ্যার।
(সংগৃহীত)