বিদগ্ধ নদীর বুকে শান্ত সাহস

বা আ॥ নদী ও নারী, বহমান এক সৃষ্টির স্রোতধারা। যদিও দুই জ্বালামুখেই বুর্জোয়া শ্রেণীর বাঁধ নির্মাণ বা স্বাধীনতাহরণের প্রচেষ্টা বর্তমান ধারাবাহিক বাস্তবতা। তবে এই নির্যাতিত শ্রেণীর সহায়-স্পর্ধাও একজন আছেন।degonto bokh
তিনি বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা। তাঁর ‘শান্ত সাহস’ বুকে পথচলায় অনুরণিত আজ বিশ্ব-বাংলাদেশ। যার প্রামাণ্য দলিল আজকের বৈশ্বিক সমাজনীতি এবং অর্থনীতিতে ‘বাঙালী নারীর’ গুণগত এবং সম্মানজনক অবস্থান। তাঁর প্রাচুর্য ভরা মননেই আজ বাঙালী নারী ‘রান্নার চুলার’ পাড় ছেড়ে বৈশ্বিক প্রাঙ্গণে-নেতৃত্বের উঠোনে। নদীর ক্ষেত্রেও তাই। নদীর যৌবন-স্বাধীনতায় যারা দীর্ঘদিন খড়গ চালিয়ে ‘কাক চালাক’ সেজেছিলেন অর্থাৎ ভেবেছিলেন কাকের মতো চোখ বন্ধ করে ভাববেন তাদের অবৈধ দখলদারিত্ব কেউ দেখবেন না, সরাবেন না, তাদের এখন ‘অমাবস্যা কাল’।
বাংলার বাতিঘর ‘শেখ হাসিনা’ সেই সব বুর্জোয়া এবং সমমনাপন্থীদের নিজের সততার ফলায় তছনছ করে চলেছেন। আর এই মহাযজ্ঞ বাস্তবায়নে তাঁকে বুক চিতিয়ে সাপোর্ট যুগিয়ে যাচ্ছেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়। শখের গণমাধ্যমে বাগাড়ম্বর উপস্থিতি না ঘটিয়ে নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছেন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে।
যার প্রাসঙ্গিক উদাহরণ সরকার গঠনের মাত্র দেড় মাসে দুই দফার অবৈধ উচ্ছেদ অভিযানে বুড়িগঙ্গার পাড়ের ১০৯৯টি স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়েছেন এবং তৃতীয় দফার অভিযানও শুরু হবে দ্রুতই।
ইতিহাস আশ্রিত তথ্যে, প্রায় ৪০০ বছর আগে এই বুড়িগঙ্গা নদীর কারণেই ঢাকা হয়ে উঠে গুরুত্বপূর্ণ শহর। তাছাড়া বৈশ্বিক সমৃদ্ধ শহরগুলোর দিকে তাকালেও স্পষ্ট যে তাদের মূল শহরগুলো নদী কেন্দ্রিক।
সেই হিসেবে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত রাজধানী ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জের যৌথ অংশীদারিত্ব বুড়িগঙ্গা নদীর অবৈধ উচ্ছেদ অভিযান অবশ্যই ভবিষ্যত বিনির্মাণের নান্দনিক ইঙ্গিত। তাছাড়া এই অভিযানে রাজধানী কেন্দ্রিক বুর্জোয়াদের স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে ইতোমধ্যেই সব মানের নদী খেকোদের বার্তা দিয়েছে।
পাশাপাশি পুরনো গৌরব এবং ঐতিহ্য ফিরে পাবার ব্যাপারে স্বপ্ন দেখাচ্ছে বুড়িগঙ্গাকে। কারণ, ইতিহাস মতে এই বুড়িগঙ্গা কেন্দ্রিক ঢাকার সৌন্দর্য বর্ণনায় ১৮০০ সালে টেইলর মুগ্ধ হয়ে বলেছিলেন, বর্ষাকালে যখন বুড়িগঙ্গা পানিতে ভরা থাকে এবং সন্ধ্যায় এর আশপাশে আলোগুলো জ্বলে তখন একে দেখা যায় ভেনিসের মতো।
প্রাচীনকালে বুড়িগঙ্গার সৌন্দর্য বর্ধনে প্রথম কাজ করেছিলেন সুবাদার মুকাররম খাঁ। আর একালে চেষ্টা করে চলেছেন রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এবং তাঁর পাশে থেকে ক্ষেত্রমূলে নেতৃত্ব দিচ্ছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। যদিও কালের প্রবাহে এই সময়টা ভীষণ পিচ্ছিল।
কারণটা বর্তমান দখলদারদের আচরণ ২০০২ সালের স্টিভেন স্পিলবার্গ প্রযোজিত ও পরিচালিত সিনেমা ‘ক্যাচ মি ইফ ইউ ক্যান’ ছবির ‘ফ্রাঙ্ক আব্যাগনেল’ (লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও) চরিত্রের মতো। যিনি ছিলেন ফ্রড বা প্রতারণা বিদ্যায় পারদর্শী। তবে শেষপর্যন্ত তিনিও কিন্তু ‘কার্ল হানরাটি’ চরিত্রের (টম হ্যাঙ্কস) দাপুটে আচরণে সব ছাড়তে বাধ্য হন।
অর্থাৎ, সবকিছু মিলিয়ে শেখ হাসিনার পথচলাটা চ্যালেঞ্জের। তবে আনন্দের বিষয় হলো তিনি চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করেন। আর এ কারণেই ক্ষমতা গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে ‘সুকান্ত ভট্টাচার্যের ছাড়পত্র কবিতা’র অংশবিশেষ,
‘তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’
শেখ হাসিনার এই অঙ্গীকার দৃশ্যমানে জনতার প্রত্যয় প্রদীপ্ত। কারণ, তাঁর পূর্বকৃত কর্মযজ্ঞ। আর এ কারণেই একাদশতম জাতীয় নির্বাচনে জনতা তাঁকে দিয়েছেন দু’হাত ভরে। কাজেই প্রত্যাশার বাড়তি চাপ নিয়ে ভবিষ্যত বিনির্মাণের দায় এখন ‘শেখ হাসিনা সরকারের-ই’।
লেখক : ছাত্রনেতা

Leave a Reply

Your email address will not be published.