আওয়ামী লীগের কিচেন ক্যাবিনেটে কারা

প্রশান্তি ডেক্স॥ ঢাকা, ১১ ফেব্রুয়ারি- মন্ত্রিসভা গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় একটি সরকারে যাত্রা। সরকারের সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন এই মন্ত্রিসভার সদস্যদের মাধ্যমেই হয়ে থাকে। কিন্তু এর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বস্ত ও ঘনিষ্ঠদেরকে নিয়ে গঠিত হয় আরেকটি ছোট মন্ত্রিসভা-কিচেন ক্যাবিনেট। যেখানে রাষ্ট্রের সকল গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সিদ্ধান্তগুলো নেয়া হয়। সরকার এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অনেক সিদ্ধান্ত এই কিচেন ক্যাবিনেটের সদস্যরা আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত করেন। awamileg ar kechen kabenet kara
সারা বিশ্বে কিচেন ক্যাবিনেট একটি খুবই জনপ্রিয় ধারা। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এটি একটি স্বীকৃত পদ্ধতি। দল বা রাষ্ট্রের বিভিন্ন সমস্যা বা সংকট উত্তরণের জন্য কিচেন ক্যাবিনটের সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। এরাই সরকারের নীতি নির্ধারক। টানা তৃতীয়বার সরকার গঠন করা মন্ত্রিসভা থেকে দলের হেভিওয়েটদের ছেঁটে ফেলেছে। আওয়ামী লীগের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা কিচেন ক্যাবিনেটে এবার তাহলে কারা আছেন তা নিয়ে কৌতুহল তৈরি হয়েছে সাধারণের মধ্যে।
বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সূচনা থেকে কিচেন ক্যাবিনেট বেশ শক্তিশালী অবস্থান ধরে রেখেছে। স্বৈরশাসক এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ বিএনপি ক্ষমতায় আসে। সেসময় প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কিচেন ক্যাবিনেটে ছিলেন সাইফুর রহমান, লে. কর্নেল (অব.) মোস্তাফিজুর রহমান, মেজর জেনারেল (অব.) মজিদ-উল-হক, ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা এবং তরিকুল ইসলাম। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কিচেন ক্যাবিনেটে ছিলেন শাহ এম এস কিবরিয়া, মোহাম্মদ নাসিম, তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু এবং মহিউদ্দিন খান আলমগীর। ২০০১ সালে আবারও ক্ষমতায় আসে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট। দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা জিয়া। সেসময় অবশ্য দুটি কিচেন ক্যাবিনেট দৃশ্যমান হয়। একটি ক্যাবিনেট ছিল প্রধানমন্ত্রীর আরেকটি ছিল হাওয়া ভবনের। সেসময় প্রধানমন্ত্রীর কিচেন ক্যাবিনেটে জায়গা পান সাইফুর রহমান, মান্নান ভূঁইয়া, সাদেক হোসেন খোকা, ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা এবং তরিকুল ইসলাম। কিচেন ক্যাবিনেটের সদস্যরা সরকারের অনেক নীতিনির্ধারণী বিষয় ও কৌশল নিয়ে আলোচনা করতেন।
২০০৮ সালে আবারও ক্ষমতায় আসে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ। সেসময় আওয়ামী লীগ দলের হেভিওয়েটদের বাদ দিয়ে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করে। সেখানেও একটি কিচেন ক্যাবিনেট ছিল। গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়ে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করতেন শেখ হাসিনা এবং গুরুত্বপূর্ণ অনেক সিদ্ধান্ত তাদেরকে আগেই জানাতেন। সেসময় কিচেন ক্যাবিনেটে ছিলেন আবুল মাল আবদুল মুহিত, বেগম মতিয়া চৌধুরী, আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ও ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। ২০১৪ সালে টানা দ্বিতীয়বার সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। কিচেন ক্যাবিনেটে পরিবর্তন আসে। আবুল মাল আবদুল মুহিত ও বেগম মতিয়া চৌধুরী থেকে যান পুরনোদের মধ্য থেকে। নতুনদের মধ্য থেকে যুক্ত হন আ হ ম মোস্তফা কামাল, ওবায়দুল কাদের এবং আনিসুল হক।
একাদশ জাতীয় সংসদে বিপুল ব্যবধানে জয়লাভ করে চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। নতুন মন্ত্রিসভার বয়স ইতিমধ্যে একমাস পার হয়ে গেছে। এবারও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তার কয়েকজন ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করছেন তাদের পরামর্শ শুনছেন। সরকার পরিচালনার বিভিন্ন কৌশল ও পথ নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বলা হয় আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনার পর সবচেয়ে ক্ষমতাবান ব্যক্তি তিনিই। সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী ও বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল আছেন কিচেন ক্যাবিনেটে। যে কোন সরকারেরই একটি মহাগুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় অর্থ মন্ত্রণালয়। সিলেট থেকে অর্থমন্ত্রী হওয়ার চিরাচরিত রীতি ভেঙেছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বস্ত মোস্তফা কামাল। খালেদা জিয়ার মামলা, তারেক জিয়াকে ফিরিয়ে আনার মতো অনেকগুলো বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দেয়ার জন্য কিচেন ক্যাবিনেটে আছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ২০০৯ সালে মন্ত্রী হলেও পরবর্তীতে তাকে সরিয়ে দেয়া হয়। তারপরও তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাহচর্য ছাড়েননি।
তখন থেকেই প্রধানমন্ত্রী অনেক বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে শেয়ার করতেন। তিনিও আছেন কিচেন ক্যাবিনেটে। বর্তমান সরকার কূটনীতিক বিষয়কে খুবই গুরুত্ব দিচ্ছে। রোহিঙ্গা ইস্যুর মতো আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সামনে এসেছে। বাংলাদেশ শুরুতে মহানুভবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেও এখন তাদের নীতি ‘এনাফ ইজ এনাফ’। আর একটি রোহিঙ্গাকেও জায়গা না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ। এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দেয়ার জন্য কিচেন ক্যাবিনেটে আছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন।
কিচেন ক্যাবিনেটের বাইরে আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা যতো জটিল ও কঠিন হচ্ছে, একটি সুপার ক্যাবিনেটের ধারণাও প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। এমন ব্যক্তিদের নিয়ে সুপার ক্যাবিনেট গঠন হয় যারা মন্ত্রী নন, সরকারের কোন গুরুত্বপূর্ণ পদে নেই এবং সাধারণের কাছে পরিচিতও নন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.