ভোটকেন্দ্রে আমি কোন লাইনে দাঁড়াব

প্রশান্তি ডেক্স॥ সুন্দর এই পৃথিবী যিনি সৃষ্টি করেছেন সে সৃষ্টিকর্তা তার পছন্দ অনুসারে মানব জাতিকে বিভিন্ন সাজে সাজিয়েছেন। নারী কিংবা পুরুষ শুধু এতটুকু নই, তার পাশাপাশি তৃতীয় লিঙ্গ নামে পরিচিত কিছু মানুষকেও তিনিই সৃষ্টি করছেন। কিন্তু আমরা সৃষ্টিকর্তার অন্য সকল সৃষ্টিকে সহজে গ্রহণ করে নিলেও আমাদের কেউ গ্রহণ করতে পারেনি? আসন্ন নির্বাচনের দিন অনেক তৃতীয় লিঙ্গের মানুষই ভোট কেন্দ্রে যাবেন তাদের নাগরিক অধিকার প্রয়োগ করার জন্য। কিন্তু তাদের জন্য ভোটের দিনে আলাদা কোনো লাইনের ব্যবস্থা নেই। তাহলে আমি কোন লাইলে দাঁড়াব?Vot kendre amra kon line darabo
ভোটের অধিকার ও নবনির্বাচিত এমপির কাছে দাবি নিয়ে কথা হলে এমনটাই বলেন খোরশেদা বেগম। তিনি বলেন, আমাদের জন্ম বাংলাদেশে, আমরা বড় হয়েছি এখানেই, আমাদের সব কিছু এখানে। তাই আমরা নাগরিকত্ব চাই। আমাদেরকে নিয়ে নানান জনে নানান রকম কথা বলে, মানুষ বলেও কেউ মনে করে না। এভাবে আমরা থাকতে চাই না। আমরা চাই আমাদেরকে চাকরি দেয়া হোক। আমরা বাবা-মার সম্পদের ভাগ পাই না। আমার নিজের ভাইয়েরা আমাকে আমার বাবার সম্পদের ভাগ দেয়নি। কারণ আমি দেখতে তাদের মতো নই। আমি আমার অধিকার চাই। সবার মতো করে আমরাও স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকতে চাই।
একই লিঙ্গের অপর একজন ঝিনুক। তিনি বলেন, ‘ছোটবেলায় মা-বাবাকে হারিয়েছি। পড়ালেখা করতে পারিনি। অন্য শিশুদের মতো স্বাভাবিক নিয়মে বড় হতে পারিনি। আমি চাই আমাদের পড়ালেখার জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হোক। আমরাও যেন স্কুল-কলেজে গিয়ে পড়ালেখা করতে পারি। খোরশেদা ও ঝিনুকদের সর্দার হিসেবে পরিচিত নয়নতারা বলেন, রাঙ্গামাটিতে বর্তমানে প্রায় ৭০ জন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ বাস করে। আমাদের থাকার কোনো স্থায়ী জায়গা নেই। যেখানে থাকি সেখানে মানুষ আমাদেরকে নানান ভাবে হয়রানি করে। অনেকে চাই না আমরা এখানে থাকি। তাই আমাদের উপর নানান ভাবে চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করা হয় এবং বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করে। ইতোমধ্যে রিজার্ভ বাজারে আমাদের টাকা তোলা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া মানুষ আমাদেরকে নানান ভাবে হেয় করে।
তাই আগামী দিনের এমপির কাছে আমরা স্থায়ীভাবে একটি নির্দিষ্ট স্থানে বসবাসের জায়গা চাই। তিনি আরও বলেন, আমরা ভিক্ষুক নই। সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে ভিন্নভাবে তৈরি করলেও হাত-পা দিয়েছেন। আমরা কিছু একটা করে খেতে পারি। আমরা চাই আমাদের যোগ্যতা অনুসারে চাকরির সুযোগ করে দেয়া হোক। আমরা দোকান থেকে এভাবে টাকা তুলে পেট চালাতে চাই না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি একজন ভোটার, আমি ভোট দিতে ৩০ ডিসেম্বর ভোট কেন্দ্রে যাব। কিন্তু সেখানে তো দুইটি লাইন থাকে পুরুষ ও নারী। আমাদের জন্য আলাদা কোনো লাইন নেই। তাই আমি বোরকা পরে গিয়ে নারীদের লাইনে দাঁড়াব, যাতে কেউ আমাকে চিনতে না পারে। আমাকে দেখলে নানান জনে নানান কথা বলবে এবং পাশের আপারাও অস্বাভাবিক হয়ে যাবে। আমি কারও বিরক্তির কারণ হতে চাই না।

Leave a Reply

Your email address will not be published.