আর নয় বিদেশে, অসুস্থ হলে দেশেই চিকিৎসা নেব…প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বা আ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন থেকে আর বিদেশে নয়, দেশের হাসপাতালেই চিকিৎসা নেবেন। গত শুক্রবার সকালে গাজীপুরের কাশিমপুরের তেঁতুইবাড়িতে শেখ ফজিলাতুননেসা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে হাসপাতালে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
নিজের মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত এ হাসপাতালটির চিকিৎসাসেবায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি যদি কখনো অসুস্থ হয়ে পড়ি, তাহলে আপনারা আমাকে বিদেশে নিবেন না। এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে উঠাবেন না। আমি দেশের মাটিতেই চিকিৎসা নিব। এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিব।’
সকাল ৮টায় গণভবন থেকে বের হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হাসপাতালটিতে পৌঁছে প্রধানমন্ত্রী কাউন্টারে গিয়ে নিজ হাতে রেজিস্ট্রেশন করেন ও চেকআপের ফি জমা দেন। এরপর হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা শুরু হয়। স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে হাসপাতালের ডাক্তার, কর্মকর্তা ও উপস্থিত সুধীজনদের সঙ্গে তিনি মতবিনিময় করেন।are ny bedashe
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আরো আগেই আমার বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে এখানে আসার ইচ্ছা ছিল। আমরা চিন্তা করেছি, ভবিষ্যতে এইখানে আমরা একটি মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করব। দেশে জনসংখ্যার তুলনায় ডাক্তারের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।’ তিনি বলেন, ‘এখানে একটি আন্তর্জাতিক মানের নার্সিং ইনস্টিটিউট রয়েছে। জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার চিন্তা থেকেই আমাদের এই উদ্যোগ।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ শ্রমিক। এখানে সাধারণ মানুষের সংখ্যাই বেশি। তাদের চিকিৎসা কষ্ট লাঘব করা এবং চিকিৎসাসেবা দেওয়া আমাদের কর্তব্য। এ ছাড়া এই এলাকায় উন্নতমানের হাসপাতালের সংখ্যা কম। সেই চিন্তা থেকেই এখানে এই হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেই।’
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেহেতু এখানকার বেশির ভাগ রোগী আর্থিকভাবে অসচ্ছল। তাই তাদের আর্থিক দিক থেকে সুবিধা দিতে হবে।’ এ ক্ষেত্রে তিনি ডাক্তারদের কনসালটেন্সি ফি কমানোরও পরামর্শ দেন।
হাসপাতালের ফান্ডে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট থেকে আরো ১০ কোটি টাকার অনুদানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেহেতু হাসপাতালটি আমাদের মায়ের নামে, তাই এখানে আমাদের পরিবারের সবাই অনুদান দিবে। আপনাদের এবং হাসপাতালের যে কোনো সমস্যা আমাদের নিয়মিত জানাবেন।’
ডাক্তারদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে উপস্থিত সবাই দেশের স্বনামধন্য ডাক্তার। এ ছাড়া দেশের অনেক ভালো ডাক্তার ইতিমধ্যে অবসরে গেছেন। আমরা তাঁদেরকে এখানে যুক্ত করতে পারি। যদি কোনো ডাক্তার এখানে এসে চিকিৎসাসেবা দিতে আগ্রহী হন, তাঁরা প্রতিদিন এখানে আসতে পারেন। এভাবেই আমরা এ হাসপাতালকে আরো উন্নত করে তুলতে পারব। আমি বলতে চাই, জনগণের সেবা করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।’
শেখ ফজিলাতুননেসা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার সময় চিন্তা করলাম, আমাদের একার পক্ষে এটি পরিচালনা করা সম্ভব নয়। তাই মালয়েশিয়ার খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান কেপিজেকে যুক্ত করা হয়েছে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী, শেখ রেহানা ও আমি এটি উদ্বোধন করি। এখান থেকে আমরা কোনো লাভ নিতে চাই না। ফিক্সড ডিপোজিটের জন্য আরো যে ১০ কোটি টাকার ফান্ড দেওয়া হবে সেখান থেকে যে টাকা আসবে তা দিয়ে গরিব ও মুক্তিযোদ্ধাদের ফ্রি ট্রিটমেন্ট দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে এখানে ৩০ শতাংশ গরিব রোগী ফ্রি ট্রিটমেন্ট পাচ্ছেন।’
প্রধানমন্ত্রী হাসপাতালের ম্যানেজমেন্ট কমিটিকে নিয়মিত সভা করে চিকিৎসাসেবা আরো উন্নত করার পরামর্শ দেন। তিনি হাসপাতালে ফার্মেসির জন্য নির্ধারিত জায়গায় সুপরিসর ও অত্যাধুনিক ফার্মেসি চালু করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় ট্রাস্টের যে অফিস রয়েছে, সেখান থেকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে এই হাসপাতালে রোগী আনার বিষয়টি সমন্বয় করা যেতে পারে।’ ফুলটাইম ডাক্তারের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
মতবিনিময়কালে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি, ডা. মো. হাবিব এ মিল্লাত এমপি, ডা. এনামুর রহমান এমপি, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ্, নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত, চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. দীন মো. নুরুল হক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সদস্যসচিব শেখ হাফিজুর রহমান, হাসপাতালটির সিইও জয়তুন সোলায়মান ও পরিচালক আরিফ মাহমুদ, হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির সদস্য বায়েজিদ খুরশিদ রিয়াজ।
এর আগে প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ্, নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত, চক্ষু বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. দীন মো. নুরুল হক ও অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী। এ ছাড়া স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ডা. ওয়াজিহা আক্তার জাহান, ডা. বনজবা ও ডা. শাহানা ফেরদৌস অংশ নেন। সূত্র : বাসস।

Leave a Reply

Your email address will not be published.