প্রশান্তি ডেক্স॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ঘুমন্ত থাকলেও ভেতরে ভেতরে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। কোনো ধরনের বক্তব্য না দিয়ে আপাতত চুপচাপ রয়েছেন দলটির নেতারা। তবে আড়ালে থেকেই দলটি নতুন করে সাংগঠনিক শক্তি বাড়াচ্ছে বলে জানা গেছে। এদিকে ২০ দলীয় জোটের প্রধান বিএনপি সম্প্রতি কয়েকটি জোটের বৈঠকে জামায়াতকে আহ্বান করলেও উপস্থিত হয়নি দলটির কোনো প্রতিনিধি। সম্প্রতি দলটির কর্মকান্ডের ব্যাপারেও অভিহিত নয় ২০ দলীয় জোটের অপর শরিকরা। গত কয়েকদিন জামায়াতের একাধিক সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
অন্যদিকে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবির রাজপথে না থাকলেও প্রশাসনের নজর এড়িয়ে জোড়াতালি দিয়ে সংগঠন পরিচালনা করছে। সম্প্রতি সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিয়ে সংবাদ মাধ্যমে আবারো আলোচনায় আসছে দলটির নেতারা।
নির্বাচনের পর চুপচাপ থাকলেও ভেতরে ভেতরে কর্মকৌশল ঠিক করছে জামায়াতে ইসলামী। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক হিসেবে থাকলেও আপাতত জোটের কোনো কার্যক্রমে না থাকায় সংগঠন গোছানোর কাজ শুরু করেছে দলটি। জামায়াতের বিভিন্ন জেলার নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ সব তথ্য জানা গেছে।
জামায়াতের বিভিন্ন জেলার নেতারা জানান, এরইমধ্যে জেলা আমির নির্বাচন শুরু হয়েছে। চলতি ফেব্রুয়ারি মাসে সারাদেশের আমির নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ করে আনার কথা রয়েছে। এই মুহূর্তে সারাদেশে বিশেষ টিম নির্বাচন পরিচালনা করছে। এ মাসের শেষে অথবা আগামী মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহ নির্বাচন কমিশন থেকে সারাদেশের নির্বাচিত আমিরদের নাম ঘোষণা করতে পারে। হয়তো বা তার আগেই হতে পারে। এমন তথ্যও জানান জামায়াত নেতারা। জামায়াতের সর্বশেষ সংশোধিত গঠনতন্ত্রের ৩৩ ধারায় বলা হয়েছে, জেলার রুকনদের ভোটে ২ বছরের জন্য আমির নির্বাচিত হবেন। সিলেট জেলা দক্ষিণের আমির ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য মাওলানা হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদেরকে বলেন, ‘আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম সব সময় চলমান থাকে। গঠনতান্ত্রিক মেয়াদ অনুযায়ী জেলা আমির নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আশা করি এ মাসেই শেষ হবে।’
জামায়াতের বিভিন্ন জেলার নেতারা জানান, জেলা আমির নির্বাচনের পর শপথ নেবেন নির্বাচিতরা। এরপর বর্তমান জেলার শূরার গঠন হবে। পর্যায়ক্রমে উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও ইউনিট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
ফেনী জেলার একজন দায়িত্বশীল জানান, নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য একটি নির্বাচন কমিশন আছে। নির্বাহী এই কমিশনের সদস্য সংখ্যা প্রায় ৭/৮জন। এর সঙ্গে বোর্ড অব ইলেকশন হিসেবে কাজ করে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ, যার সদস্য সংখ্যা প্রায় ৪০। জেলার নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য কমিশনের পক্ষ থেকে অঞ্চলভিত্তিক বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে, যারা সারাদেশে জেলা আমির নির্বাচনে রুকনদের ভোট সংগ্রহ করছে। এরপর ভোটগণনা শেষে আমিরদের নাম ঘোষণা করবে কমিশন।
ঢাকা বিভাগের একজন দায়িত্বশীল জানান, আমির নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কিছু জায়গায় এখনো শুরু হয়নি। এর মধ্যে খুলনা রয়েছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য বলছে, সারাদেশে জামায়াতের প্রায় ৭৮টি সাংগঠনিক জেলা রয়েছে। গত এক বছরে এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে, এমন সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন নরসিংদী জেলার একজন দায়িত্বশীল।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় এক কর্মপরিষদ সদস্য জানান, জেলা কমিটিতে এরইমধ্যে সাফল্যের সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের কেউ-কেউ পুননিরবাচিত হতে পারেন। আবার কোনো-কোনো আমির অঞ্চলভিত্তিক কমিটিতে যুক্ত হতে পারেন।
জামায়াতের ঢাকা মহানগরীর অধীনে গুলশান থানা পর্যায়ের নেতা জানান, মজলিসে শূরা নির্বাচনের পর সদস্যরা জেলা আমিরের কাছে শপথ গ্রহণ করবেন। শূরা নির্বাচনের পর জেলার কর্মপরিষদ গঠন করার নিয়ম রয়েছে। এই কমিটি গঠন করবে জেলার মজলিসে শূরা। কর্মপরিষদের এই সদস্যরাও আমিরের কাছে সাংগঠনিক শপথ নেবেন।
খুলনা মহানগরী কমিটির সহকারী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শাহ আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন জায়গায় জেলা আমির নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমাদের এখানে শুরু হয়নি।’
সিলেট জেলা আমির মাওলানা হাবিবুর রহমানের মতে, নির্বাচনের পর ২০ দলীয় জোটের পরবর্তী কার্যক্রম এখনো নির্ধারিত হয়নি। সে কারণেই সাংগঠনিক কাজই এখন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে করা হচ্ছে। জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের ৫ সদস্য বলছেন, তৃণমূলের নির্বাচনের পর উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কাজ শুরু করবে সংশ্লিষ্ট কমিটিগুলো। আগামী মার্চ থেকে কয়েকপর্বে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন শুরু হবে। এই নির্বাচনে জামায়াতের এককভাবে প্রার্থী দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন না থাকা ও প্রতীক বাতিল হওয়ায় স্বতন্ত্র প্রতীকে নির্বাচনের চিন্তা-ভাবনা শুরু হয়েছে, এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে এই সদস্যদের বক্তব্যে।
খুলনা মহানগরীর দায়িত্বশীল অ্যাডভোকেট শাহ আলম বলেন, ‘আমার জানামতে, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে এখনো হাইকমান্ডে সিদ্ধান্ত হয়নি।’জামায়াতের বিভিন্ন স্তরের নেতারা জানান, চলতি বছরের শেষ দিকে কেন্দ্রীয় আমির নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা আছে। গঠনতন্ত্রে তিন বছরের মধ্যে এই পদে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যদিও বিশেষ পরিস্থিতিতে জাতীয় কাউন্সিল না ডেকেই আমির নির্বাচনের প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে জামায়াতে আছে।
এ দিকে সম্প্রতি দলটির ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করছে। কমিটি ঘোষণার পরপরই জোড়াতালি সংগঠন চালাচ্ছেন দলটির দায়িত্বশীল নেতারা। সংগঠনের সভাপতি ড. মোবারক হোসাইন ও সেক্রেটারি জেনারেল সিরাজুল ইসলাম ইতোমধ্যে সারাদেশে জেলা, থানা, উপজেলা, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, মাদরাসা কমিটি গঠনের জন্য সারাদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বিগত দিনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলার ভয়ে রাজপথে উঠতে পারেনি নেতাকর্মীরা। তাদেরকে পুনর্জীবিত করতে এখন মাঠে মরিয়া হয়ে কাজ করছেন। তাও আবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়িয়ে।
এমন জানিয়েছেন সংগঠনের একজন দায়িত্বশালী নেতা। তিনি গতকাল মানবকণ্ঠকে বলেন, ‘এখন খুব দুঃসময় চলছে আমাদের। তাই সংগঠনকে শক্তিশালী করতে মাঠে কাজ করছে আমাদের কর্মীরা।’