১০০ দিনের কর্মসূচি শতভাগ অর্জন হয়েছে : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রশান্তি ডেক্স॥ দায়িত্ব নেয়ার পর ঘোষিত ১০০ দিনের কর্মসূচি শতভাগ অর্জন হয়েছে বলে দাবি করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
বৃহস্পতিবার (১৬ মে) দুপুরে সচিবালয়ে বিগত ১০০ দিনের কর্মসূচির অগ্রগতি জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন।shato montre
মন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনের পর এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেয়ার পর আমরা ১০০ দিনের একটি কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলাম। খুব বেশি মন্ত্রণালয় এই ১০০ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা দেয়নি। আমরা সাহস করে দিয়েছিলাম। এক কথায় বলতে গেলে আমরা ১০০ দিনের কর্মসূচি শতভাগ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে হয়তো সামান্য কম থাকতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারকে সামনে রেখে আমরা এগিয়ে গেছি। ১০০ দিনের কর্মসূচির মধ্যে যে বড় কাজটি ছিল সেটা আমরা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছি। তা হলো- স্বাস্থ্যসেবা সপ্তাহ। সেবা সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী নিজে উপস্থিত ছিলেন।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘১০০ দিনের মধ্যে বেশ কয়েকটি ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) আমরা প্ল্যানিং কমিশনে নিয়ে যাব। যে ডিপিপিগুলো খুবই প্রয়োজন সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্যান্সার ও কিডনি হাসপাতালের ডিপিপি। মন্ত্রণালয় সফলভাবে এটা তৈরি করেছে। এখন এটা প্ল্যানিং কমিশনে আছে। এটার ওপর কাজ চলছে। আমরা আশা করি, প্ল্যানিং মিনিস্ট্রি এটা তাড়াতাড়ি একনেকে নিয়ে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি অনুমোদন পেলে আটটি ডিভিশনে আটটি ক্যান্সার হাসপাতাল ও আটটি কিডনি হাসপাতাল নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারব। প্রত্যেক বছর লাখ লাখ লোক কিডনি রোগে আক্রান্ত হয় ও মৃত্যুবরণ করে। এ বিষয়ে আমাদের কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই।’
জাহিদ মালেক বলেন, ‘ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে ৫ হাজার শয্যায় উন্নীত করা হবে। অত্যাধুনিক একটি হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে। সেখানে উন্নত যন্ত্রপাতি থাকবে, সব বিষয়ে চিকিৎসা থাকবে। আমরা প্ল্যানিং কমিশন থেকে কনসালটেন্ট নিয়োগের অনুমতি পেয়েছি, কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে।’
এখন ঢাকা মেডিকেলে ২ হাজার ৬০০ বেড হলেও ৪ হাজার রোগী ভর্তি থাকছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেন, ‘১০০ দিনের কর্মসূচির মধ্যে আরেকটি বিষয় ছিল মনিটরিং। আমরা প্রতিটি হাসপাতাল, ক্লিনিককে মনিটরিংয়ের আওতায় নিয়ে আসছি। আমাদের মন্ত্রণালয়ে মনিটরিং সেল আছে। আমরা আনন্দের সঙ্গে বলতে পারি, ৪০ শতাংশ উপস্থিতি থেকে এখন ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ উপস্থিতিতে পৌঁছেছে। আমরা বিশ্বাস করি, স্বাস্থ্য সেবার মান আগের তুলনায় উন্নত হয়েছে। আশা করি, এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকটি হাসপাতালে সার্ভিস চার্জ নেয়া হয়, সেগুলো বোর্ডে লিখে দেয়া হয়েছে। সেই বোর্ডটি সুন্দর জায়গায় ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে যাতে জনগণ কী কী সেবা পাবে এবং তার মূল্য কত তা জানতে পারবে।’
জাহিদ মালেক বলেন, ‘একটি ওয়েবসাইট আমরা খুলেছি, সেখানে জনগণ অভিযোগ ও পরামর্শ দিতে পারে। সেখানে মানুষ তাদের মতামত দিচ্ছে। আমাদের টিম তাদের সেই অভিযোগ আমলে নিয়ে উত্তর দিচ্ছে ও ব্যবস্থা নিচ্ছে।’
মন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যসেবা সপ্তাহে হাসপাতালগুলোকে অ্যাম্বুলেন্স ও জিপ বিতরণের অঙ্গীকার ছিল। সেবা সপ্তাহের উদ্বোধনী দিনে প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে আমরা গাড়ি বিতরণ শুরু করেছি। পরে আমি নিজে হ্যান্ডওভার করেছি।
তিনি বলেন, ‘ইমার্জেন্সি, মেডিসিন বিভাগ ছাড়া অন্যান্য ডাক্তারদের কর্মঘণ্টা হলো- সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত। এজন্য ২টার পরে গেলে হাসপাতালে ডাক্তার কম দেখা যায়। তার মানে এই নয় যে ডাক্তাররা অনুপস্থিত। এজন্য সেকেন্ড শিফট চালু করা যায় কি-না তা নিয়ে আমরা ভাবছি।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়ন করাটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। এজন্য হাসপাতালগুলোতে মনিটরিং বৃদ্ধি করা হয়েছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে ৫ হাজার বেডে উন্নীত করার কাজ শুরু হয়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী চার বছরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে কাজ সম্পন্ন হবে।
স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইনের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘এ আইন প্রণয়নের কার্যক্রম চলছে। ইতোমধ্যে আইনটি মন্ত্রিসভায় নিয়েছিলাম। তারা কিছু অবজার্ভেশন দিয়েছে। সেগুলো নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।’
এ আইন হলে কী কী সুফল পাওয়া যাবে- জানতে চাইলে জাহিদ মালেক বলেন, ‘এই আইনে রোগী ও ডাক্তার উভয়কেই সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকবে। অন্যায় হলে জবাবদিহিতা থাকবে। এ আইনের মাধ্যমে সেবার মান বাড়বে। অযাচিতভাবে কোনো ডাক্তার বা নার্সের ওপর হামলা হলে এ আইনে ব্যবস্থা নেয়া যাবে।’
সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. মুরাদ হাসান, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদসহ মন্ত্রণালয় এবং অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.