দুধে অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে ধারণা রাখেন না বিএসটিআই’র কেউ

doda ante bayatikপ্রশান্তি ডেক্স॥ পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণকারি সরকারি প্রতিষ্ঠান বিএসটিআই (বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন) পাস্তুরিত দুধের মান নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কী কী পরীক্ষা করে সে সম্পর্কে কিছুই বলতে পারছেন না প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন।
প্রশান্তির সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি বললেন, ‘এই মুহুর্তে আমি এই বিষয়ে কিছুই বলতে পারবো না। আমাদের একজন পরিচালক আছেন তিনি এই বিষয়ে বলতে পারবেন।’
প্রশান্তির পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হলো, আপনিতো এই সংস্থার প্রধান, আপনি বলতে না পারলে, কে পারবে?
উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি সংস্থার প্রধান হলেও আমি এই বিষয়ে জানি না। কেননা নতুন কিছু প্যারামিটার আবিস্কার হতে পারে, দেখা গেছে আমাদের (বিএসটিআই) সেই প্যারামিটার পরীক্ষার করার মতো সক্ষমতা থাকতেও পারে, আবার নাও থাকতে পারে। তাই বিষয়টি সংশ্লিষ্ট পরিচালকই ভালো বলতে পারবেন।’
এদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে, পাস্তুরিত দুধের মান পরীক্ষায় বিএসটিআই অ্যান্টিবায়োটিকের পরীক্ষা করে না। বিগত ২০০২ সালে পাস্তুরিত দুধ পরীক্ষার মানদন্ড নির্ধারণ করে বিএসটিআই। ওই সময়ের নির্ধারণ করা মানদন্ডে পাস্তুরিত দুধের মান পরীক্ষায় নয়টি পরীক্ষা করে বিএসটিআই।
বিএসটিআই’র দায়িত্বশীলরা বলছেন, সংস্থাটি কেবল পাস্তুরিত দুধের আমিষ, চর্বি, ল্যাকটিক এসিড, কলিফর্ম ও ঘনত্বের স্তর পরীক্ষা করে। দুধে এন্টিবায়োটিক ও কীটনাশক আছে কিনা তা পরীক্ষা করা হয় না।
পরে বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালকের পরামর্শ অনুযায়ী, এই প্রতিবেদক প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (সিএম) এসএম ইসহাক আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি প্রশান্তি কে বলেন, ‘এটা একটা সাব-জুডিশিয়াল (হাইকোর্টে বিচার চলছে) বিষয়। এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারবো না।
গত সোমবার (১৫ জুলাই) এ বিষয়ে হাইকোর্টে শুনানি রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ওইদিন হাইকোর্টে থাকলে সবকিছু জানতে পারবেন। তরল দুধ বিষয়ে বিএসটিআই কী করছে সব জানতে পারবেন। এর বাইরে আমি কিছু বলতে পারবো না, আমাদের নিষেধ্বাজ্ঞা আছে।’
পাস্তুরিত দুধের মান পরীক্ষার জন্য বিএসটিআই কী করে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মানসম্মত পরীক্ষায় যা কিছু লাগে আমাদের সকল ফেসিলিটি আছে, আমরা সেভাবেই পরীক্ষা করি।’
পাস্তুরিত দুধের অ্যান্টিবায়োটিক পরীক্ষা করেন কিনা, জানতে চাইলে বিএসটিআইয়ের পরিচালক (সিএম) এসএম ইসহাক আলী বলেন, ‘এন্টিবায়োটিক পরীক্ষা আমার (বিএসটিআই) মানে (বিধিতে) নেই, এটা আমার মানের অংশ না, তাই এই বিষয়ে কোনো কথা বলব না।’
দুধে অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি নিয়ে যা কিছু হচ্ছে তাকে প্রপাগান্ডা বলে উল্লেখ করেন এই পরিচালক। তিনি বলেন, এতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
নিজেদের পরীক্ষার সক্ষমতা না থাকলেও বিষয়টিতে আর্ন্তজাতিক ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন এই বিএসটিআই কর্মকর্তা।
পাস্তুরিত দুধের ক্ষেত্রে কী কী প্যারামিটার পরীক্ষা করেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা আমি না দেখে বলতে পারব না। আর এখন এই বিষয়ে কিছু বলা যাবে না। কেননা হাইকোর্টে শুনানি আছে।’
উল্লেখ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের সদ্য সাবেক পরিচালক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক গত ১৩ জুলাই দুধের মান পরীক্ষার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। এতে দেখা যায় দেশের পাঁচ কোম্পানির প্যাকেটজাত দুধসহ ১০ ধরনের দুধের নমুনায় অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
এ সংক্রান্ত সংবাদবিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, ‘গত সপ্তাহে আমরা এ পরীক্ষাটি আবার সম্পন্ন করেছি। প্রথমবারের মতো এবারও আগের ৫টি কোম্পানির পাস্তুরিত প্যাকেটজাত দুধের একই জায়গা থেকে সংগৃহীত ৭টি নমুনা এবং একই জায়গা থেকে খোলা দুধের সংগৃহীত ৩টি নমুনা সংগ্রহ করি। এরপর অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পরীক্ষার জন্য একই নিয়মে একই উন্নত ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার পর দেখা যায়, ফলাফল আগের মতোই উদ্বেগজনক। এবারও সবগুলো নমুনাতেই অ্যান্টিবায়োটিক শনাক্ত করা গেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষক অধ্যাপকের সম্পর্কে বিএসটিআই পরিচালক বলেন, ‘এটা সুস্থ্য মস্তিস্ক লোকের কোনো কাজ না।’
এই বিষয়ে বিএসটিআইয়ের উপ-পরিচালক (সিএম) মো. রিয়াজুল হকের সঙ্গেও কথা হয় সারাবাংলার। তিনিও ‘এটা হাইকোর্টে বিচারাধীন, কিছু বলা যাবে না,’ বলে এড়িয়ে যান।
পাস্তুরিত দুধের ক্ষেত্রে কী কী প্যারামিটার পরীক্ষা করেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকটা প্রডাক্টের (পণ্যের) একটা বিডিএস (বাংলাদেশে মান নিয়ন্ত্রণের বিধি) আছে। বিএসটিআই কাজ করে বিডিএস দিয়ে। বিএসটিআই বিধি বর্হিভূত কোনো কাজ করে না। আর বিএসটিআই কোনো গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান না, এটা মান নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান। তরল দুধের মান পরীক্ষার ক্ষেত্রে বিএসটিআইয়ের বিডিএসে যেহেতু এন্টিবায়োটিক পরীক্ষার কোনো সুযোগ নাই, তাই আমরা এই পরীক্ষা করি না, এই পর্যন্ত করি নাই।’

Leave a Reply

Your email address will not be published.