প্রশান্তি ডেক্স॥ ভাতে মাছে বাঙালি, কথাটা বই কেতাব থেকে বিলুপ্ত হয়েছে অনেক আগেই।
কৃষক যখন বঞ্চিত তখন ভাত কথাটাই হয়তো শিগ্রই হারিয়ে যাবে। অন্তত বাঙালির মাঝে ভাত শব্দটি বাঁচিয়ে রাখতে কৃষকের বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন না।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সঠিক তথ্য দিন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে যে তথ্য উপস্থাপিত আছে, সেই তথ্যের সাথে মাঠের কৃষকের ধান উৎপাদন এবং তার বাজারজাতকরণ এর তথ্যের মাঝে মনে হয় গড়মিল প্রবল।
তাই যদি না হবে তাহলে কৃষকের ৩শত থেকে ৫ শত টাকা মনের ধানের চাউল গ্রাহকের হাতে কেন প্রায় দেড় থেকে তিন হাজার টাকা মন?
কৃষকের নিকট হতে বাজার জাতের পরে ডেমারেজ, পরিবহন, সংরক্ষণ, প্রসেস এবং প্রতি মন ধানে প্রাপ্ত চাউলের হিসাবে যে পার্থক্য হয়, টাকার অংকে ৩/৫শত থেকে ১৫০০/৩০০০ টাকা কি করে হয়?
মাঝপথে মিল মালিক, আড়ৎদার, সিন্ডিকেট এই সব মিলিয়ে কত অংশ হাতিয়ে নিলো শুধু ঘরে বসে থেকে সেই হিসাব কি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে দেয়া হয়েছে? যদি দেয়া হয়ে থাকে তাহলে সেই হিসাবের সাথে বাস্তব হিসাবের পার্থক্য কতটা?
বাংলাদেশের মানুষ ১৫০০ টাকা হতে ৩০০০ টাকার চাউল ক্রয় করে জীবন চালিয়ে নিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে এটা সত্য। তার অর্থ প্রত্যেক মানুষ তার আয়ের অর্থ তুলে দিচ্ছে বাজারে নিয়মিত। তবে কৃষক কেন বঞ্চিত। কৃষক কেন তার ধান ক্ষেতে আগুন জ্বালাচ্ছে?
সার, পরিচর্যা, বিদ্যুৎ, মাটি সব কিছুতেই সিন্ডিকেট। এসব কিছু মাথায় নিয়ে কৃষক যে মূল্যে প্রতিমন ধান উৎপাদন করছে, তাহলে শুরুতেই তাকে মনপ্রতি লাভ দিয়ে ধান ক্রয় করা হবে না? যদি না হয় তাহলে তারা তাদের ধানের জমিতে আবার ধানফলাতে কি উৎসাহিত হবে?
নিশ্চই তখন তারাও নিজেদের উৎপাদিত ধান নিজেরাই সংরক্ষণ করবে বা বাধ্য হবে। তখন যে কৃত্রিম সংকট তৈরি হবে তার জন্য কে বা কারা দায়ি হবে?
কৃষকের ধান বাজারে উঠতে যে দালাল চক্র মিল মালিক, আড়ৎদার, সিন্ডিকেটের সাথে আতাত করে তাদের রাজনৈতিক পরিচয় কি? তাদের উপরে কোন রাজনৈতিক প্রভাব ত্রাণকর্তা হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে? এর কোন প্রতিবেদন কি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে আছে?
যে বা যারা বলছেন, বিরোধী দল এই সংকট তৈরি করছেন তাদের বুদ্ধির বলিহারি। সেই সম্ভাবনা থাকতেই পারে, রাস্তায় দাঁড়িয়ে যে কৃষক দল ধান বিছিয়ে আন্দোলন করছে সেখানে বাম নেতাদের উপস্থিতি থাকতেই পারে, সেই সংকট কে বা কারা তৈরি করলো, সেই সুযোগ কে তাদের করে দিলো প্রশ্নগুলোর উত্তর জনৈক ব্যক্তি কি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে দিয়েছেন?
স্পষ্ট ভাবে দেশ গ্রামের যতো দালাল চক্র, যতো সিন্ডিকেট চক্র আছে, যতো আড়ৎদার আছে তাদের সবাই এখন আওয়ামীলীগ পরিচয় দেয়। স্থানীয় প্রশাসন তাদের নিকট হতে উৎকোচ গ্রহণ করে এবং তাদের সেল্টার দেয়। এখানে দল কোনটি সেটি না খুঁজে কৃষকের ধান ক্ষেত হতে বাজারে ওঠার সময় থেকে যারাই আতাত ব্যবসার সাথে জড়িত তাদের ধরে কষে ধোলাই ব্যবস্থা চালু করা অতি জরুরী। এবং সরকার কর্তৃক নির্ধারণ করা দামে সরকারের ব্যবস্থাপনায় কৃষকের ধান ক্রয় জরুরী।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সঠিক তথ্য দিন, তাকে বলুন লিখিত ভাবে, দেশের অধিকাংশ কৃষক ধান চাষের পূর্বেই স্থানীয় মিল মালিক, আড়ৎদারদের নিকট হতে চুক্তিভিত্তিক দাদন গ্রহণ করে। সেই চুক্তির মনিটারিং সরকারী ভাবে করা জরুরী।
দাদন গ্রহণ কালেই কৃষকের ধান বিক্রি হয়ে যায় তাদের নিকট। সুদ গ্রহণ আইনত অপরাধ। অথচ সারাদেশে সুদের চিত্র ভিন্ন ভাবে প্রতিষ্ঠিত সারাদেশে। টাকা গ্রহণের বিপক্ষে ধান প্রদান।
তখনই উক্ত দালাল, সুদখোর দল ধানের মূল্য নির্ধারণ করে কৃষককে টাকা প্রদান করে। ধানের চারা ক্ষেতে জন্ম নেবার আগেই ধান বিক্রি হয়ে যায়।
এরপর থেকে যায় কৃষকের বাজার থেকে সাধারণ গ্রাহকের রাস্তা। যারফলে ৩/৫ শত টাকার মন ধানের চাউল হয়ে যায় ১৫০০ থেকে ৩০০০ হাজার টাকা।
তাহলে কে বাঁচাবে কৃষকে?
প্রশ্নটা রেখে লেখা শেষ করতে হলো।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সঠিক তথ্য না পেলে দোষ আপনাকেই মাথায় নিতে হবে। দোষ না করেও দোষের ভাগ বহন করতে হবে। এটাই ভবিতব্য।