প্রশান্তি ডেক্স॥ চট্টগ্রাম ৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনে অনেক মেগা প্রকল্প গত দশ বছরে বাস্তবায়ন হলেও শুধুমাত্র আলোর মুখ দেখেনি বহুল প্রত্যাশিত কালুরঘাট নতুন সেতু। এনিয়ে টানা দুবারের সংসদ সদস্য মইন উদ্দিন খান বাদলের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ বোয়ালখালীবাসীর। ধারণা করা হচ্ছে, এবারের নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে বাদলকে অতিক্রম করতে হবে এ কালুরঘাট নতুন সেতুর বাধা। তবে সিনিউজের সঙ্গে আলাপকালে তৃতীয়বারের মত নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোটের লড়াইয়ে নামা বাদল বলছেন অন্য কথা। তিনি বলেছেন, ‘আমার সংসদীয় আসনে অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। এরমধ্যে মোহরায় বিশ্বের ১২তম আর বাংলাদেশের একমাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, অত্যাধুনিক সার গোডাউন, কর্ণফুলীতে বাঁধ নির্মাণ, বোয়ালখালীতে ফায়ার ব্রিগেড স্থাপনসহ অসংখ্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়।
কিন্তু সবার চোখ শুধু ওই কালুরঘাট সেতু নিয়ে।’ ‘কালুরঘাট সেতু নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলে। কিন্তু এ ব্রিজটি অত্যন্ত টেকনিক্যাল। আমার ইচ্ছাতেই রেল কাম সড়ক সেতুটি নির্মাণ করা যাবে না। সংসদে ব্রিজ নিয়ে কুড়ি বারের বেশি কথা বলেছি। ব্যক্তিগতভাবে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ করেছি। একনেক মিটিংয়েও উঠেছে। কিন্তু সমীক্ষাগত জটিলতার কারণে সেটি পিছিয়ে গেছে।’
বাদল আরো বলেন, ‘এবার নির্বাচিত হলে আমার আর কোনো কাজ থাকবে না। নির্বাচিত হবার প্রথম দিন থেকে আমি কালুরঘাট সেতু নিয়ে কাজ করবো। কথা দিচ্ছি আগামী এক বছরের মধ্যে যদি কালুরঘাট সেতুর নির্মাণ কাজ দৃশ্যমান করতে না পারি তাহলে আমি সংসদ থেকে পদত্যাগ করবো। আমি আবার বলছি, এক বছরের মধ্যে কালুরঘাট ব্রিজ নির্মাণ কাজ দৃশ্যমান করতে না পারলে আমি সংসদ থেকে পদত্যাগ করবো।’ প্রসঙ্গত, বৃটিশ আমলে নির্মিত কালুরঘাট রেল কাম সেতুটি জরাজীর্ণ হওয়ায় দুই দশকের বেশি সময় ধরে লাখ লাখ মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
দক্ষিণ চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে এবং বর্তমান উন্নয়ন বান্ধব সরকারের স্বদচ্ছিতায় প্রস্তাবিত চীন, মিয়ানমার এবং ভারতের সঙ্গে রেল নেটওয়ার্ক স্থাপনে ও কর্ণফুলী নদীর ওপর পুরানো কালুরঘাট রেল সেতু ভেঙে নতুন করে রেল কাম সড়ক সেতু নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। এ সেতুটি সরকারের মেগা প্রকল্প দোহাজারী-ঘুমধুম রেল লাইনের অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল কর্তৃপক্ষ ২০১৭ সালের ২১ সেপ্টেম্বর কালুরঘাট কর্ণফুলী নদীর ওপর রেল কাম সড়ক সেতু নামে একটি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি) তৈরি করে ঢাকাস্থ রেলভবন কার্যালয়ে পাঠানো হয়। পরে সেটি যাচাই-বাছাই শেষে কয়েক দফা পুনর্গঠন করে ২৭ মার্চ সংশোধিত ডিপিপি রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগে পাঠানো হয়।
প্রকল্প অনুসারে ২০২০ সালের শুরুতে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ১৬৪ কোটি ৯৮ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। যার মধ্যে ১ হাজার ১৪৬ কোটি টাকার দক্ষিণ কোরিয়ার ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ড (ইডিসিএফ)। বাকি টাকার যোগান দেবে বাংলাদেশ সরকার। রেল কর্মকর্তাদের মতে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের যে প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন আছে, তার সুফলও নির্ভর করছে কালুরঘাটে নতুন সেতু নির্মাণের ওপর।