প্রশান্তি ডেক্স॥ মাওয়া প্রান্তে বসানো হলো পদ্মা সেতুর দশম স্প্যান। গত বুধবার (১০ মার্চ) বেলা ১২টার দিকে এই স্প্যান বসানো হয়। এর ফলে দৃশ্যমান হলো দেড় কিলোমিটার সেতু।
জাজিরার পর এবার মাওয়া প্রান্তে বসলো পদ্মা সেতুর স্প্যান। চলতি মাসে আরও একটি স্প্যান বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক।
নতুন করে গতি পাচ্ছে পদ্মা সেতুর কাজে। আজকের স্প্যান নিয়ে পর্যন্ত নদীতে স্প্যান বসেছে ১০টি। এর মধ্যে ৮টি স্প্যানই জাজিরা প্রান্তে। এ প্রান্তেই তাই কার্যত দৃশ্যমান সেতুর কর্মযজ্ঞের বড় অংশ।
নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুর দশম স্প্যান বসল, সেতুর মাওয়া প্রান্তে ১৩ ও ১৪ নম্বর খুঁটির (পিলার) ওপর বসানো হবে ‘৩-এ’ স্প্যানটি। এ নিয়ে সেতুর ১৫০০ মিটার বা ১.৫ কিলোমিটার দৃশ্যমান।
চলতি মাসেই আরো একটি স্প্যান বসানো হবে বলে জানিয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ। এখন থেকে প্রতি মাসে একাধিক স্প্যান বসানোর পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে তারা।
আবহাওয়া অনুকূলসহ সব কিছু ঠিক থাকলে সকালেই স্প্যানটি মাওয়ার কুমারভোগের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে ভাসমান জাহাজে করে নেওয়া হবে ১৩ ও ১৪ নম্বর খুঁটিতে।
সেতুর জাজিরা প্রান্তে আটটি স্প্যান বসানো হয়েছে। মাওয়া প্রান্তে ৪ ও ৫ নম্বর খুঁটিতে অস্থায়ীভাবে একটি স্প্যান বসানো হয়েছে। ৬ ও ৭ নম্বর খুঁটিতে এটি বসানোর কথা ছিল। কিন্তু খুঁটি দুটি প্রস্তুত না থাকায় এটি ৪ ও ৫ নম্বর খুঁটিতে বসানো হয়। পরে ৬ ও ৭ নম্বর খুঁটি প্রস্তুত হলে এটি সরিয়ে নেওয়া হবে।
২০ এপ্রিল নাগাদ সেতুর জাজিরা প্রান্তে ৩৩ ও ৩৪ নম্বর খুঁটিতে ১১তম স্প্যানটি (‘৬-সি’) বসানোর কথা। সেতুর ৪১টি স্প্যানের মধ্যে বাংলাদেশে পৌঁছেছে ২১টি। এর মধ্যে ৯টি সেতুর খুঁটিতে বসানো হয়েছে। দুটি পুরোপুরি প্রস্তুত। কুমারভোগের বিশেষায়িত ওয়ার্কশপে তিনটিতে রঙের ও চারটির ওয়েলডিংয়ের কাজ চলছে। আরো তিনটি রয়েছে ওয়েল্ডিংয়ের অপেক্ষায়। বাকি ২০টি স্প্যানের মধ্যে ১৬টিই চীনে তৈরি হয়ে আছে। এগুলো দেশে আসার জন্য পথে বা অপেক্ষায় আছে। কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে স্থান সংকুলান না হওয়ায় চীন থেকে ধীরে ধীরে স্প্যান আনা হচ্ছে বলে প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন।
পদ্মা নদীর বুকে এ পর্যন্ত সেতুর ২১৫টি পাইল স্থাপিত হয়েছে। আলোচিত ৬ ও ৭ নম্বর খুঁটিতে সাড়ে ছয়টি করে পাইল বসে গেছে। দুই-তিন দিনের মধ্যে এ দুটি খুঁটিতে সাতটি করে পাইল বসানো শেষ হবে। এ ছাড়া ২৯, ৮, ১০ ও ১১ নম্বর খুঁটিতে বাকি পাইল বসানোর কাজ চলছে। ২৪০০ ও ৩৫০০ কিলোজুল ক্ষমতাসম্পন্ন হ্যামার দুটি পাইল বসাচ্ছে।
এখনো ১৯০০ কিলোজুল ক্ষমতার হ্যামারটি সচল করা যায়নি। ভায়াডাক্টের কাজও দ্রুত এগিয়ে চলেছে। সব পাইলে ক্যাপ বসানো শেষ প্রায়। চলছে নদীশাসনের কাজও। ব্লক, বালুর বস্তা ফেলা, ড্রেজিংসহ সব কাজই চলছে দ্রুতগতিতে। সেতুর স্প্যানের ওপর রেলওয়ে ও রোডওয়ে স্ল্যাব হচ্ছে। জাজিরা প্রান্তে ২৫৬টি রেলওয়ে স্ল্যাব ও চারটি রোডওয়ে স্ল্যাব বসানো হয়েছে। কুমারভোগের বিশেষায়িত ওয়ার্কশপে এ পর্যন্ত ১৭৫০টি রেলওয়ে স্ল্যাব ও ৬০০ রোডওয়ে স্ল্যাব তৈরি করা হয়েছে। সেতুর চ্যানেলে আড়াআড়ি (ক্রস) যাওয়া চ্যানেলটি সরিয়ে দিতে খননকাজও (ড্রেজিং) চলছে। শিগগিরই চ্যানেলটি সরিয়ে নেওয়া হবে বলে সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। চ্যানেলটি সরিয়ে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ক্রস চ্যানেলসংলগ্ন খুঁটির কাজ শুরু হবে।